শেষের পাতা
ঘরে বসেই থানার সেবা
ফাহিমা আক্তার সুমি
২৬ জুন ২০২২, রবিবারঘরে বসেই মানুষ এখন অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার সুযোগ পাচ্ছেন। থানায় গিয়ে জিডি করতে হচ্ছে না। খুব সহজেই অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিয়ে দেশের যেকোনো নাগরিক জিডি করতে পারবেন। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সারা দেশে প্রতিটি থানায় চালু হয়েছে অনলাইন সেবার এই কার্যক্রম। ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, সব থানায় অনলাইন জিডি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে অনেক মানুষ এখনো জানেন না এই সেবার কথা। সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে আরও সময় লাগবে।
তেঁজগাও, মোহাম্মদপুর, হাতিরঝিল, শাহবাগসহ কয়েকটি থানায় সরজমিন জানা যায়, উদ্বোধনের পর তাদের অনলাইন জিডির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনলাইনে জিডি করতে সব টেকনিক্যালি প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ। দু’একজনের সাড়াও পাওয়া গেছে।
থানায় জিডি করতে আসা শরিফুল ইসলাম বলেন, তিনি জানতেন না অনলাইনে সেবা নেয়া যায়। আজ থানায় জিডি করতে এসে জানতে পারেন। তিনি বলেন, সরাসরি জিডি করতে আর থানায় আসা লাগবে না। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমাদের অনেক সময় বাঁচবে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। সেবাটি সম্পর্কে মানুষ ধীরে ধীরে জানতে পারছে। অলনাইন জিডির সংখ্যা বাড়ছে। গত মাস থেকে এই সেবাটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়। উদ্বোধনের পর পুরোদমে কার্যক্রম চলছে। অনলাইন জিডির কার্যক্রম প্রথমে ডিএমপির চারটি থানায় শুরু হয়েছিল। এই সেবার কথা জানার পর ধীরে ধীরে মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠছে। কেউ সরাসরি জিডি করতে আসলে তাদের অনলাইনে ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। যাদের স্মার্ট মোবাইল ফোন নেই তারা থানায় আসলে তাদের সহযোগিতা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এটুআই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ছয় বছর আগে অনলাইন জিডি চালুর ঘোষণা আসে। ২০১৬ সালে ডিএমপি জানিয়েছিল, তাৎক্ষণিকভাবে কেউ থানায় যেতে ব্যর্থ হলে অনলাইনের মাধ্যমে জিডি করতে পারবেন। এমনকি দেশের বাইরে থেকেও জিডি করা যাবে। এছাড়া সরাসরি পুলিশ সদর দপ্তরে ফ্যাক্স ও ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানানো যাবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্রাপুর, কলাবাগান ও ক্যান্টনমেন্ট থানা এবং ময়মনসিংহের সদর ও ভালুকা থানায় এটি চলু করা হয়েছিল। এছাড়া পরীক্ষামূলকভাবে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নয়টি থানায় চালু হয়েছিল অনলাইন জিডির প্রত্রিয়া।
তিন ধাপে করা যাচ্ছে অনলাইন জিডি: প্রথমে gd.police.gov.bd সাইটে ঢুকতে হবে। সেখানে অনলাইনে জিডির একটি পেজ আসবে। জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর, মোবাইল নম্বর ও জন্ম তারিখ লিখে সাবমিট করতে হবে। এরপর পরিচয় নিশ্চিতের জন্য এসএমএসের মাধ্যমে একটি কোড আপনার দেয়া মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে।
দ্বিতীয় ধাপে নিজের জন্য নাকি অন্যের পক্ষে জিডি করবেন সেটি নির্বাচন করতে হবে। জিডির ধরন এবং কী হারিয়েছেন অথবা খুঁজে পেয়েছেন তা নির্বাচন করতে হবে। কোন জেলার কোন থানায় জিডি করতে চান তা নির্বাচন করুন। ঘটনার সময় ও স্থান লিখে ‘পরবর্তী ধাপ’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
সর্বশেষ অর্থাৎ তৃতীয় ধাপে আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা ও ঘটনা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত বর্ণনা লিখতে হবে। জিডি সম্পর্কিত কোনো ডকুমেন্ট থাকলে সেগুলো সংযুক্ত করা যাবে। ই-মেইল অ্যাড্রেস লিখতে হবে। এরপর ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করলেই সম্পন্ন হবে অনলাইন জিডি। আবেদন সম্পন্ন হলে লগইন করে আবেদনকারী জিডির সর্বশেষ অবস্থাও জানতে পারবেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল আসাদ মানবজমিনকে বলেন, ডিএমপির সব থানায় অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মানুষ এখন ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে জিডি করতে পারবেন। সব মানুষের জানতে আরেকটু সময় লাগবে। আশা করছি দ্রুতই সবাই জেনে যাবেন। মানুষ এই অনলাইন সেবার মাধ্যমে উপকৃত হবেন। তাদের সময়ও বাঁচবে। যাদের স্মার্ট ফোন নেই তারা থানায় এলে সহযোগিতা করা হবে।