শরীর ও মন
ব্যথার কিছু কথা
ডা. মো. বখতিয়ার
২৪ জুন ২০২২, শুক্রবার
ব্যথা কি? শরীরের ব্যথা হলো একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি বা অপ্রীতিকর শারীরিক সংবেদন। এটি প্রায়শই উদ্দীপনার কারণে হয় যা ক্ষতিকারক বা সম্ভাব্য ক্ষতিকারক হতে পারে। ব্যথা ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি ভিন্নভাবে উপলব্ধি করে এবং তাদের মেজাজের ওপর এটা খুবই প্রভাব বিস্তার করে। যদি সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায় তাহলে ব্যথা দূর করা সম্ভব হয়। শরীরে ব্যথা হঠাৎ বা কখনো কখনো হতে পারে, ধীরে ধীরে হতে পারে এবং একসঙ্গে অনেকদিন ধরেও হতে পারে বা হয়ে থাকে। ব্যথা টেন্ডন বা লিগামেন্টগুলোর মতো নরম টিস্যুতে বা বিভিন্ন পেশি অনুভূত হতে পারে। কখনো কখনো ব্যথা রোগের উপসর্গ নির্দেশ করে, ব্যথা হলে মস্তিষ্কে অস্বস্তি সৃষ্টি হয় আবার ব্যথা উদ্বেগ-এর একটি অভিব্যক্তিও হতে পারে। ব্যথা অনুভব যেভাবে- শরীরের ত্বকের ওপর এবং ভেতরে খুব ছোট ছোট সেন্সর আছে যাকে বলা হয় নকিসেপ্টর। এগুলো এত ছোট যে, চোখে দেখা যায় না। এগুলো তাপ, রাসায়নিক এবং চাপ এই সেন্সরগুলোকে সক্রিয় করে এবং ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে।
দেখা যায়, যখন কেউ নিজেকে আঘাত করে, তখন এই সেন্সরগুলো চালু হয় এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বিপরীতে একটি সংকেত পাঠায়।
ব্যথা দুই ধরনের (১) অ্যাকিউট (কয়েকদিনের জন্য স্থায়ী ) বা ক্রনিক (এক মাস ধরে বা তার বেশি স্থায়ী)। তবে উভয় ধরনের কারণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। ব্যথার উপসর্গগুলো হলো- * শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বা স্থানে ব্যথা। * টেন্ডার পয়েন্ট (এই জায়গাগুলো টিপলে বা চাপ দিয়ে স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভূত হয়)। * অবসাদ * ভালো ঘুম না হওয়া * মর্নিং স্টিফনেস (এটি ৩০ মিনিটের মতো স্থায়ী হয়)। * হাত-পা, বাহু ইত্যাদিতে ঝিঁ ঝিঁ ধরা। * মাথাব্যথা, উদ্বেগ কারণসমূহ অ্যাকিউট (শরীরের স্বল্পমেয়াদি ব্যথার কারণগুলো হলো) * দৈহিক অসুস্থতা অথবা আঘাত * পানিশূন্যতা * হাইপোকালেমিয়া * তীব্র ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ * অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ক্রনিক (শরীরের স্বল্পমেয়াদি ব্যথার কারণসমূহ) * ফিব্রোমিয়ালগীয়া- শরীরে একাধিক জায়গায় ব্যথা যা স্পর্শ করলে নমনীয় হয়। * মনোবিদ্যাগত কারণ- চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্নতা * পুষ্টির অভাব- ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ১২, আয়রন। * ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম-
স্টেস বা অতিরিক্ত শারীরিক কাজ না থাকা সত্ত্বেও দিনের পর দিন অবিরত এবং নিরন্তর ক্লান্তির অনুভূতি। * অটোইমিউন রোগ- রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, মাল্টিপল স্কলেরোসিস, লুপাস * ক্রনিক সংক্রমণ- টিউবরকুলোসিস, এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি। নির্ণয় ও চিকিৎসা * সম্পূর্ণ রক্ত কাউন্ট- অ্যানিমিয়া নির্ধারণ করতে সাহায্য করে * এরিথ্রোসাইট সেডিমেনটেশন রেট (ইএসআর) এবং সি-রি অ্যাক্টিভ প্রোটিন (সিআরপি)- শরীরের উপস্থিত প্রদাহ নির্মূল করতে সাহায্য করে। * আলকালাইন ফসফাটেজের সঙ্গে এ্যাসপাট্রেট ট্রান্সামিনেস- পেশি ভাঙনের ঘটনা নিশ্চিত করে। * রহিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস (আরএ) ফ্যাক্টর- রহিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিসের নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য করা হয়। * অ্যান্টি নিউক্লিয়ার অ্যান্টি বডি- শরীরে ব্যথার যেকোনো অটো-ইমিউন কারণ দূর করতে ব্যবহার করতে হয়। * ভিটামিন বি ১২ এবং ডি ৩ লেভেলস- ভিটামিন বি ১২ এবং ডি ৩-এর পুষ্টির অভাবকে দূর করতে করা হয়। এমনকি এই পরীক্ষার পরেও যদি কারণটি জানা না যায়, তবে মানসিক বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সঙ্গে একটি সেশন, চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার মতো অন্তর্নিহিত মানসিক কারণগুলো নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে।
একবার কারণ জানা গেলে তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ণয় করা হয়। কিছু রোগীর শুধুমাত্র লক্ষণগুলোর চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে, কারোর কাউন্সেলিং সেশনের পাশাপাশি কেবল প্লাসিবোর প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিরোধ ব্যথা প্রতিরোধ করার জন্য খেলা বা স্পোর্টসের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যাতে নিজেকে আঘাত না দেন। ঠাণ্ডা লাগার ফলে গলা ব্যথা বা অন্যান্য ব্যথার উপসর্গ এড়াতে আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরা উচিত। মাথাব্যথা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে, টেনশন করা যাবে না। একাধিক রোগ থেকে ব্যথা প্রতিরোধ করার জন্য সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া প্রয়োজন। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে এবং বিভিন্ন দুর্ঘটনা এড়াতে সর্বোপরি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা বদরুদ্দোজা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।