শেষের পাতা
মৌলভীবাজারে বন্যা
কর্মহীন শ্রমজীবীরা, বাড়ছে হাহাকার
ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
২৭ জুন ২০২২, সোমবারবন্যায় হাওর পাড়ের শ্রমজীবীরা কর্মহীন। ঘরবাড়ি নেই। চাল নেই, ভাত নেই। চুলা নেই, পানিও নেই। শুধুই নেই আর নেই। আছে যা তা কেবল বন্যার পানি আর হাহাকার। গতকাল হাকালুকি হাওর তীরের বেলাগাঁও, শাহপুর, সাদিপুর, মিরশংকর, মহেশঘরি, কালেশার, কানেহাত ও বাদে ভূকশিমুল গ্রামের বাসিন্দারা ক্ষোভে কষ্টে তাদের দুর্ভোগ, দুর্দিন আর চলমান বন্যার সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন। জানালেন তাদের চরম অসহায়ত্বের কথা। বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাকালুকি হাওর পাড়ের শ্রমজীবীরা। তারা জানালেন চলমান এ বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে।
আবহাওয়ার অবস্থা এই ভালো এই খারাপ। এমন অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতির কখনো কিছুটা উন্নতি হলেও আবার তা অবনতি হচ্ছে। হাকালুকি হাওর তীরের তিন উপজেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা প্রায় ২৫টি ইউনিয়নের তিন শতাধিক গ্রামের রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, ঘরবাড়ি, ধর্মীয় উপাসনালয় এখনো পানিবন্দি। প্রায় ৩ লাখ মানুষ বানের পানিতে রয়েছেন দুর্দশায়। ঘরবাড়ি বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। হাওর তীরের কৃষি আর শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন থাকায় নেই আয় রোজগারও। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে তারা এখন অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। আরও বিপদ তাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে। চরম অসহায় বানভাসিরা রাত পোহালেই ত্রাণের আশায় পথের দিকে চেয়ে থাকছেন। কিন্তু তারা হতাশ হচ্ছেন। কারণ তারা দুর্দিনে পাচ্ছেন না আশানুরূপ সাহায্য। সরকারি তরফে যে সহযোগিতা আসছে তা পর্যাপ্ত নয়। কেউ পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না।
আর এবারের বন্যায় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল কিংবা বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে কম। জানা যায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নদী তীরবর্তী এলাকায় অনেকটা উন্নতি হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে হাওর তীরবর্তী এলাকায়। হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, রাজনগর ও মৌলভীবাজার এই পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি। প্রায় ২৫টি ইউনিয়নে বন্যা জলাবদ্ধতায় স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। বানের পানি কিছুটা কমলেও তা স্থির থাকছে না। প্রতিদিনই কম বেশি বৃষ্টি হওয়ায় তা আগের অবস্থায় চলে আসছে। জানা যায়, এ পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন প্রায় ২০ হাজার। এ ছাড়া দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত থাকায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তলিয়ে গেছে অর্ধশতাধিক মৎস্য খামার। বন্যায় মৌসুমী সবজি ও আউশ ধানেরও ক্ষতি হয়েছে।