অনলাইন
ফেনীতে এখনও পানিবন্দি মানুষ, বিদুৎস্পৃষ্টে প্রবাসীর মৃত্যু
ফেনী প্রতিনিধি
(৩ দিন আগে) ২২ জুন ২০২২, বুধবার, ১:১০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১:১৪ অপরাহ্ন

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। ফুলগাজীতে বন্যার কারণে উপজেলার ৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পরশুরামে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ নিয়ে প্রবেশ করা পানি গ্রাম থেকে নামতে শুরু করলেও নিচু এলাকায় মানুষ এখনও পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল ইসলাম জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজীতে বন্যার কারণে উপজেলার ৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। স্কুল আঙ্গিনায় পানি নেমে গেলে শ্রেণি কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে।
স্কুলগুলো হলো- ফুলগাজীর উত্তর দৌলতপুর একরাম নগর মমতাজ বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়পুর নুরুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম ঘনিয়া মোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিসমত ঘনিয়া মোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৈরাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
উত্তর দৌলতপুর একরাম নগর মমতাজ বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়লেয় প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম জানান, স্কুলের পাশে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের কারণে স্কুলের চারিদিকে পানি থেই থেই করছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশে গত ৩ দিন শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
একই স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমান আহম্মদ বলেন, স্কুলের আঙ্গিনায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে। আমরা স্কুলে যেতে পারছিনা।
এদিকে পরশুরামে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে শফিকুর রহমান (৪৫) নামের এক বাহরাইন প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চিথলিয়া ইউনিয়নে পশ্চিম অলকা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহত শফিকুর রহমান উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের উত্তর সত্যনগর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে। শফিকুর রহমান গত ১০ জুন ছুটিতে বাহরাইন থেকে দেশে এসেছিলেন।
নিহতের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় বাসিন্দা এম শফিকুল হোসেন মহিম বলেন, গত সোমবার দুপুরে পশ্চিম অলকা গ্রামে আলত আলী চৌধুরী বাড়ির পাশে মুহুরি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এ সময় ওই স্থানে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে যায়।
অপরদিকে সোমবারের সৃষ্ট বন্যার পানি মঙ্গলবার রাত থেকে কমতে শুরু করেছে। তবে নিচু এলাকাগুলোর মানুষ এখনও পানিবন্দি রয়েছে।
উত্তর দৌলতপুর গ্রামের সত্তোরধ বৃদ্ধ হালিমা খাতুন বলেন, ঘরের আঙ্গিনায় এখনও একফুট পানি জমে আছে। চুলা জ্বালানো যাচ্ছে না। গতকাল আমি সামান্য মুড়ি-চিড়া পেলেও আমার বিধবা বউটি কিছুই পায়নি।
একই গ্রামের জয়নাল আবেদিন বলেন, মুহুরী নদীর ভাঙা বাদ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় গ্রামের পাকা সড়ক ভেঙ্গে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়রা চেষ্টা করে গাছের গুড়ি দিয়ে সাকো তৈরী করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেছে।
পানি উন্নায়ন বোর্ড, ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন বলেন, ইতিমধ্যে ফুলগাজীর দরবারপুর ইউনিয়নের বরইয়া বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। পানি কিছুটা কমলে বাকি বাঁধগুলো মেরামতে কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনী পৌত্ত সার্কেল তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গৌর পদ সূত্রধর বলেন, ফেনীর মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্থায়ী সমাধানে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল ৭৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটির কাজ শুরু হলে এ অঞ্চলের মানুষকে আর কষ্ট করতে হবে।
জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদুল হাসান জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও অনেক স্থানে ত্রাণের সংকটে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তালিকা করতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পানি এবং ভারী বর্ষণের ফলে গত সোমবার সকালে মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমান ১২৩ সেন্টিমিটার উপরি দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধে চারটি স্থান ভেঙে ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়। বন্যার অতিরিক্ত পানি সরে যেতে সোনাগাজীর মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি গেট খুলে দেওয়া হয়। বিগত দেড় দশক ধরে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১২২ কিলোমিটার অংশে বিভিন্ন স্থান ভেঙে পরশুরাম ও ফুলগাজীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। দুই উপজেলার বাসিন্দারা স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবি জানালেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় থমকে রয়েছে নতুন বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প।