খেলা
কেক কেটে ‘পদ্মা উৎসব’ বিসিবি-বাফুফে’র
স্পোর্টস রিপোর্টার
২৬ জুন ২০২২, রবিবারমিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম লাল-সবুজের আলোতে আলোকিত আগের দিন রাত থেকেই। গতকাল সকালেই দেখা গেল মূল ফটকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পদ্মা সেতুর ছবি সংবলিত বিশাল সব ব্যানার ও ফেস্টুন। গতকাল সকাল থেকেই মূল মাঠে বড় বড় দু’টি জায়ান্ট স্ক্রিনে চলছিল পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিতি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সঙ্গে বিসিবি পরিচালক মাহবুবুল আনাম, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, ওবেদ নিজামসহ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির বিখ্যাত এক প্রেস্টি কোম্পানির একটি কভার্ডভ্যান। হ্যাঁ, পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবের আয়োজনে বিসিবি কেটেছে ৫০ কেজি ওজনের বিশাল একটি কেক। বেলা ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরপরই বিসিবি সভাপতি কেক কেটে এই উৎসবে যুক্ত হন মিরপুর শেরেবাংলা মাঠ থেকেই। সেই সময় সেখানে বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্রিকেটারা উপস্থিত ছিলেন।
এর পরই বিসিবি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান, এই সেতুর ফলে দক্ষিণ-পঞ্চিম অঞ্চলের ক্রিকেটের প্রতি তারা আরও বেশি মনোযোগ দিবেন। তিনি বলেন, ‘স্বপ্নের এই সেতু বাস্তবায়নের পর দক্ষিণ-পঞ্চিম অঞ্চলের মানুষের শুধু যে অর্থনৈতিক উন্নতি হবে- এমন নয়।
তারই সুসাস্থ্য কামনা করে ও পদ্মা বিজয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিখানাতে আয়োজন করে দোয়া মাহফিলের। সেই সঙ্গে শিশুদের মধ্যে বিতরণ করা হয় খাবার। এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘স্বপ্ন তো পৃথিবীর সব মানুষেরই থাকে। কিন্তু আমরা এই স্বপ্ন দেখে কিন্তু ঘুমিয়ে যাইনি। কিছু স্বপ্ন আছে, যেটা বাস্তবায়নের জন্য মানুষ ঘুমাতেও পারে না। সারা দিন-রাত এটা নিয়ে চিন্তা করে। এই সমস্ত স্বপ্ন সবাই দেখতে পারে না। এটার জন্য যে সাহস, মানসিকতা দরকার তা সবার থাকে না। এই ধরনের একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেটা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রাম। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যা স্বপ্ন দেখেছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিমের মানুষের মুক্তির সংগ্রাম।’ পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাঝপথে বিশ্ব ব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিলেও নিজস্ব অর্থায়নে কঠিন এই প্রকল্পের কাজ শেষে করে সরকার। পাপনের মতে, এটা শেষ করতে না পারলে তা দেশের জন্য লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়াতো। তিনি বলেন, ‘এটাতে কোনো সন্দেহ নেই পদ্মা সেতু না হলে কী হতো! বিশ্বব্যাংক বন্ধ করে দিলো, সবাই এটা নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দেয়া শুরু করলো। থেমেও তো যেতে পারতো। তাতে হতোটা কী। এমন কত প্রকল্পই তো হয় না।
এটা আমাদের জাতির জন্য লজ্জার একটা বিষয় হতো। এই পদ্মা সেতু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বাঙালি জাতির দাসত্বের শৃঙ্খলার শিকল ভেঙে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার স্বপ্ন।’ এছাড়াও এই সেতু নির্মাণকে নাজমুল হাসান অনেকটা রূপকথাই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘এই স্বপ্ন বা এই গল্প রূপকথাকেও হার মানায়। এই গল্পের প্রতিটা পাতায় যে নাম লেখা আছে, সেটা হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। এই স্বাধীনতার স্বপ্নটা যেমন একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব ছিল দেখা ও বাস্তবায়ন করা। পদ্মা সেতুও একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষেই সম্ভব, আর কারো পক্ষে না। এটা দ্বিতীয় কেউ চিন্তাই করতে পারে না। এটা আমাদের গৌরব, এটা আমাদের মর্যাদা, এটা আমাদের অহঙ্কার।’
কেক কেটে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উদযাপন করলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে)। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাহী কমিটির পাঁচ সদস্য ও নারী জাতীয় ফুটবলাররা মিলে কেক কাটেন। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের ফুটবলে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন বাফুফে সভাপতি। সালাউদ্দিন বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকার বাইরে ভেন্যু করার সুযোগ বাড়লো। ফুটবল বিকেন্দ্রীকরণ ও প্রসারে এই সেতু বড় ভূমিকা রাখবে।’
নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘এই সেতু হওয়ার ফলে নারী ফুটবলারদের অনেকেই নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে।’ নারী ও পুরুষ ফুটবলারদের অনেকের বাড়ি দেশের দক্ষিণ অংশে। গতকাল সকাল দশটায় পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হয়। বাফুফে ভবনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে নারী ফুটবলারসহ ফুটবল সংশ্লিষ্ট অনেকেই এই অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। দুপুরে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের উপস্থিতিতে কেক কাটা হয়।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সশরীরে যোগ দেয়ার সুযোগ হয়নি জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। কিন্তু হাজার হাজার মাইল দূরের ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে থেকে স্মরণীয় মুহূর্তের অংশীদার হলেন তারা। গতকাল সেন্ট লুসিয়ায় বিশাল এক কেক কেটে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদযাপন করেন ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফের সদস্যরা।