ঢাকা, ১২ মে ২০২৪, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

‘গ্রন্থাগারে বই পড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি’

এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া

(৩ মাস আগে) ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৪:১৭ অপরাহ্ন

বছর ঘুরে এসেছে ৫ ফে ফেব্র“য়ারি ২০২৪ - ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘গ্রন্থাগারে বই পড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি’। দিবসটি গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার সুহৃদদের জন্য উৎসবের দিন। 
যেভাবে শুরু : ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা একটি পরিপত্র জারি করে, যার মর্মার্থ, সরকার ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ ঘোষণা করেছে এবং এই তারিখকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে উৎযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত পরিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।

প্রতিপাদ্য সমাচার : ২০১৮ সালে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘বই পড়ি, স্বদেশ গড়ি’, ২০১৯ সালে ‘গ্রন্থাগারে বই পড়ি, আলোকিত মানুষ গড়ি’, ২০২০ সালে ‘পড়ব বই গড়ব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’, ২০২১ সালে ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, ঘরে ঘরে গ্রন্থাগার’, ২০২২ সালে ‘সুবর্ণজয়ন্তীর অঙ্গীকার, ডিজিটাল গ্রন্থাগার’, ২০২৩ সালে ‘স্মার্ট গ্রন্থাগার, স্মার্ট বাংলাদেশ’। 

পাঠক তৈরির উৎস : পাঠক তৈরির মূল উৎস হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা- প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ২, নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২ হাজার ৪৫৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬ হাজার ৪০৮, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১ হাজার ৪০৫ এবং কলেজ ৩ হাজার ৩১৯। 

প্রাথমিক বিদ্যালয় : প্রাথমিক ও নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাডেমিক গ্রন্থাগার নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক, গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি করা দরকার, সিলেবাস ও রুটিনে ‘তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’ অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এই নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় নয়। তবে পাঠকের অবগতির জন্য বলছি, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৮ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৮টি।  

মাধ্যমিক স্কুল : এই স্তরে গ্রন্থাগারে কমপক্ষে ২ হাজার বই থাকতে হবে রুটিনে ‘তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, তা পরিপালন করা হয় না। সরকার ২০১০ সালে মাধ্যমিক স্কুল/দাখিল মাদরাসায় সহকারি গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি করেছে। পদটি এমপিওভুক্ত। গ্রন্থাগারিকদের দাবির মুখে একপর্যায়ে পদ পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘সহকারি শিক্ষক-তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’। কিন্তু অনেক বিদ্যালয়ে পদটি খালি পড়ে আছে। আবার কোন কোন স্কুল/মাদরাসায় গ্রন্থাগারিক থাকলেও তাদেরকে প্রক্সি ক্লাস বা অন্যান্য কাজে নিয়োজিত রাখা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগার পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছেনা পাঠক বা বইপ্রেমি। মাধ্যমিক স্তরেও তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা কোর্স সিলেবাসভুক্ত করা দরকার। 

লেজ : কলেজ/সমমানের মাদরাসায় একাডেমিক লাইব্রেরি বাধ্যতামূলক। সেখানে গ্রন্থাগারিকের পদ হল ‘প্রভাষক-তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’। কলেজ স্তরে বিষয়টি সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত করা দরকার। অনেক কলেজে গ্রন্থাগার আছে নামমাত্র। আবার যেসব কলেজে গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগারিক আছে, সেখানে বই ইস্যু করা হয় না, গ্রন্থাগারিক অলস সময় পার করেন কিংবা তাকে অন্য কাজে লাগানো হয়। ফলে গ্রন্থাগারের সঙ্গে শিক্ষার্থী/পাঠকের সংযোগ গড়ে ওঠে না। বইপড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের অনুরাগ জন্মায় না। 
গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের কর্মসূচি : জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে - বইপাঠ প্রতিযোগিতা (১ ফেব্রুয়ারি), চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা (২ ফেব্রুয়ারি), রচনা 
প্রতিযোগিতা (৩ ফেব্রুয়ারি), উপস্থিত বক্তৃতা (৪ ফেব্রুয়ারি), উদ্বোধন, আলোচনা সভা
সাংস্কৃতিক  অনুষ্ঠান (৫ ফেব্রুয়ারি)।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র : বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এর মধ্যে রয়েছে, (ক)  জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপন বিষয়ে ব্যানার স্থাপন (খ) বই কেন্দ্রিক আলোচনা ও উৎসব (গ) সবার মাঝে বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে র‌্যালি/শোভাযাত্রা (ঘ) শিশু-কিশোর পাঠকদের বই উপহার (ঙ) পাঠচক্র (চ) পাঠ প্রতিযোগিতা ও (ছ) বিদ্যালয়ভিত্তিক বই পড়া কর্মসূচি আয়োজন।     
বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি ও বেরাইদ গণপাঠাগার : দেশে একটি গ্রন্থাগার আন্দোলন গড়ে তুলতে সমমনা গ্রন্থাগারগুলোকে সঙ্গে নিয়ে নিরলস কাজ করছে এই সংগঠন। গ্রন্থসুহৃদের নিজস্ব কিছু স্লোগান রয়েছে, যেমন - ‘দিনবদলের হাতিয়ার, হয়ে উঠুক গ্রন্থগার’, ‘বই পড়ি, দেশ গড়ি’, ‘বই পাঠ মনের কালিমা দূর করে’ প্রভৃতি। 

গ্রন্থাগার স্থাপনে আগ্রহীদের পরামর্শ প্রদান ও সাধারণ মানুষকে বইপাঠে উদ্বুদ্ধকরা গ্রন্থসুহৃদের প্রধান কাজ। বেরাইদ গণপাঠাগার মূলত গ্রন্থসুহৃদ সমিতির সহযোগী প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে বর্তমান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪২ নং ওয়ার্ডকে (সাবেক বেরাইদ ইউনিয়ন) ‘গ্রন্থপল্লী’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এটি একটি পাইলট প্রকল্প। ২০২৪ সালকে ‘গ্রন্থপল্লী বর্ষ’ ঘোষণা করেছে বেরাইদ গণপাঠাগার। এর মধ্যে রয়েছে (ক) স্কুল, মাদরাসা ও কলেজ (খ) মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডা (গ) সভা-সমিতি-সংগঠন (ক্লাব), বাজার, বিপনি বিতান/শপিং মল (ঘ) সেলুন (ঙ) রিকশা-টেম্পো-বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশনে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠায় প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিচালনা।  
 

সভাপতি 
বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি

 

পাঠকের মতামত

ব‌ই পড়তে চাই কিন্তু কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না

Fahad
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ৩:৫৪ অপরাহ্ন

পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে ‘বই পড়া’। এই কঠিন কাজটি সহজ হয় তখনই যখন Meritocracy-র মূল্যায়ণ থাকে। তখন মানুষ এমনিতেই বই পড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কম খেয়ে পরে বই কেনার টাকা জোগাড় করে। আর জ্ঞান পিপাসার দিকে আলোকবর্তিকার কাজ করেন শিক্ষক মণ্ডলী। এটা জ্ঞানার্জনের চিরন্তন পদ্ধতির কথা বললাম। আজ পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন কেউ শিক্ষক হবার জন্য, প্রমোশনের জন্য, ভাল প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য যোগ্যতা, জ্ঞানার্জনকে আর অত্যাবশ্যক শর্ত মনে করে না। আজকে উপরে উঠার সিড়িই হচ্ছে, চাটুকারিতা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি। ছাত্র নেতারাও দাবি করে তারা ভিসি বানায়। ছাত্রনেতা হবার জন্য কি বই পড়া লাগে?

Akbar Ali
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ৮:১৬ পূর্বাহ্ন

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2022
All rights reserved www.mzamin.com