জাবিতে রেজিস্ট্রার নিয়োগে অনিয়ম বোর্ড স্থগিত

অনিয়মের অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ‘রেজিস্ট্রার নিয়োগ বোর্ড’ বসার নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা আগে স্থগিত করা হয়েছে।  গতকাল দুপুর ৩টার দিকে এ নিয়োগ বোর্ডের সদস্য জাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বলেন, ‘সিলেকশন কমিটিতে চ্যান্সেলর মনোনীত দুইজন সদস্য না থাকা, বোর্ড বসার মাত্র ঘণ্টা কয়েক আগে প্রার্থীদের ইন্টারভিউ কল করা এবং একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত দুইজন সদস্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এই বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে।’ এর আগে, পছন্দের প্রার্থীকে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দিতে তোড়জোড় করার অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় নিয়োগ বোর্ড বসার কথা থাকলেও প্রার্থীরা জেনেছিল মাত্র ছয় ঘণ্টা পূর্বে। তাছাড়াও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নিজেই এই পদের একজন প্রার্থী হয়েও ইন্টারভিউ কল চিঠি ইস্যু করেছেন। জানা যায়, গত বছরের ১৬ই জুন রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ পরিচালক ও শারীরিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। যেখানে রেজিস্ট্রার ব্যতীত অন্য দুটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। রেজিস্ট্রার পদে আবেদন করেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. আবুল কালাম আজাদ, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (স্টোর) তাজনাহার বেগম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আবু হাসান, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি-২) এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (কাউন্সিল) এ বি এম কামরুজ্জামান।এদের মধ্যে দুইজন প্রার্থী গতকাল দুপুর ১২টায় ভিসি বরাবর অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে ‘রেজিস্ট্রার নিয়োগ বোর্ড’ বাতিলের আবেদন করেন। সেই প্রেক্ষিতে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে।  জ্যেষ্ঠ প্রার্থীর আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘সকাল ৯.১০টায় আমি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পরীক্ষা দেয়ার জন্য একটি পত্র পেয়েছি।

নিয়োগ পরীক্ষার দিন ইন্টারভিউ কার্ড দেয়া প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয়। তাছাড়া প্রায় এক বছর পূর্বে আহুত বিজ্ঞপ্তির নিয়োগ পরীক্ষা এতদিন পর আহ্বান করাও বিধেয় নয়। উপরন্তু, পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয় সময়টুকুও পর্যন্ত দেয়া হয়নি। অনেকটা গোপনীয়তার সঙ্গে এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান আহ্বান করা হয়েছে।’  আবেদনপত্রে তিনি দাবি করেন, ‘ইন্টারভিউ কার্ড যিনি ইস্যু করেছেন তিনি নিজেও একজন প্রার্থী এবং আরেকজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। তিনিও একজন প্রার্থী। তারা যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে ইন্টারভিউ দেয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন। কিন্তু আমি তা পাইনি। তাই আমার পক্ষে অদ্যকার ইন্টারভিউ বোর্ডে নিয়োগ পরীক্ষা দেয়া সম্ভব নয়।’ এই পদের আরেকজন প্রার্থী নিয়োগ বোর্ড বাতিলের আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘হঠাৎ করে নিয়োগ বোর্ডের খবর শুনে আমি অত্যন্ত অবাক ও মর্মাহত হয়েছি। গত সিনেট সভায় সকল সেশন বেনিফিট বাতিল হয়। তাহলে ২ দিন পর সেশন বেনিফিট বাতিল হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে রেজিস্ট্রারের পদোন্নতি রেগুলার করা সম্ভব? সেশন বেনিফিট বাতিলের দুদিন পর এই বোর্ড স্ববিরোধী।’ এদিকে প্রার্থীদের কাছে পাঠানো চিঠির একটি কপি মানবজমিনের কাছে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, চিঠিটি গত ২৩শে জুনের তারিখের। সেখানে বলা হয়েছে গত বছরের ১৬ই জুন তারিখের আবেদনের প্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিটির সভা ২৬শে জুন বিকাল সাড়ে ৩টায় ভিসির সভাপতিত্বে তার অফিস কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের প্রথম স্ট্যাটিউটসের ২২ ধারা অনুযায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য ৮ সদস্যের একটি নিয়োগ বোর্ড গঠন করতে হয় যার প্রধান হন ভিসি। এই বোর্ডে ভিসি ছাড়া একাডেমিক কাউন্সিল থেকে মনোনীত ২ জন সদস্য, সিন্ডিকেট থেকে মনোনীত ২ জন সদস্য, আচার্য কর্তৃক মনোনীত ২ জন সদস্য ও ভিসির মনোনীত একজন সদস্য থাকেন।  জানা গেছে, ভিসির মনোনীত সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, সিন্ডিকেট মনোনীত সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির ও সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ। এ ছাড়াও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে রয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম। একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত এই দুই সদস্যদের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।