প্রথম পাতা
সম্পর্ক এতটাই বিস্তৃত ও গভীর সেখানে নিষেধাজ্ঞা সামান্য বিষয়
মিজানুর রহমান
৩০ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবারজিন্স, স্লাইডার, হটডগ, খেলাধুলা আর গান-বাজনার মধ্য দিয়ে ঢাকায় উদযাপিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ২৪৬তম বার্ষিকী। রাজধানীর বারিধারাস্থ আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ওই আয়োজন যেন আমেরিকান ফেলোদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। বর্ণাঢ্য ওই আয়োজনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান সম্পর্কের গভীরতা ও বিস্তৃতির নানা দিক নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেন বাংলাদেশ সরকারের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। কয়েক মিনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনীর ওই পর্বটি ছিল পুরোপুরি ফরমাল। যেখানে উভয় দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। মার্কিন পতাকা নিয়ে মার্চ পাস্ট করেন দেশটির প্রতিনিধিরা।
তবে মধ্যাহ্নের বাকি আয়োজন ছিল অনেকটাই ইনফরমাল, প্রাণ খোলা। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ ছিল জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, উপদেষ্টা, সরকার ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দের। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখা তরুণ প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা আয়োজনকে মাতিয়ে রাখেন তারা। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে সরকার ও বিরোধী নেতাদের খোশগল্প, হাসি-ঠাট্টা, আড্ডা যেন আয়োজনে ভিন্নমাত্রা নিয়ে এসেছিল।
রাষ্ট্রদূত যা বললেন: অনুষ্ঠানের সাইড লাইনে কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সঙ্গে কথা বলেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি মার্কিন স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য বর্ণনা করা ছাড়াও ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি মনে করি আমাদের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে চ্যালেঞ্জের চেয়ে সম্ভাবনাই বেশি। আর তাই আগামী ৫০ বছরের সম্পর্কের রূপরেখা তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। সংবাদ ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত র্যাব’র ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কথা বলেন। তার মতে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বহুমাত্রিক সম্পর্কে ওই নিষেধাজ্ঞা নিতান্তই ক্ষুদ্র একটা বিষয়। বরাবরের মতো রাষ্ট্রদূত বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে অনেকেই অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন বা ব্যাখ্যা করছেন। আদতে এটি একটি রুটিন বিষয়, যেখানে জবাবদিহিতাই মুখ্য বিবেচ্য। গত ৫০ বছরে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে দাবি করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি বিশ্বাস করি সামনের দিনে আমাদের সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনাগুলো হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এখন আমাদের কাজ হবে সেই সম্ভাবনাগুলোর সদ্ব্যবহার করা। রাষ্ট্রদূত বলেন, গত চার মাসে আমরা অন্তত চারটি সংলাপ করেছি।
এগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল, আগামী ৫০ বছরে সম্পর্ক কেমন হবে, সেটির রূপরেখা তৈরি। কীভাবে ব্যবসা বাড়ানো যায়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ে, সেগুলো অগ্রাধিকার। সম্পর্কের গভীরতার উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে দেয়া ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকার কথা স্মরণ করেন। বলেন, এদেশের ৭০ ভাগ মানুষ এখন টিকার আওতায়। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে।
এদিকে স্বাধীনতা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতা দিবস হলো- লাল, সাদা ও নীল রংয়ের একটি দিন; একটি গৌরবের দিন; একটি দেশপ্রেমের দিন; একটি দিন যখন আমরা স্মরণ করি যে একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের জন্ম হয়েছিল; একটি দিন, যখন আমরা সম্মান জানাই আমাদের গণতন্ত্রকে নিরাপদ রাখতে আমাদের পূর্বপুরুষদের করা আত্মত্যাগের প্রতি। এ বছর, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের সময়টিতে, আমরা রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া আরেকটি দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমরা শ্রদ্ধা জানাই এমন একটি দেশকে যেটি অনেক প্রতিকূলতা জয় করে এসেছে।
এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য কী বয়ে আনবে এবং বাংলাদেশ ভবিষ্যতের জন্য কী নিয়ে আসবে সেই প্রত্যাশায় আমরা অধীরভাবে অপেক্ষা করছি। আমাদের দুই দেশের কোনোটিই একেবারে নিখুঁত নয়। আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতারা “আরও নিখুঁত একটি ঐক্য গড়ে তোলার”- ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। আমরা আমেরিকানরা এই চ্যালেঞ্জটিকেও গুরুত্বের সঙ্গে নিই, যখন আমাদের গণতন্ত্রের দুর্বলতাগুলোকে মোকাবিলা করি। আমেরিকায় স্বাধীনতা দিবস একটি উৎসবমুখর দিন। বন্ধুবান্ধব ও পরিবার নিয়ে একসঙ্গে সময় কাটানোর দিন। বারবিকিউ, প্যারেড ও আতশবাজির দিন। এ কারণে এ বছর, আমরা স্বাধীনতা দিবসের দিনটি অনেকটা সেভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেভাবে নিজদেশে পালন করতাম- জিন্স, স্লাইডার ও হটডগ, ডিপ-ফ্রায়েড ওরিওস, খেলাধুলা, আর গানবাজনার মধ্য দিয়ে। এবং অবশ্যই আপনাদের সবার সাথে...।