মত-মতান্তর
ইসি’র সংলাপ: কাঙ্খিত সাড়া মিলছে না
হাসান আল বান্না
(১ বছর আগে) ২২ জুন ২০২২, বুধবার, ৭:৫৬ অপরাহ্ন
রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক ও শিক্ষকদের নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সংলাপের আয়োজন করেছিল নির্বাচন কমিশন ইসি। কিন্তু কোনো সংলাপই কাঙ্খিত সাড়া পায়নি ইসি। বরং কোনো সংলাপে আমন্ত্রিত অতিথিদের অর্ধেকের বেশি অনুপস্থিত ছিলেন। নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না ঘটলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে তারা যাবে না, সেকারণে নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে তারা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংলাপ থেকে দূরে থাকছে দলটি। এই নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত সংলাপে এদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর নয়া কমিশন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকদের নিয়ে একাধিক সংলাপের আয়োজন করে। কিন্তু কোনো সংলাপেই ইতিবাচক সাড়া পায়নি নির্বাচন কমিশন ইসি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে কিনা সে বিষয়ে মতামত জানতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে ইসি। ১৯শে জুন শুরু হওয়া তিন ধাপের এই সংলাপের
প্রথম দুই ধাপে ২৬টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানায় ইসি।
গত ১৯শে জুন ১৩টি দলকে কারিগরি টিমসহ ইভিএম নিয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানায় ইসি। দলগুলোর মধ্যে ১০টি দলের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। তবে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও আন্দালিব রহমান পার্থ’র বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি এর কোনো প্রতিনিধি অংশ নেয়নি। আর বাকি ১০টি দল অংশ নিলেও তারা কারিগরি বিশেষজ্ঞ টিম নিয়ে আসেনি। শুধু জাকের পার্টি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দলটির আইটি ম্যানেজার নিয়ে এসেছিলেন। দ্বিতীয় ধাপে আমন্ত্রিত ১৩ দলের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল অংশ নেয়নি। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে যেসব দল অংশ নেয়নি, তারা কিন্তু সকলে ২০ দলীয় জোট শরিক নয় বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শরীক নয়। বিরোধী জোটের বাইরে থাকা একাধিক রাজনৈতিক দল ইসির সংলাপে সাড়া দেয়নি। এটি কিন্তু ইসির জন্য একটি ম্যাসেজ।
এরআগে সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাগরিকরাও নতুন ইসির আমন্ত্রণ পেয়ে সংলাপে অংশ নেয়নি। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন এর আগে ১৩ই মার্চ প্রথম দফায় ৩০ শিক্ষাবিদকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তাতে ১৭ জনই সাড়া দেননি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে তৃতীয় দফা সংলাপে ২৩ সম্পাদকসহ ৩৪ সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের মধ্যে ১১ জনই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি। ইসির আমন্ত্রণে যারা সাড়া দেননি তারা হলেন-ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, জাগরণ সম্পাদক আবেদ খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, আমাদের নতুন সময় সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, কালের কণ্ঠ সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, আমাদের সময়ের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার, জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক কামরুল ইসলাম খান, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে যে ২৩ সাংবাদিক সংলাপে অংশ নেন তারা হলেন- ইকবাল সোবহান চৌধুরী, নূরুল কবীর, তাসমিমা হোসেন, আবু সাঈদ খান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাইফুল আলম, বিভুরঞ্জন সরকার, শাহজাহান সরদার, আনিসুল হক, সোহরাব হাসান, অজয় দাশগুপ্ত, দুলাল আহমেদ, হাশেম রেজা, কাজী আব্দুল হান্নান, মাহবুব কামাল, কে এম বেলায়েত হোসেন, শেখ নজরুল ইসলাম, ড. মো. গোলাম রহমান, ফরিদা ইয়াসমিন, আলমগীর মহিউদ্দিন, শ্যামল দত্ত, সৈয়দ আশফাকুল হক ও মোজাম্মেল হোসেন।
সামনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে কার্যপদ্ধতি কেমন হবে, সেটি ঠিক করতে দ্বিতীয় দফায় সংলাপের ডাক দিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। যেখানে সংলাপে ৪০ জনের মধ্যে অংশ নেয়নি ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। ৪০ বিশিষ্ট নাগরিককে এই সংলাপে আমন্ত্রণ করা হলেও পরে একজনকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। ফলে ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে ১৮ জন এ সংলাপে অংশ নেন। চলতি বছরের ২২শে মার্চ কাজী হাবিবুল আউয়াল এর নেতৃত্বাধীন কমিশন এই সংলাপের আয়োজন করেন। ২২শে মার্চের ওই সংলাপে আমন্ত্রিতদের অর্ধেকেরও বেশি বিশিষ্ট নাগরিক ইসিকে পাত্তা দেয়নি।
এদিকে গত ১৫ই জুন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়েও নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রভাবখাটানোর জন্য কুমিল্লার একজন সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়া নির্দেশ দিয়েছিল ইসি। কিন্তু নির্বাচনের পর ওই এমপি আইন ভঙ্গ করেনি বলে বক্তব্য দেন সিইসি। এতে নানা হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। তৈরি হয় নানা প্রশ্নেরও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাজনে নানা মন্তব্য করছেন এ নিয়ে। যদি তিনি অনিয়ম না করে থাকেন তাহলে কেনো তাকে এলাকা ছাড়তে নোটিশ করা হয়েছিল? নাকি কোনো পেশি শক্তির চাপে সিইসি তার অবস্থান পাল্টে নিরপধানের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তাছাড়া কুমিল্লার নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক ফলে এগিয়ে ছিলেন মনিরুল হক সাক্কু, কিন্তু চূড়ান্ত ফলে দেখা যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৩৪৩ ভোটে জয়ী। ভোটের এই ফল নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন ফল পরিবর্তনের। এ পরিস্থিতিতে ইসির সামনের পথ পাড়ি খুব সহজ হবে কী?
লেখক: হাসান আল বান্না, সংবাদকর্মী।