ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

ঝিনাইদহ ২৫০ বেড হাসপাতাল

কাপড় ধোলাইয়ের কাজ করে কনস্ট্র্রাকশন ফার্ম

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
২৭ জুন ২০২২, সোমবার

দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ঝিনাইদহ আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কাপড় ধোলাইয়ের কাজ দেয়া হয়েছে একটি কনস্ট্র্রাকশন ফার্মকে। এ নিয়ে রোগীদের পাশাপাশি দায়িত্বরত নার্স ও আয়ারাও চরম বিপাকে পড়েছেন। হাসপাতালের ময়লা বেডশিট ও বালিশের কভার পরিষ্কার করে যথাসময়ে সরবরাহ করা হচ্ছে না। অনেক সময় ময়লা বিছানায় রোগীরা রাতযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। শিশু ওয়ার্ডের বেশিরভাগ বিছানায় চাদর নেই। ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। অনেক সময় নার্সদের প্রতি চড়াও হচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে ১০টি ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জরা বিষয়টি তত্ত্ব¡াবধায়কের কাছে ৩বার লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। 
নার্সরা জানান, ঠিকাদারের লোকজন রাতের আঁধারে ময়লা কাপড় নিয়ে যায়, আবার রাতের আঁধারেই আধাপরিষ্কার কাপড় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ফেলে যায়। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, যাদের অভিজ্ঞতা বিল্ডিং তৈরি করাসহ নানা প্রকৌশল যন্ত্রপাতি নাড়াচাড়া করা, সেই তাদের হাতেই সোপর্দ করা হয়েছে হাসপাতালের রোগীদের ময়লা বেডশিট, অপারেশনের গাউন ও বালিশের কভারসহ ২০ আইটেমের কাপড় ধোলাইয়ের কাজ। 
তত্ত্ব¡াবধায়কের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, টেন্ডারের মাধ্যমে গত ১লা এপ্রিল থেকে হাসপাতালের ময়লা কাপড় ধোলাইয়ের কাজ শুরু করে ঝিনাইদহ শহরের মাওলানা ভাসানী সড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম আর ট্রেডিংয়ের মালিক মো. মহিবুল্লাহ। তাকে দরপত্রের ৯নং শর্ত ভঙ্গ করে ২ জন হাসপাতালের কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কাজ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন
৯নং শর্তে উল্লেখ আছেÑ ময়লা কাপড় ধোলাইয়ের ক্ষেত্রে দরপত্রদাতার নিজস্ব লন্ড্রির ব্যবসা থাকতে হবে। ঠিকাদার মহিবুল্লার ঘরে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে কোনো লন্ড্রির দোকান নেই। ঝিনাইদহ শহরের নয়ন আবাসিক হোটেলের নিচে তার ঠিকাদারি ফার্ম। এদিকে ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার পর থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে শোরগোল শুরু হয় হাসপাতালে। হাসপাতালের সিলযুক্ত বেডশিট পাল্টিয়ে ছেঁড়াফাটা বেডশিট, ময়লাযুক্ত বেডশিটই আবার পরিষ্কার দেখিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার তিনদিন পর পর ময়লা কাপড় ধোলাই করার নিয়ম থাকলেও তা করা হচ্ছে না। 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঠিকাদার মহিবুল্লাহ নিজে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের রাস্তা ও বিল্ডিং-এর ঠিকাদারি কাজ করেন। তিনি নিজে হাসপাতালের ময়লা কাপড় ধোলাইয়ের কাজ করেন না, লোক দিয়ে করান। তার লাইসেন্সে জনৈক এক ব্যক্তি কাপড় ধোলাইয়ের কাজ করেন। সেই জনৈক ব্যক্তিও কাপড় ধোলাইয়ের কাজ করেন না বা তার কোনো দোকান নেই। অর্থাৎ তিন হাত বদল হয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে ঝিনাইদহ আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কাপড় ধোলাইয়ের কাজ। মেল মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ ফাহমিদা খাতুন জানান, তারা ময়লা কাপড় নিয়ে চরম বিপদে আছেন। নার্স রাজিয়া খাতুন বলেন, কাপড়ের অভাবে ৩ দিন ডাক্তারদের অপারেশনের কাজ বন্ধ ছিল। যে কারণে ময়লা কাপড়ের বিষয়ে ১০ ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জরা যৌথ স্বাক্ষর করে বিষয়টি তত্ত্বাবধায়ককে জানিয়েছেন। এদিকে শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে বেশির ভাগ বিছানায় চাদর নেই। ধোলাইয়ের জন্য নিয়ে তা আর ফেরত দেয়নি। শিশু ওয়ার্ডে ইন্টার্নি করা ম্যাটসের ছাত্র হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতি রোববার ও বুধবার ময়লা কাপড় নেয়ার কথা। কিন্তু তারা নেয় না। ফিমেল ওয়ার্ডে কর্মরত নার্স ও স্বেচ্ছাসেবী দেলোয়ারা খাতুন ও নুরুন্নাহার অভিযোগ করেন, চাদর ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছে না। রক্তমাখা দুর্গন্ধ বেডশিট পরিষ্কার বলে রেখে চলে যাচ্ছে। কিছু বলতে গেলে মারমুখী হয়ে তেড়ে আসে। এদিকে হাসপাতালের হিসাবরক্ষক ফেরদৌস জানান, গত দুই মাসে ঠিকাদারকে প্রায় ৯৫ হাজার টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঠিকমতো ধোলাইয়ের কাজ না করার কারণে তারাও বেশ বিপদে আছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম জানান, নার্সরা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেক রুগীর স্বজনরা আমাদের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। ঠিকাদারকে ইতিমধ্যে তিনবার শোকজ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঠিকাদার মহিবুল্লাহ জানান, আমি হাসপাতালে কোনো কাপড় ধোলাইয়ের কাজ করছি না, আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে অন্য একজন কাজ করছে। সে কী করছে না করছে তাও আমি জানি না।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক/ এবারো ভোগাতে পারে ১৩ কিলোমিটার

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status