দেশ বিদেশ
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ফেরি সার্ভিসে মিলবে স্বস্তির হাওয়া
রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে
২৪ জুন ২০২২, শুক্রবারদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সুখের ঠিকানা পদ্মা সেতু। আর মাত্র একদিন পরই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে কোটি মানুষের রঙিন স্বপ্নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। স্বপ্নের এই সেতু চালুর পরপরই একই সঙ্গে পাল্টে যাবে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌ-পথের চিরচেনা সেই অস্বস্তিকর দৃশ্য। এই পথে ফেরি সার্ভিসে মিলবে স্বস্তির হাওয়া। পাটুরিয়া কিংবা দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে এসে যানবাহনগুলোকে যানজটের নাকালে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হবে না। ২০ মিনিটের মধ্যেই যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে প্রতিটি ফেরি পদ্মা নদী পাড়ি দিতে পারবে। সামনে ঈদুল আজহার সময়ও থাকবে না যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ। স্বাচ্ছন্দ্যেই ঘরমুখো মানুষ পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে স্বস্তির ঈদ যাত্রা করতে পারবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার মানুষের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান প্রবেশদ্বার পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া নৌপথ। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর আরিচা-নগরবাড়ি নৌ-পথে ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হলে ২০০২ সালে চালু করা হয় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল।
এই ফেরি সার্ভিস চালুর মধ্যদিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ফিরে আসে।
তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আগের মতো আর ভোগান্তি থাকবে না বলে এ পথ দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষ, যানবাহন চালক এবং ঘাট সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা মনে করছেন। তারা মনে করছেন সময় বাঁচানো এবং দুর্ভোগ এড়াতে যানবাহন ও যাত্রীরা পদ্মা সেতু ব্যবহার করবে। যার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যানবাহনের চাপ কমে যাবে। এই রুটে নিয়মিত চলাচলকারী খুলনার যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন কম আসা-যাওয়া করবে। যানবাহনে চাপ কমে গেলে মানুষজন স্বস্তিতে ফেরি পারাপার হতে পারবে। পাশাপাশি ২০ মিনিটেই পদ্মা পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে যাওয়া যাবে। ফরিদপুরের যাত্রী রমেশ সাহা জানান, মানুষজন সময় বাঁচানোর জন্য পদ্মা সেতু ব্যবহার করবে। এতে এই নৌরুটে যানবাহনের চাপ কমে যাবে এবং আগের মতো ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। ট্রাকচালক জসিম মিয়া বলেন, প্রতিনিয়ত কি যে ভোগান্তি মাথায় নিয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ পাড়ি দিতে হয় তা আমরা ট্রাকচালকরাই বেশি বলতে পারবো। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাসগুলো পারাপার করায় মালবাহী ট্রাক নিয়ে পাটুরিয়া কিংবা দৌলতদিয়া ঘাটে আমাদের ৩-৪ দিন পর্যন্ত থাকতে হয়।
তবে পদ্মা সেতু চালু হলে এই নৌরুটে যানবাহনের চাপ অনেক কমে যাবে। বিশেষ করে যাত্রীবাহী ছোট-বড় গাড়িগুলো যদি পদ্মা সেতু ব্যবহার করে তাহলে পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুটের ব্যস্ততা থাকবে না। আমরাও তখন এই রুট দিয়ে ভোগান্তি ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ্যে পারাপার হতে পারবো। বিআইডব্লিউটিসির ডিজিএম শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ মানবজমিনকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যাত্রীবাহী বাস ও ছোট গাড়ির চাপ কিছুটা কমে যাবে। কারণ সেসব গাড়িগুলো একটু স্বাচ্ছন্দ্যে পারাপারের জন্য পদ্মা সেতু ব্যবহার করবে। এ ছাড়া ট্রাক পারাপার কার্যত আগের মতোই থাকবে। বর্তমানে যেখানে প্রতিদিন আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ ট্রাক ঘাটে এসে পারাপারের অপেক্ষায় থাকে। সেতু চালু হওয়ার পর আগের মতো ঘাটে ট্রাকের বিড়ম্বনা থাকবে না। সহসাই ট্রাকগুলো পারাপার হতে পারবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঘাটে যানবাহনের চাপ কমে গেলে ফেরি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আপাতত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট থেকে ফেরি কমানোর কোনো চিন্তাভাবনা করছি না। বর্তমানে রো রো, ইউটিলিটি ও ড্রাম ফেরি মিলে ২১টি ফেরি চলাচল করছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরও আমরা এখানে পর্যাপ্ত ফেরি রাখবো।
জরুরিভিত্তিতে যেকোনো সমস্যা হতে পারে। তাই সর্বক্ষণ ২০টি ফেরি সচল থাকবে। কারণ যেকোনো সময় যানবাহনের চাপ বাড়তে পারে। তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমরা ২২টি ফেরি প্রস্তুত রাখবো। এবার ঈদে এ রুটে হয়তো ছোট গাড়ির চাপ কম থাকবে। ছোট গাড়িগুলোর বিড়ম্বনা না থাকলে সহসাই ভোগান্তি ছাড়া আমরা যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলেও আমাদের এখানে সরকারের রাজস্ব ঠিকই থাকবে। পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুটের দুই পাড় মিলে ২৪ ঘণ্টায় ছোট-বড় বাস, ট্রাকসহ সব মিলিয়ে সাত থেকে আট হাজার যানবাহন বর্তমানে পারাপার হয়ে থাকে। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সে সংখ্যা কমে যাবে।