শরীর ও মন
সুস্থতায় ভিটামিন ডি’র প্রয়োজনীয়তা
ডা. মো. বখতিয়ার
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবারযারা ভিটামিন ডি’র অভাবে ভুগছেন, তারা প্রায়শই সাধারণ ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করেন। পেশিতে দুর্বলতা দেখা দিলে সিঁড়িতে ওঠা-নামা, ওঠা-বসা ও অনেক সময় সাধারণ কাজ করতে অসুবিধা দেখা দেয়।
সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীরে ভিটামিন ডি’র প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। যেহেতু সূর্যালোক থেকে সরাসরি আমাদের ত্বকে ভিটামিন ডি সংশ্লেষণ হয় তাই একে সানশাইন ভিটামিনও বলা হয়। আমরা যে খাবার খাই তার থেকে, ওষুধ ও সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি শরীরে প্রবেশ করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, সূর্যালোকই হলো ভিটামিন ডি’র মূল উৎস, তাই তা গায়ে লাগানোই সেরা উপায়।
তবে বেশির ভাগ সময়েই আমরা শরীরে ভিটামিন ও খনিজের গুরুত্ব বুঝতে পারি না। তবে শরীরে যখন কোনো ভিটামিন বা খনিজ অতিরিক্ত পরিমাণে কমে যায় শরীর তার জানান দেয়। ভিটামিন বা খনিজ কম হলে শরীরে কোনো না কোনো পরিবর্তন হয় এবং ব্যথা-যন্ত্রণা শুরু হয়। আমাদের হাড় ভালো রাখতে, মানসিক অস্থিরতা কম করতে এবং সামগ্রিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে ভিটামিন ডি’র ভূমিকা অপরিসীম।
সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলে শরীর নিজে থেকেই ভিটামিন ডি তৈরি করে। তবে কিছু খাবার ও বিকল্প ওষুধ থেকেও ভিটামিন ডি শরীরে প্রবেশ করে। শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি থাকলে শরীরের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস জাতীয় উপাদান গ্রহণ করতে সুবিধা হয়। এ ছাড়া হাড় ও দাঁতের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্যও এই ভিটামিন দরকার। এই প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো ছাড়াও, ভিটামিন ডি মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া এটি পছন্দসই ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে।
যদিও ভিটামিন ডি’র উপকারিতা একাধিক, তবে ভিটামিন ডি শরীরে কমে গেলে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শীতকালে, যখন আবহাওয়া অত্যন্ত শীতল, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ধোঁয়াশাচ্ছন্ন থাকে, তখন পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া কঠিন হতে পারে। চিন্তার বিষয় হলো এই ভিটামিনের অভাবের উপসর্গ বা লক্ষণগুলো একেক সময়ে এতটাই সূক্ষ্ম হয় যে সেটা বোঝা যায় না। ভিটামিন ডি’র অভাবের দু’টি সবচেয়ে অস্বাভাবিক লক্ষণ রয়েছে যা অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ করতে সাহায্য করে, যা হাড় গঠন এবং শক্তিশালী করে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে, দুর্বল এবং নরম হাড়ের সমস্যা বা অস্টিওম্যালাসিয়া দেখা দিতে পারে ভিটামিন ডি’র অভাবে।
কীভাবে বোঝা যাবে অভাব হয়েছে কিনা: রক্ত পরীক্ষার সাহায্যে ভিটামিন ডি’র অভাব নির্ণয় করা যায়। দুই ধরনের পরীক্ষা রয়েছে এই ঘাটতি নিশ্চিত করতে পারে। সব চেয়ে সাধারণ হলো ২৫-হাইড্রোক্সিভিটামিন ডি, যা সংক্ষেপে ২৫(ওএইচ)ডি নামে পরিচিত।
মনে রাখবেন যেহেতু ভিটামিন ডি শরীরের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান এবং এটি শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তাই এর গুরুত্ব বিবেচনা করে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি পূরণ করুন।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।