প্রথম পাতা
হাসপাতালে রোগী বাড়ছে
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২৯ জুন ২০২২, বুধবার
দেশে প্রতিদিনই স্রোতের গতিতে করোনায় আক্রান্ত রোগী বেড়েই চলছে। গত কয়েকদিন ধরে দৈনিক শনাক্তের হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বাড়ছে মৃত্যুও। হাতপাতালেও রোগী হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক মাসে সারা দেশে করোনার ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগী ভর্তি সাধারণ শয্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬০০ শতাংশ। আর আইসিইউতে ভর্তি বেড়েছে ২৪০ ভাগ। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ শয্যা, আইসিআই ব্যবস্থা বর্ধিত হারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে সরকার করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরা, যথাসম্ভব জনসমাগম বর্জন, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালনসহ ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে। দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বলে নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চলতি বছরের ২৮শে মে সারা দেশে ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা, আইসিইউ এবং কোডিড এইচডিআই মিলে মোট ভর্তি রোগীা সংখ্যা ছিল মাত্র ৮২ জন।
পরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় সেগুলোতে সাধারণ রোগীর সেবা চালু হয়। ফলে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইসিইউ, এইচডিইউ শয্যা, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম অকেজো পড়ে থাকে। এর মধ্যে মহাখালীর ডিএনসিসি ও বিএসএমএমইউ’র কোভিড হাসপাতাল ছাড়া সবক’টিতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়। এখন করোনা রোগী বাড়ায় অন্যান্য হাসপাতাল প্রস্তুতির কথা বললেও কোভিড চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো পুরোপুরি ঠিক করা হয়নি বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রকাশিত হেল্থ বুলেটিনের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, করোনার জন্য সারা দেশে ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ, আইসিইউ এবং কোডিড এইচডিআই মিলে মোট ১৪ হাজার ৮৬০ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ ১২ হাজার ৯৮৮ শয্যার বিপরীতে গতকাল ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৬১ জন, আইসিইউতে ১ হাজার ১৮৫টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি ৬৮ জন এবং এইচডিইউতে ৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। আর শয্যা ফাঁকা আছে ১৪ হাজার ৩৮১টি।
তথ্যমতে, ঢাকা মহানগরীর সরকারি-বেসরকারি মিলে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৪ হাজার ৪৭৪টি। তাতে ভর্তি আছেন ২৫৯ জন এবং শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ২১৫টি। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরীতে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৭৩২টি। তাতে ভর্তি আছেন ৫৬ জন এবং খালি আছে ৬৭৬টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যার সংখ্যা ৯১৭টি। এই শয্যায় ভর্তি আছেন ৫৭ জন এবং খালি আছে ৮৬০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৬৪টি। তাতে ভর্তি আছেন ২ জন এবং খালি আছে ৬২টি। সরকারের ছয় নির্দেশনা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরা, যথাসম্ভব জনসমাগম বর্জন, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালনসহ ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
এ ছয়টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মঙ্গলবার চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নির্দেশনার চিঠিতে বলা হয়, সামপ্রতিককালে সারা দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও জনগণের মধ্যে মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে যথেষ্ট শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে মর্মে সরকারের উচ্চমহলে আলোচনা হচ্ছে। কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির গত ১৪ই জুনের সভায় গৃহীত সুপারিশ প্রতিপালনের জন্য এবং কোভিড প্রতিরোধে ছয়টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারদের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। এতে বলা হয়, (১) স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে সব গণমাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে। (২) সবক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’- নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। (৩) ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানগুলোতে (যেমন-মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। (৪) জ্বর, সর্দি, কাশি বা কোডিড-১৯ এর উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড টেস্ট করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। (৫) দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল- রেস্টুরেন্ট সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
(৬) স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। করোনা নতুন শনাক্ত ২০৮৭ জন: দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন রোগী শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৭ জনে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১০১ জন। ২ হাজার ৮৭ জনের মধ্যে রাজধানীতেই ১ হাজার ৭৯৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ মোট শনাক্তের ৮৬ শতাংশই রয়েছেন ঢাকা মহানগরীতে। একই সময়ে করোনায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৯ হাজার ১৪৫ জন। নতুন শনাক্ত নিয়ে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০ জন এবং এখন পর্যন্ত ১৯ লাখ ৭ হাজার ৬৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, দেশে ৮৮০টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ১৮৪টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৩ হাজার ৪৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৪৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় ১ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী মারা গেছেন। মৃত্যু তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫১ থেকে ৬০ বছরের একজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের একজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে একজন। একজন ঢাকা বিভাগের, ২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা। দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৮ হাজার ৬০৪ জন এবং নারী ১০ হাজার ৫৪১ জন। নতুন শনাক্তের মধ্যে ঢাকা মহানগরের রয়েছেন ১ হাজার ৭৯৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১ হাজার ৮৯৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১২ জন, রাজশাহী বিভাগে ১১ জন, রংপুর বিভাগে ৮ জন, খুলনা বিভাগে ২১ জন, বরিশাল বিভাগে ২১ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।