শরীর ও মন
পায়ের পাতা বা গোড়ালি (এডিমা) ফুলে গেলে
ডা. মো. বখতিয়ার
১১ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবারসারাদিন বিভিন্ন কাজের জন্য ছুটাছুটির জন্য শরীরের সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে পায়ের ছুটাছুটি ছাড়াও অফিসে একনাগাড়ে বসে কাজ করার কারণে। যার ফলে অনেকেরই পায়ের পাতা ফুলে গিয়ে যন্ত্রণা শুরু হয়। এই সমস্যার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে ভেনাস ইনকম্পিটেন্স-এর (Venus Incompetence) মতো জটিলতা। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলা হয় এডিমা। এটির অনেকগুলো কারণ এবং লক্ষণ রয়েছে। আজ আমরা আপনাকে এডিমা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবো। যাতে আপনি এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারেন এবং যদি আপনি দেখেন ভুগছেন তবে আপনি এডিমা সমস্যাটি ঠিক করতে পারেন।
এডিমা হলো শরীরের কিছু অংশে প্রদাহজনিত সমস্যার নাম। এটি সাধারণত পা, হাঁটু এবং গোড়ালিগুলোতে হয়। এই সমস্যাটি বেশির ভাগ গর্ভবতী মহিলাদের এবং বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আপনি এটি থেকে নিরাপদ। এটি যে কারোর সঙ্গে হতে পারে।
কীভাবে শনাক্ত করা যায়
যদি কোনো ধরনের আঘাত থেকে ফুলে গেলে তবে একে এডিমা বলা যাবে না। এটি সাধারণত পা, গোড়ালি এবং মুখের পাশাপাশি কব্জিতে এডিমা সমস্যা হতে পারে।
এডিমা হওয়ার কারণ
টিস্যুতে আরও তরল হতে শুরু করলে যে কোনো ব্যক্তির শরীরে এই সমস্যা দেখা দেয়। এটি হয় যখন আপনি বসে থাকেন বা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকেন। সাধারণত দাঁড়িয়ে থাকার কারণে দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এসিতে কাজ করার ফলে শরীরে ভিটামিন D3 অভাব হয়। যার ফলে মাসলগুলোও দুর্বল হয়ে যায়। এ ছাড়াও, আপনি যদি খুব বেশি লবণ গ্রহণ করেন বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে, এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়াও, হার্ট ফেইলিওর, লিভার ডিজিজ এবং কিডনি রোগ থাকলে এই সমস্যা হতে পারে। অনেকক্ষণ বসে থেকে যাদের কাজ, নড়াচড়া না করায় তাদের পায়ের পাতা অনেক সময় ফুলে যায়। শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো না হওয়াতেই এই ঘটনা ঘটে। শরীরে জল জমে গেলে পায়ের পাতা ফুলতে পারে। এই কারণে পায়ের পাতা ফুললে নুন খাওয়া কমিয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এক চামচের বেশি নুন খাবেন না। হার্টে সমস্যা থাকলেও কিন্তু পায়ের পাতা ফুলতে পারে। হার্টের সঙ্গে পায়ের পাতার সংযোগ রয়েছে। তাই হার্ট যথেষ্ট রক্ত পাম্প না করলে পায়ের পাতা ফুলতে পারে।
এডিমার চিকিৎসা
এডিমাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার একমাত্র উপায় হলো ওষুধ। সাধারণত চিকিৎসকরা এই সমস্যা হ্রাস করতে ডিউরেটিক নামে একটি ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই ওষুধটি প্রস্রাবের উপায় থেকে তরল এবং লবণ বের করে দিতে কাজ করে। এই ড্রাগটি ওয়াটার পিলস নামেও পরিচিত। তবে, গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। কারণ সময়মতো যদি এডিমা বন্ধ না করা হয় তবে এটি আরও ছড়িয়ে পড়ে, যার কারণে ত্বক প্রসারিত হতে শুরু করে। এ কারণে শরীরে অন্যান্য রোগও দেখা দেয়।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।