ঢাকা, ১৬ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

আসামি না পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যকে গ্রেপ্তার

আইন কী বলে

রাশিম মোল্লা
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার
mzamin

বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় আসামিকে না পেয়ে তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ধরে নেয়ার অভিযোগ আসছে বেশ কিছুদিন ধরে। গত এক মাসে বহু স্বজনের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অনেক ঘটনার খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। আসামিকে না পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যকে আটকের এসব ঘটনাকে মানবাধিকারকর্মী ও আইনজ্ঞরা আইনবিরোধী কাজ এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করছেন। তারা দ্রুত এমন কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। 

গত ৪ঠা নভেম্বর একাধিক জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কিশোরগঞ্জ পৌর বিএনপি’র সভাপতি আমিনুল ইসলাম আশফাককে আটক করতে এসে তাকে না পেয়ে তার নিরপরাধ যমজ দুই ছেলে শহীদুল ইসলাম অনিক ও মাকসুদুল ইসলাম আবিরকে আটকের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। কিশোরগঞ্জ শহরের শোলাকিয়া এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে। পৌর বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম আশফাকের স্ত্রী নাজমা ইসলাম বলেন, আমাদের ছেলে মাকসুদুল ইসলাম আবির অনার্সে পড়ে, আর শহীদুল ইসলাম অনিক এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ওরা কেউই কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। পুলিশ বাসায় এসে তাদের বাবাকে আটক করতে না পেরে কোমলমতি শিক্ষার্থী সন্তানদের নিয়ে যায়। তবে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ দাবি করেন, হরতাল ও অবরোধের সময় হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমিনুল ইসলাম আশফাকের দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
অবরোধ কর্মসূচিতে হামলা-ভাঙচুরের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত বুধবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলেও জানিয়েছেন ওসি।    

আইন কী বলে? 
আইনবিশারদদের মতে, যার যার কৃতকর্মের দায় তাকেই ভোগ করতে হয়। একজনের দায় আরেকজনের ওপরে বর্তানোর কোনো বিধান আইনে নেই। এরপরও আসামিকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদেরকে আটক করার ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে মানবাধিকার আইনজীবী এডভোকেট জেড আই খান পান্না মানবজমিনকে বলেন, আইনে আসামিকে না পেয়ে পরিবারের কিংবা অন্য কাউকে আটক করার কোনো বিধান নেই। এসব ঘটনা অনেক আগে থেকেই ঘটছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এখন খবরটা একটু বেশি আসছে। তবে ইদানিং একটু বেশি হচ্ছে। 

কথা হয় সাবেক বিচারপতি মো. আবু তারিকের সঙ্গে। তিনি মানবজমিনকে বলেন, একজনের অপরাধের জন্য আরেকজনকে আটক করা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এটা চরম অমানবিক। মানুষের মৌলিক অধিকারেরও পরিপন্থি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানকে এমন ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করি।  সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শাহজাহান সাজু মানবজমিনকে বলেন, আইনে একজনের জন্য অন্যজনকে ধরার কোনো বিধান নেই। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের জন্যেও তাকে আটক করা যাবে না।

মানবাধিকারকর্মী এডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল মানবজমিনকে বলেন, যে অন্যায় করেনি তাকে অন্যের অপরাধের কারণে শাস্তি দেয়া যাবে না। যদিও সে অপরাধীর ভাতিজা অথবা পিতা অথবা সন্তান হয়। অপরাধীকেই শাস্তি দেয়া হবে। নিরীহকে সীমালঙ্ঘনকারীর অপরাধের কারণে শাস্তি দেয়ার কোনো বিধান আইনে নেই। দণ্ডবিধির ৩৮ ধারা অনুযায়ী যে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাকেই শাস্তি দেয়া যায়। তিনি আরও বলেন, দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুসারে কোনো ব্যক্তি যদি কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা রুজু করান আর সে মামলা যদি তদন্তে বা বিচারে মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি অপরাধটি সংঘটিত করেছেন বলে ধরে নেয়া হবে। এক্ষেত্রে যদি অভিযোগটি সাধারণ প্রকৃতির হয় তবে বাদীর দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম জেল ও জরিমানা কিংবা উভয়বিধ সাজা হতে পারে। কিন্তু যে মিথ্যা অপরাধে তাকে হয়রানি করা হয়েছে তা যদি যাবজ্জীবন কিংবা সাত বছর পর্যন্ত জেলের শাস্তিযোগ্য হয়, তাহলে বাদীর সাত বছর পর্যন্ত জেল কিংবা জরিমানাসহ জেল হতে পারে।    
বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মানবজমিনকে বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা হচ্ছে। এদের প্রায় কেউই বাসায় থাকতে পারে না। তারা এখন খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধু আমাদের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না, তাদেরকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের ধয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকের বসতবাড়ির আসবাবপত্রও ভাঙচুর করছে। 

গত ৫ই ডিসেম্বর বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় ছেলেকে না পেয়ে বাবাকে আটকের খবর প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজশাহী জেলার শাহমাখদুম থানায়  ছেলেকে না পেয়ে বাবাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নাশকতার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার দেখানোর আগে মোন্তাজ আলীকে (৫০) থানায় দুদিন আটকে রাখারও অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা। মোন্তাজ আলী নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন মুদি দোকানি। মোন্তাজ আলীকে গ্রেপ্তার দেখানোর ঘটনায় এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা দেয় ক্ষোভ। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন আনার। কাউন্সিলর আনোয়ার আরও বলেন, ‘আমরা জনপ্রতিনিধি। যারা স্থায়ী বাসিন্দা, তারা কে কী করে সেটা আমরা জানি। মোন্তাজ কখনোই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং সে আওয়ামী লীগের কর্মী।’ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নগরীর শাহমখদুম থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, শাহ মখদুম থানা এলাকায় একটি নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ওই ঘটনার পরে মোন্তাজ পলাতক ছিলেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তেরোখাদিয়া এলাকা থেকে। কাউন্সিলর ও এলাকাবাসীর দাবি সঠিক নয়।’ 

গত ১৭ই আগস্ট জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়,  মাগুরায় দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে প্রায় ১৪ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, বিএনপি নেতা বাবাকে ধরতে এসে না পেয়ে তার দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বুধবার রাত ১০টার দিকে শ্রীপুর উপজেলা সদরে নিজ বাড়ি থেকে ওই কিশোরকে আটক করা হয় বলে দাবি পরিবারের। এর প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর ওই শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয়। শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আ ফ ম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ওই ছেলেকে ধরা হয়েছে রাত ২টা থেকে আড়াইটার দিকে, ওদের বাসার সামনে থেকে। শ্রীপুর ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা থেকে। পরিবারের অভিযোগ ১০০ ভাগ মিথ্যা। ওর বাবাকে ধরতে গেলে তাকেই ধরতাম।’

পাঠকের মতামত

আইন প্রণয়ন করা হয় বিবেক যা সঠিক ও ন্যায় মনে করে । তা লিপিবদ্ধ করা হয় কাগজে। এখানে বিবেক ই তো বলে তা মহা অন্যায় ।

Kazi
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১২:৫৮ অপরাহ্ন

আইন বলে এইসব পুলিশকে ধরে আগে চরম ধোলাই তারপর আইনানুরাগ ব্যবস্থা নেয়া।

শাজিদ
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৩:৩২ পূর্বাহ্ন

পুলিশ প্রতিদিন আইন লঙ্ঘন করছে। অন্যদিকে সরকার দেশের লাল বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে ! সীমা লঙ্ঘনকারী এই সকল পুলিশ এবং বিচারকদের আল্লাহর গজবই প্রাপ্য ৷

Abdur Razzak
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ২:৩১ পূর্বাহ্ন

সীমা লঙ্ঘনকারী এই সকল পুলিশ এবং বিচারকদের আল্লাহর গজবই প্রাপ্য ৷

কামরুজজামান
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১:৩৯ পূর্বাহ্ন

আসামিকে না পেয়ে আসামীর বাবা ভাই সন্তানদেরকে ধরিয়ে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ফিল্ম গুলোতে দেখা যায় এই সরকার সেই কাজটিই করতেছে।

Salim
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১:১৭ পূর্বাহ্ন

শাসক যদি ন্যায়বান হন তাহলে আইন নিষ্প্রয়োজন।

Rustom
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৯:৪৪ অপরাহ্ন

এই কাজ বর্বর সমাজ না হলে করা সম্ভব না।

Harunor Rashid
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৮:১৬ অপরাহ্ন

মানবাধিকার লঙ্ঘন কিভাবে হবে? পুলিশ তো ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রথমেই বিষয়টি জায়েজ করে ফেলে!আমজনতা পুলিশকে কখনো মানুষ ভাবে না! তারা পুলিশ হলো মহামানুষ! তারা যা করে, যা বলে সবই আইন! পুলিশের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সবই আইন দারা মোড়ানো! মানবধিকার সংগঠনগুলি নখ দন্তহীন একটি কাগুজে বিড়াল! যাদের অস্তিত্ব আছে কিন্তু ক্ষমতা নেই! আমাদের কাছে পুলিশই সব! ওরাই আমাদের বাঁচায়, ওরাই আমাদের মারে! আমাদের কাছে পুলিশই দেশের রাজা!

Borno bidyan
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৮:০৬ অপরাহ্ন

পুলিশ প্রতিদিন আইন লঙ্ঘন করছে। অন্যদিকে সরকার দেশের লাল বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে !

জহির আহমেদ
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৭:৫২ অপরাহ্ন

আসামি না পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যকে গ্রেপ্তার করার হুকুম যারা দিয়েছে তারা মাফিয়া। জনগনের উচিত এসব মাফিয়াদের পাকড়াও ও আটক করা। কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হয়।

Saif
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৭:৪৬ অপরাহ্ন

উত্তর কোরিয়াতে কেবল ধরা নয়, মেরেও ফেলা হয়।

parvez
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:০২ অপরাহ্ন

আইনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করার অধিকার বাংলাদেশের অবৈধ সরকারের / ইত্যবসরে আদালত ঐ সক্ষমতায় দেশকে দেউলিয়া করে দিয়েছে দিচ্ছে।

Nazma Mustafa
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৫:৩১ অপরাহ্ন

আইনের প্রয়োগ কারি যদি আইন না মানে এবং মানভঅদিকার লঙ্ঘন করে তাহলে সাধারণ মানুষ কি করবে? সন্তাসি কাকে বলে?

[email protected]
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ২:৩৪ অপরাহ্ন

আসিতেছে শুভ দিন দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।

অপেক্ষমান তালিকার ২৭
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

জনগণের সাংবিধানিক অধিকার পদে পদে লংঘন করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে।

ইকবাল কবির
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status