অর্থ-বাণিজ্য
নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দিতে না পারলে আগের দামে ফিরে আসার দাবি
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(৮ মাস আগে) ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৪:০৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১০ পূর্বাহ্ন
চলমান গ্যাস তীব্র সংকটের কারণে বস্ত্রখাতের উৎপাদন সক্ষমতা ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দিতে না পারলে সরকার যেন মূল্য বৃদ্ধির আগের দামে ফেরত আসে। নিরবচ্ছিন্ন ও মান সম্পন্ন সরবরাহ নিশ্চিত না হলে টেক্সটাইল খাতে নতুন বিনিয়োগ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। এমনকি সংকটের কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতার অনিশ্চয়তার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলেও তিনি দাবি করেন।
সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁতে ১৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস মেশিনারি প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএর সভাপতি দাবি জানান। আগামী ১-৪ ফেব্রুয়ারি আইসিসিবিতে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
খোকন জানান, গ্যাস সংকটের সাথে ব্যাংকঋণের চড়া সুদ বস্ত্র খাতকে চরম অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। শিগগিরই সংকট না কাটলে উৎপাদন আরও কমে আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
২০২২ সালে কোনো গণশুনানি ছাড়াই গ্যাসের দাম ১৪ থেকে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছিল সরকার, যা ২০২৩ থেকে কার্যকর হয়। এরমধ্যে শিল্পে ব্যবহৃত প্রতি ঘন মিটার গ্যাসের দাম ৩০ টাকা করা হয়, যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান। তবে দাম বাড়ানোর সময় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়া হলেও এখন পূর্বের সময় চেয়ে আরও শোচনীয় অবস্থা বলে শিল্প মালিকরা দাবি করেছেন।
গ্যাস সংকটে এ খাতের বিদ্যমান অবস্থা তুলে ধরে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ১ মাস বা তারও বেশি সময় যাবত চট্টগ্রাম, সাভারসহ সাভারের আশুলিয়া, গাজীপুর, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত টেক্সটাইল মিলগুলিতে সরবরাহকৃত গ্যাসের গড় পিএসএফ "০"-২ এর মধ্যে। শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জের বিসিক এবং তার আশে পাশের এলাকায় গত ১৫ দিন যাবত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় মিলতলির উৎপাদন শূন্যের কোঠায়। মাঝে মধ্যে গ্যাস সরবরাহ থাকলেও চাপের উঠানামার কারণে মিলের যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। এর কারণে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে প্রয়োজনীয় সুতা ও কাপড় সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাস না থাকা সত্ত্বেও মিলগুলোকে ন্যূনতম গ্যাস বিল বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে বয়লার চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় ফেব্রিক প্রসেসিং বন্ধ রয়েছে। মিল বন্ধ থাকায় উৎপাদন না করতে পারার জন্য সময়মত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদানে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে যা আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র বস্ত্রশিল্পই নয়, গ্যাস সংকটে দিনের প্রায় অর্ধেক সময় বিভিন্ন কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে কমে আসছে উৎপাদন। রপ্তানির ক্রয়াদেশও কমে যাচ্ছে। এতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে কর্মসংস্থান নিয়ে।
বিটিএমএর সভাপতি বলেন, আমাদের উদ্যোক্তাগণের আগ্রহ ও সাহসের কোনো অভাব নেই। বর্তমানে যে বিষয়গুলো আমাদের বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে তার কারণ হচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষিতে, বিশ্বের সাপ্লাই-চেইনের বিপর্যস্ত অবস্থা, জ্বালানির তীব্র সংকট ও ডলারের অভাব। আপনারা জানেন ইতিমধ্যেই সরকার নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরবরাহ ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়েছে বলে আমরা জানি না। বিটিএমএ'র সদস্য মিলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক টেক্সটাইল মিল ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের মাধ্যমে উৎপাদন পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে ফেব্রিক প্রসেসিংয়ের জন্য বয়লারেও গ্যাসের প্রয়োজন হয়। অথচ সমিতির সদস্য মিলগুলো দীর্ঘদিন যাবত গ্যাস সংকটের কারণে সুষ্ঠুভাবে মিল পরিচালনা করতে পারছে না। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন সরবরাহ নিশ্চিত না হলে টেক্সটাইল খাতে নতুন বিনিয়োগ হবে কিনা তা নিয়ে আমাদের সংশয় রয়েছে।
প্রদর্শনী সম্পর্কে বলেন, আগামী ১-৪ ফেব্রুয়ারি, প্রতিদিন দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে রাত্র ৮টায় শেষ হবে। প্রদর্শনীটি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উদ্বোধন করবেন।