বিশ্বজমিন
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড তদন্তে মারাত্মক অনিয়মে উদ্বেগ জানিয়েছে সিপিজে
মানবজমিন ডেস্ক
(১১ মাস আগে) ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:৪৪ অপরাহ্ন
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১২ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও তা নিয়ে সরকারি তদন্তে মারাত্মক অনিয়মে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। কর্তৃপক্ষ কমপক্ষে ১০০ বার চেষ্টা করেও তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে না পারায়ও উদ্বেগ জানিয়েছে সিপিজে। একই সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও পক্ষপাতিত্বহীন তদন্ত সম্পন্ন করে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। দাবি জানিয়েছে এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে। সিপিজে তার এক্স একাউন্টে এবং নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রোববার এই সাংবাদিক দম্পতিকে হত্যার ১২তম বর্ষ ছিল। তবে কি উদ্দেশে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত নয়। তাদেরকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে হত্যা করা হয়েছে কিনা তা সিপিজেও তদন্ত করছে।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের আসল নাম গোলাম মুস্তফা সরওয়ার। তবে তিনি সাগর সরওয়ার নামেই বেশি পরিচিত। তার স্ত্রী মেহেরুন রুনি। রাজধানী ঢাকায় ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি তাদের এপার্টমেন্টে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের মে মাসে সিপিজের ফোনে মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ তথ্য জানায়। সাগর সরওয়ারের বয়স ছিল ৩৭ বছর। তিনি ঢাকাভিত্তিক মাছরাঙা টেলিভিশনের একজন নিউজ এডিটর ছিলেন। কয়েকদিন আগেই তিনি জার্মানি থেকে দেশে ফিরেছিলেন। জার্মানিতে তিনি সেখানকার সরকারি সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলেতে কাজ করছিলেন। অন্যদিকে রুনি ঢাকাভিত্তিক আরেক বেসরকারি টিভি এটিএন বাংলায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
পুলিশ বলেছে, সাগরকে বেঁধে ফেলা হয়েছিল। তারপর তাকে ও রুনিকে বহুবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। রোমান বলেন, পরদিন সকালে তাদের ৫ বছর বয়সী ছেলে পিতা-মাতার মৃতদেহ দেখতে পায়। এতে সে গভীরভাবে মানসিক আঘাত পায়।
এ ঘটনায় ঢাকার পুলিশের কাছে ডাবল মার্ডার মামলা করেন রোমান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এক বিবৃতিতে বলেন, তারা গভীরভাবে বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের দুর্নীতি নিয়ে তারা তদন্ত প্রতিবেদন করছিলেন এবং তা প্রকাশ হওয়ার পথে ছিল। এ জন্য এই দম্পতিকে টার্গেট করা হতে পারে। সাগর সরওয়ারকে রিপোর্টের অনুসন্ধানে সহযোগিতা করে থাকতে পারেন রুনি। কারণ, তিনিও জ্বালানি খাত নিয়ে কাজ করেছেন। এসব কথা বলেছেন রোমান। তবে তিনি আরও বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের আগে সাগর ও রুনিকে কোনো হুমকি দেয়া হয়েছিল কিনা তা তিনি জানেন না। হত্যাকাণ্ডের পর তাদের এপার্টমেন্ট থেকে ‘মিসিং’ ছিল সাগর সরওয়ারের দুটি ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন। তিনি সাংবাদিকতা কাজে এগুলো ব্যবহার করতেন।
সিপিজেকে রোমান বলেছেন, ২০২৩ সালের মে মাসেও তা উদ্ধার করা যায়নি। তবে তাদের এপার্টমেন্ট থেকে আর কোনোকিছু হারানো যায়নি।
হত্যাকাণ্ডের আগে সাগর সরওয়ার পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন। সেই বইটি ওই ল্যাপটপে সংরক্ষিত ছিল। ২০২৩ সালের মে মাসে সাগর সরওয়ারের সাবেক সহযোগী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জার্মান সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম এসব তথ্য দিয়ে বলেছেন ওই ল্যাপটপ লাপাত্তা হয়ে গেছে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে একই বিষয়ের ওপর আরও একটি বই লিখেছিলেন সাগর।
হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, খুনিদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ধরা হবে। ২০১২ সালের অক্টোবরে হত্যাকাণ্ডের আট মাস পরে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে আট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। রোমান বলেন, ২০২৩ সালে জামিনে তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কি কারণে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে তার মূল তথ্য তিনি জানেন না। সিপিজে আরও লিখেছে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর জাতীয় সংসদে একটি বিবৃতি দেন। তাতে তিনি বলেন, পুলিশ পৌঁছার আগেই ক্রাইম সিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করে ফেলেন সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষ।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে এই হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য অতিরিক্ত সুপারিনটেন্ডেন্ট খন্দকার মো. শফিকুল আলমকে নিয়োগ করে র্যাব। রোমান বলেন, এ নিয়ে তিনি এই দায়িত্বে সপ্তম ব্যক্তি।
ওদিকে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ঢাকার একটি আদালত তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি করেন। এর মধ্য দিয়ে এই মামলা ১০৪তম বারের জন্য স্থগিত করা হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিপিজে। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেননি।
Nothing to say....