দেশ বিদেশ
আটা ময়দা সুজিতেও বাড়তি দাম
নাজমুল হুদা
২৪ জুন ২০২২, শুক্রবার
কড়াইতে গরম তেল। তার ওপর শিঙ্গাড়া ছেড়েছেন ফারুক হোসেন। তার শিঙ্গাড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে মহল্লার মধ্যে। এখনো মাত্র তিন টাকায় বিক্রি করেন প্রতি পিস শিঙ্গাড়া। তবে বেশ কিছুদিন ধরে শিঙাড়ার আকার অনেক ছোট করেছেন তিনি। তারপরও ব্যবসায় কোনো লাভ করতে পারছেন না ফারুক। তিনি বলেন, দুই-তিন মাস ধইরা আটা ময়দার দাম বাড়ছে, তেলের দাম বাড়ছে। আমি শিঙ্গাড়ার দাম বাড়াই নাই। একটু ছোট কইরা দিছি, তাও লাভ করতে পারি না। এখন আমার দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো গতি নাই।
এর প্রায় ৬৫ লাখ টন আমদানি হয়। কোম্পানিগুলো গম আমদানি করে আটা ময়দা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করে। আবার খোলা অবস্থায়ও বিক্রি হয়। সরজমিন রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ১০ থেকে ১৫ টাকা ফারাক রয়েছে খোলা ও প্যাকেটজাত আটায়। এখন খোলা আটা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। আর দুই কেজির প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। যা কেজিপ্রতি দাম দাঁড়ায় ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা। এ ছাড়া খোলা ও প্যাকেটজাত ময়দাতেও দামের পার্থক্য ১০ টাকা পর্যন্ত। এখন বাজারে খোলা ময়দা ৬০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে আর দুই কেজি ওজনের প্যাকেটজাত ময়দা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা কেজিপ্রতি দাঁড়ায় ৭০ টাকা। গত এক বছরে আটা ময়দার দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা। আটা ময়দার দাম ছাড়াও এখন বাজারে সুজির দামও বেশি। আধাকেজি ওজনের প্যাকেটজাত সুজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। তিন-চার মাস আগেও তা ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মালিবাগ কাঁচাবাজারের রহিম স্টোরের আলমগীর হোসেন বলেন, আটার দাম এক মাস আগে যা ছিল এখন তা আছে। এর আগে আরও বেশি ছিল। এখন সামান্য কমেছে। তবে গত বছর এই সময়ে দাম অনেক কম ছিল। তখন আমরা ২৮-৩০ টাকা কেজি খোলা আটা বিক্রি করছিলাম। এখন ৪০-৪৫ টাকা বিক্রি হয়। বিল্লাল স্টোরের সোহাগ বলেন, এক বছর ধরে ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে। মাঝে মধ্যে অনেক বাড়ছে আবার কমছে। তবে প্যাকেট আটার দাম বেশি বাড়ছে।
শুধু আটা কেন- এখন কোন জিনিসের দাম কম বলেন। সবকিছুই বাড়ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তথ্য বলছে, গত এক বছরে খোলা আটার দাম বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ আর প্যাকেটজাত আটায় বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এদিকে এক বছর বছরে খোলা ও প্যাকেটজাত ময়দায় বেড়েছে যথাক্রমে ৫১ দশমিক ২৮ ও ৫২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এদিকে আটার দাম বাড়ার কারণে আটার তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বেকারির সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া হোটেলগুলোর খাবারের দামও বেড়েছে। যেসব হোটেলে দাম বাড়ানো হয়নি সেখানে পরিমাণ অথবা মান কমানো হয়েছে। আটা ময়দার তৈরি বিভিন্ন মুখরোচক ফাস্টফুড খাবারের দামও বাড়ানো হয়েছে। এতে ভোক্তাদের সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন হোটেল ও ফাস্টফুডের ব্যবসায়ীরাও। হারুন হোটেলের ক্যাশিয়ার আহাদ বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে আমাদের ব্যবসায়ের উপর প্রভাব পড়ে। আমাদের খরচ বেড়ে যায়। বিশেষ করে আটা ময়দা আর তেলের দাম বাড়লে বেশি অসুবিধা হয়। আমরা হুট করে খাবারের দামও বাড়াতে পারি না। তখন মান কমাতে হয় বা পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়।