প্রথম পাতা
যেভাবে বিক্রি হতো জাল সনদ
পিয়াস সরকার
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবারকারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ নিয়ে তোলপাড় চলছে। সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য। মূলত এই সনদগুলোর ক্রেতা ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এ অনৈতিক কাজে যুক্ত প্রায় ৪০ জনের নাম এসেছে। বিক্রি করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার সনদ। দেশের বিভিন্নস্থানে এমপিওভুক্ত ও নন এমপিওভুক্ত কারিগরি কলেজ ও ইনস্টিটিউট থেকেই মূলত সংগ্রহ করা হতো এসব সনদ। এমপিও টিকিয়ে রাখার জন্য ও এমপিওভুক্ত হবার জন্য আইন অনুযায়ী শিক্ষার্থী পাসের একটা সংখ্যা নির্ধারিত থাকে। এই সংখ্যা ধরে রাখার জন্য মূলত জাল সনদ ক্রয় করা হতো।
তিন ধাপে বিক্রি হতো জাল সনদ। প্রথমত যাদের সনদে তথ্যগত ভুল থাকতো তা সংশোধন করা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বরাতে জানা যায়, গ্রেপ্তার একেএম শামসুজ্জামান একজন সহকারী রেখে এসব কাজ করাতেন। তার সহকারী ফয়সালকে বলে দিতেন কোনদিন কতোটি সার্টিফিকেট লাগবে। ইতিমধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান, তার ব্যক্তিগত সহকারী ফয়সাল ছাড়াও কুষ্টিয়া গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলি, কামরাঙ্গীরচর হিলফুল ফুজুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমানসহ দুই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি লালবাগ বিভাগ। এরমধ্যে রয়েছেন কারিগরি বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ার্যমান খান আকবর আলীর স্ত্রী সেহেলা পারভীন।
ডিবির জ্ঞিাসাবাদে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিবিএ নেতা আব্দুল বাছেরের নাম উঠে আসে। আরও রয়েছেন রেজিস্ট্রেশন শাখার এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামার মামুনুর রশীদ ও বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া আব্বাস। তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে সার্টিফিকেট ও রেজাল্ট পরিবর্তনের চাহিদাপত্র নিতেন।
শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ডিবিকে জানান, তার এই কাজের গুরু ছিলেন কারিগরি বোর্ডের সাবেক সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুল হক। তিনি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হতে পারতো না তাদের জাল সনদ তৈরি করে পাস দেখাতেন। এ ছাড়াও তাদের নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার কাজটিও তিনি করতেন।
আগে কারিগরির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন, বর্তমানে একটি সরকারি কারিগরি ইনস্টিটিউটে যোগ দেয়া এক শিক্ষক বলেন, এই চক্রটির বিষয়ে আমরা খুব একটা জানতাম না। তবে কিছু একটা যে হতো তা আঁচ করতে পারতাম। পূর্বের প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারিগরির শিক্ষার্থী একেতো কম তার উপর যারা ভর্তি হন তারা সকলে সরকারি প্রতিষ্ঠানমুখী। তাই ফল একটা বড় বিষয়। এই প্রতিষ্ঠানে ফলের গ্যারান্টি মৌখিকভাবে দেয়া হতো। আমরা জানতাম যারা খাতা দেখেন তাদের সঙ্গে হয়তো যোগাযোগ। তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে আসলে এই বিষয়গুলো খুব একটা প্রয়োজন হয় না বা শুনিনি। কারণ এখানে বৈধভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে অনেক অর্থ আয় করা সম্ভব।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ জাল অর্থাৎ শিক্ষার্থী না থাকার পরও সনদ পেতেন শিক্ষার্থীরা এই বিষয়টি জানা ছিল না। তবে প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীকে পাস করানো হতো। আমরা জানতাম বোর্ডের মাধ্যমেই পাস করানো হতো। যেসব শিক্ষার্থী ফাইনাল পরীক্ষার আগে ফল খারাপ করতেন তাদের নিয়ে একটি বিশেষ সেশনের আয়োজন করা হতো। সেখানে অর্থের বিনিময়ে স্পেশাল ক্লাসের কথা বলা হতো।
এ বিষয়ে ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বোর্ডের কয়েকজন ছাড়াও অনেকেই জড়িত। আমরা তাদেরও গ্রেপ্তার করবো। জাল সনদের ক্রেতার নামও পাওয়া গেছে।
ঢাকঢোল পিটিয়ে শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষায় উদ্বদ্ধ করলে ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। পলিটেকনিক গুলোতে শিক্ষকের অভাব , ল্যাব ক্লাস নামে মাত্র , ক্লাস না করিয়েই পরীক্ষা গ্রহণ নৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। তবু দেশের মানুষ অনেক ভরসা করে কারিগরি শিক্ষা লাভের জন্য তার সন্তানকে ভর্তি করাতো। কিন্তু সদ্য প্রকাশিত কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সীমাহীন দূর্ণীতির বিষয়টি দেশের মানুষের এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখার বিষয়টি নিয়ে ভাবনার খোরাক যোগায়। যেখানে একজন ছাত্র যখন দিনরাত পরিশ্রম করেও ভালো রেজাল্ট প্রত্যাশা করতে পারেনা । তখন কারিগরি বোর্ডের কর্মকর্তাদের (চেয়ারম্যানের পরিবার সহ) টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের বিষয়টি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের চরম নৈরাশ্যবাদী করে তুলবে। এখানে ভাবনার বিষয় যে দূর্ণীতির বিষয়টি ডিবি পুলিশ কর্তৃক উদঘাটিত হলেও দেশের মিডিয়ায় এর প্রচরণা খুবই কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এইচ.এস.সি (বি.এম) শাখায় শিক্ষার মান খুবই খারাপ, এখান থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশনা করে দেশের বেকার দিন দিন ব্যপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছাে তাই সরকারের নিকট আবেদন যে সরকার যেন কারিগরি শিক্ষার প্রতি সুনজর দেন
গ্রাম এলালকার প্রতিটি মাদ্রাসায় অভিযান চালান, প্রায় ৮০% মাদ্রাসায় জাল সনদধারী শিক্ষক পাবেন, হয় শিক্ষা সনদ জাল নয়তো শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল ।
আমাদের যে কারিকুলাম তাতে পড়াশোনা করে পাশ করলেও শিক্ষার্থীরা তেমন কিছু শিখতে পারে না। আর যারা সনদ কিনেছেন তারা তো মাশাআল্লাহ ----! জাতির ভবিষ্যৎ ফকফকা !
সব মিলিয়ে দেশ এখন রসাতলে।
কই যাইতেছি! দেশটাও কই যাইতাছে!! দেশের শিক্ষার মান আর কত নীচে নামিয়ে আনবেন শিক্ষাবিদগন??