ঢাকা, ১১ মে ২০২৪, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

'প্রবীণবান্ধব বাংলাদেশ : গড়তে হবে এখনই'

রাকিব হাসান সেলিম 

(৩ মাস আগে) ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৪:২৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:৫৬ অপরাহ্ন

কর্মস্থলে ত্রিশ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন; ষাট বছরে পা দিয়েই বুঝতে পেরেছেন শরীরটা আর কথা শুনতে চায়না; কেমন যেন বেয়ারা হয়ে গেছে! কর্তৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু থেকে নিজেকে সরিয়ে আনার যন্ত্রণায় আপনি অসহায় বোধ করছেন! পরিচিত মানুষগুলো কেন যেন অপরিচিত হয়ে উঠেছে! আপনার কাছ থেকে মানুষের  নেওয়া পরামর্শের প্রয়োজনীতা ফুরিয়ে যাচ্ছে; অবজ্ঞা, অবহেলা ক্রমেই আপনি টের পাচ্ছেন! কাছের মানুষদের নতুন চেহারা দেখে ভড়কে যেতে হচ্ছে! নিয়মিত ওষুধ খেতে হচ্ছে, কারণ শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে নানান রোগ! সমাজের লোকজন বলতে শুরু করেছে, " আর কত? এবার পরকালের কথা ভাবেন। কোন দিন ডাক এসে পড়বে তার ঠিক নেই।"
হ্যাঁ, বলছিলাম প্রবীণদের বর্তমান ও তরুনদের ভবিষ্যত দিনগুলোর কথা। কথাগুলো আমাদের ভাবায় এবং ভাবতে বাধ্য করে, তাই বলছি প্রবীণবান্ধব বাংলাদেশের কথা।

আজকে যারা নবীন, তারাই আগামী দিনের প্রবীণ। অন্যদিকে আজকে যারা প্রবীণ তারাই একদিন ছিলেন নবীন। দিন যত যাবে বাংলাদেশে এই তরুণ জনগোষ্টী বিপুল সংখ্যায় প্রবীণের কাতারে নাম লেখাবে। বলা হচ্ছে ২০২৯ সাল থেকে বাংলাদেশের একটি বিশাল সংখ্যক মানুষ প্রবীণের খাতায় নাম লেখাবে। এই যে বিপুল পরিমান মানুষ শারিরীক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে বাস করবে তাদের পাশে দাঁড়াবার জন্য পর্যাপ্ত সচেতনতা তৈরির কাজ এখন থেকেই শুরু করতে হবে। শপথ নিতে হবে প্রবীণবান্ধব বাংলাদেশ গড়ার।  

কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশের বয়স যদি ৬৫ বা তার বেশি হয়, তাহলে সেই দেশকে ‘প্রবীণের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই হিসেবে ২০৪৭ সালে বাংলাদেশ ‘প্রবীণের সমাজ’ বা ‘প্রবীণ দেশ’-এ রূপান্তরিত হবে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে মাত্র সাত বছর পর থেকেই!

অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০২৯ সালে প্রবীণমুখিতার পর্যায়ে পৌঁছাবে। ‘বৃদ্ধ বা প্রবীণ’ পর্যায়ে রূপান্তরিত হতে বাংলাদেশের মাত্র ১৮ বছর লাগবে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ যে গতিতে ‘বয়স্ক’ থেকে ‘বার্ধক্য’ পর্যায়ে পৌঁছবে তা উন্নত এশীয় ও সমৃদ্ধ ইউরোপীয় দেশগুলোর গতির চেয়ে বেশি হবে। এই রূপান্তরে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত রূপান্তরশীল সমাজ হবে। উন্নতির অনেক নিচের ধাপে থেকে জনসংখ্যা-রূপান্তরের এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এখন প্রবীণ হওয়া মানেই কি জীবন থেকে সকল আনন্দ, রঙ মুছে যাওয়া? অবশ্যই না। বরং প্রবীণবান্ধব সমাজ গড়তে দরকার একটু সচেতনতা।  আর সেই সচেতনতা তৈরিতেই সকলের মিলিত উদ্যোগ জরুরি। কারন, আমাদের দেশ এখনও প্রবীণবান্ধব নয়। এখানে তিনটি শ্রেনী সবসময় অবহেলিত। একটি শিশু অন্য দুটি প্রবীণ আর নারী। তবে আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে নারীদের জন্য নানা উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেলেও শিশু এবং প্রবীণদের ক্ষেত্রে একেবারেই তা অনুপস্থিত!  ঢাকাসহ সারা দেশের শহর গুলোতে প্রবীণদের জন্য আলাদা পার্ক নেই। শহরের ফুটপাত পর্যন্ত প্রবীণদের চলাচলে অনুপযোগী। আজো আমাদের দেশে প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রাধান্য দিয়ে কোন বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয় না। প্রবীণ বান্ধব রেস্টুরেন্ট নেই, বাসে, ট্রেনে, প্লেনে কোথাও তাদের জন্য বিশেষ লাইন নেই, হুইল চেয়ার নিয়ে সব জায়গায় যাওয়ার র‍্যাম্প নেই। এমন হাজারো সমস্যার সম্মুখীন হোন আমাদেরই আপনজনেরা যারা প্রবীণ!

অন্যদিকে বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪। গড় আয়ু বৃদ্ধির পেছনের কারন চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি। আবার যৌথ পরিবারের বিলুপ্তিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে চলেছে দেশের প্রবীণজনগোষ্ঠী।

সময়ের এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করে বেশকিছু সংখ্যক সংগঠন এগিয়ে এসেছে ‘প্রবীণবান্ধব বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে। সকলেই আগত এই সংকটের প্রতিকার খুঁজছে।

আমরা চাই এই বাস্তবতা সমাজ ও রাষ্ট্র অনুধাবন করুক, সমস্যা নিরসনে এগিয়ে আসুক। প্রবীণরা যেন পরিবারের বোঝা না হয়। প্রবীণের জন্য নিশ্চিত হোক নিরাপদ ও স্বস্থিদায়ক জীবন। এতে করে উপকৃত হবে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ। সর্বোপরি উপকৃত হবে রাষ্ট্র।


যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক 
প্রবীণবান্ধব বাংলাদেশ চাই ফাউন্ডেশন (প্রবা)

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2022
All rights reserved www.mzamin.com