অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মাহফিজুর রহমান। সাপাহার উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে। ১৯৯৭ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। কঙ্গোতে সেনা সদস্য হিসেবে দয়িত্ব পালন করেন দেড় বছর। পরে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন। তারপর ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন একজন সফল উদ্যোক্তা। গড়ে তোলেন মাহফুজ মণ্ডল এগ্রোফার্ম। গতকাল সরজমিন সমন্বিত কৃষি খামারে গিয়ে জানা যায়, কী নেই মাহফুজ মণ্ডল এগ্রো ফার্মে! চোখ ঘোরাতেই চারিদিকে চোখে পড়ে সবুজের সমারোহ। শুধু কী আম- বরই! পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, স্কোয়াশ, মিষ্টিকুমড়া, শসাসহ বিভিন্ন সবজির গাছে ছেয়ে গেছে। যেন পা ফেলবার জায়গা নেই! নিজস্ব গভীর নলকূপ থাকায় পানির কোনো অভাব নেই।
যার কারণে সব ধরনের ফসল হয়ে থাকে এই কৃষি খামারে। শুধু কী তাই! মাহফিজুর রহমান নিজেই মাল্টা, বরই, আম ইত্যদির গ্র্যাফটিং করে থাকেন। এছাড়াও সৌদি খেজুরের বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করে নিজেই বাগান তৈরি করে বলে জানান মাহফিজুর। মাহফিজুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পরে আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে থাকি। দেখতে থাকি উদ্যোক্তাদের নানাবিধ কর্ম। তাদের দেখে উৎসাহিত হয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে নিজের কিছু জমি ও কিছু লিজ নিয়ে শুরু করি আম বাগান। প্রথম পর্যায়ে ১৪ বিঘা জমিতে আম গাছ রোপণ করি। পরে বিভিন্ন অভিজ্ঞজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে আম বাগানের মধ্যেই বিভিন্ন ফসল চাষ আরম্ভ করি। যাতে গড়ে ওঠে সমন্বিত একটি বাগান। এতে করে আরও দ্বিগুণ লাভজনক হয়ে ওঠে আমার প্রকল্প। পরবর্তীতে আরও বেশকিছু জমি লিজ নিয়ে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের ফলজ এবং শাক-সবজি রোপণ করি। বর্তমানে আমার ২৭ বিঘা জমির প্রজেক্ট। তিনি আরও বলেন, আমার সমন্বিত বাগানে রয়েছে আম, মাল্টা, বরই, কমলা, লেবু, নানা প্রকার শাক সবজি, সৌদি খেজুর, স্কোয়াশ, ওটিসি-৩ বা বারোমাসি সজনে, বার্লি, জামরুল ইত্য্যাদি। এছাড়াও দেশি আমের পাশাপাশি আমার বাগানে বিদেশি জাতেরও আম রয়েছে। যেমন- আম্রপলি, বারি-৪, কিউজাই, পালমা, ব্যানানা, মিয়াজাকি জাতের আম আমার সমন্বিত বাগানে রয়েছে। কৃষিখাতেই কেন তিনি ঝুঁকলেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি মূলতঃ কৃষকের সন্তান। সেজন্য যতই বাইরে থাকি বা চাকরি করি কৃষি আমাদের টানে। এজন্য অনেক উদ্যেক্তার সঙ্গে পরামর্শ করে আমি এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। শুরুর দিকে লভ্যাংশ কম হলেও বর্তমানে প্রতি বছরে ‘মাহফুজ মণ্ডল এগ্রোফার্ম’ হতে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। বর্তমানে আমের মৌসুম হওয়ায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন মাহফিজুর রহমান। তার ফার্মে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০/১২ জন বেকার যুবকের। এছাড়াও মৌসুম অনুযায়ী প্রায় ৩০-৪০ জন লোকের কর্ম সংস্থান হয়ে থাকে এই ফার্মে। মাহফিজুর রহমান জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হতে সঠিক তদারকি ও পরামর্শ প্রদান করা হলে আরও উপকৃত হতে পারতাম। কৃষি অফিসের কোনো অফিসার আমার বাগানে আসেনা বললেই চলে। তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তাদের অফিস থেকে সকল ধরনের সহায়তা অব্যহত রয়েছে।