বাংলারজমিন
থানায় জিডি
থাপড়িয়ে শিক্ষকদের দাঁত ফেলে দেয়ার হুমকি কুবি কর্মকর্তার
সাঈদ হাসান, কুবি থেকে
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবারকুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত শিক্ষক সমিতির সদস্যদের থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন কুবি অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন। গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র কক্ষে নবগঠিত শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ হুমকি দেন। ঘটনার দিন রাতে ভিসিপন্থি দু’জন কর্মকর্তা ও সাতজন সাবেক শিক্ষার্থীর নামে সাধারণ ডায়েরি করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান। অভিযুক্তরা হলো- ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. দেলোয়ার হোসেন। বিভিন্ন পদে চাকরির আবেদন করা ও ছাত্রলীগের পদপ্রার্থীরা মো. ইমরান হোসাইন, অনুপম দাস বাধন, রকিবুল হাসান রকি, আমিনুর রহমান, ইমাম হোসাইন মাসুম, রাকিব, জাহিদুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ২০-৩০ জনের নামে এ অভিযোগ দায়ের করেন। ফাঁস হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, নবগঠিত শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভেতরে কথা বলার একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে আবেদন করা সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে ভিসি’র কক্ষে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন জাকির।
তখন তাদের প্রবেশে বাধা দেন সহকারী প্রক্টর হাসেনা বেগম। তখন তার সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেন। এ সময় চাকরিপ্রার্থী সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা শিক্ষকদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেন। পরে ভিসির দপ্তরের দরজা ভেঙে শিক্ষকদের দিকে তারা তেড়ে যান। এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডির ধাক্কাধাক্কি হয়। তাদের এমন প্রবেশ নিয়ে ভেতর থেকে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। এ সময় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তারা গালিগালাজ করেন। তখন তারা বলেন, ‘চিল্লাইতেছেন কেন আপনারা, চিল্লাইতেছেন কেন? আপনারা গুণ্ডামি করেন। আমাদের আইন শিখান, কোথায় লেখা আছে এখানে আসা যাবে না। চিল্লাইতেছে কেন, আমরা মানুষ না। থাপড়াইয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু।’ এমন আচরণে ক্ষোভ জানিয়ে শিক্ষক সমিতির অর্থ সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘উপাচার্য লালন করছে এক্স স্টুডেন্ট। ভিসি কক্ষ তার দুর্গ। ক্যাডার বাহিনী: প্রক্টরিয়াল বডি, কতিপয় কর্মচারী-কর্মকর্তা, অছাত্র ছাত্র! সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষক হামলা। শিক্ষকরা কি কথা বলতে পারবে না?’ বিষয়টি অস্বীকার করে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘এমন কোনো কিছু আমি বলিনি। ওই মুহূর্তে সবাই হইচই করছিল, কে কাকে কি বলেছে আমি জানি না।’
কর্মকর্তাদের অফিস সময় শেষ হয়ে গেলেও, সেখানে তার উপস্থিতির বিষয়ে বলেন, ‘ভিসি স্যারের সঙ্গে অফিসার্স এসোসিয়েশনের মিটিং ছিল আজকে। সেজন্য আমরা ভিসি স্যারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলাম।’ তবে ভিসি দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার হোসাইন মোর্শেদ ফরহাদ জানান, আজকে ভিসি’র সঙ্গে অফিসার্স এসোসিয়েশনের কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল না। আজকে সবই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হয়েছে। অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের ‘হু আর ইউ’ বলেছে, অপমান করেছে, হামলা করার চেষ্টা করেছে। এর বিচার যতদিন না হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কর্মকর্তা চলতে পারে না। প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ভিসি দপ্তরে হট্টগোল হয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি সেটা সমাধানের চেষ্টা করেছি। আমরা যদি কারও বিরুদ্ধে অছাত্রের অভিযোগ পাই আমরা ব্যবস্থা নিবো। আর এখানে যারা আছে তারা অনেকে সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র।
তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আসতে পারে। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর আমরা ভিসি’র সঙ্গে দেখা করতে যাই। ভিসি আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন না জানিয়ে বলেন, ‘কিসের শিক্ষক সমিতি!’ তখন আমরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। তখন তিনি আমাকে বলেন, আপনি একজন মিথ্যাবাদী। ওই মুহূর্তে রুমের ভেতর থেকে কেউ একজন কল দিলে কর্মকর্তা জাকির হোসেনসহ কিছু অছাত্র ও বহিরাগতরা এসে ভিসি’র রুমে জোরপূর্বক প্রবেশ করে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন এবং অশালীন মন্তব্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং আজকের এই ঘটনার পেছনে প্রক্টর দায়ী। তাই আমরা প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে ও আজকের এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ভিসি’র রুমে অবস্থান করছি।