দুই ব্রাজিলিয়ানের গোলে কিংসের জয়

এএফসি কাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের কারণে ৩৮ দিনের বিরতি শেষে গতকাল ফের মাঠে গড়িয়েছে ঘরোয়া ফুটবল লীগ (বিপিএল)। দীর্ঘ বিরতির পর মুন্সীগঞ্জের শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া এই ম্যাচে বলের নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য বিস্তার করলেও রহমতগঞ্জের রক্ষণে সুবিধা করতে পারছিল না কিংস। তবে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় ৩৪তম মিনিটে রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক জিয়াউর লালকার্ড পাওয়ার পর। রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস অ্যান্ড সোসাইটি দুই মিনিটের মধ্যে হজম করে দুই গোল। আর এতেই স্বস্তির জয় নিয়ে প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জয়ের পথে আরও এগিয়ে গেল বসুন্ধরা কিংস। কিংসের দুই গোলদাতাই ব্রাজিলিয়ান- মিগেল ফিগেইরা ও অধিনায়ক রবসন রবিনহো। এ জয়ে ১৬ ম্যাচে শীর্ষে থাকা কিংসের সংগ্রহ ৪১ পয়েন্ট।  এদিন ম্যাচের ৩৪তম মিনিটে ডানদিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা নুহা মারোংকে আটকাতে গিয়ে বক্সের বাইরে এসে হ্যান্ডবল করে বসেন জিয়াউর। রহমতগঞ্জ পরিণত হয় দশজনের দলে। ওয়ালি ফয়সালকে তুলে রাকিবুল ইসলাম তুষারকে পোস্ট সামলানোর দায়িত্ব দেন সৈয়দ গোলাম জিলানী।

বক্সের বাইরে থেকে পাওয়া ওই সেট পিস থেকেই কিংসকে এগিয়ে নেন মিগেল ফিগেইরা দামাশেনো। শট নেওয়ার ভঙ্গি করছিলেন রবসন দি সিলভা রবিনহোও, কিন্তু মিগেলের বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে কাছের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন। তুষার ঝাঁপিয়ে পড়েও পাননি বলের নাগাল। এর একটু পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ হয় রবসনের গোলে। কর্নার কিকের প্রান্ত থেকে ক্রস বাড়ান রিমন হোসেন, মিগেল ডামি করে বল ছেড়ে দিলে বক্সে পেয়ে যান রবসন। বডি ডজে ডিফেন্ডারদের ভড়কে দিয়ে জায়গা করে নিয়ে ডান পায়ের নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। লীগে তার গোল হলো ১২টি।  প্রথমার্ধের শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল রহমতগঞ্জও। কিন্তু মাহমুদুল হাসান কিরণের ফ্রি কিকে সানডে চিজোবার হেড ড্রপ খেয়ে ছুটছিল জালের দিকে, কোনোমতে ঝাঁপিয়ে আটকান কিংস গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। দশ জন নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণ জমাট রাখার দিকে আরও বেশি মনোযোগী হয় রহমতগঞ্জ। এর মধ্যেই সুযোগ পায় কিংস। ৭৬তম মিনিটে মিগেলের ফ্রি কিক ক্রসবারে লেগে গোললাইনের একটু বাইরে পড়ে। ভালো অবস্থায় থাকা মোহাম্মদ ইব্রাহিমও পারেননি ফিরতি সুযোগ কাজে লাগাতে। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে বক্সের ঠিক উপরে ফ্রি কিক পায় রহমতগঞ্জ। সানডের শট বাইরে দিয়ে যায়। এরপর কর্নার থেকেও তারা পারেনি ব্যবধান কমাতে। প্রথম লেগের দেখায় কিংসের ঘাম ছুটিয়ে দিয়ে ৩-২ গোলে হেরেছিল রহমতগঞ্জ। পুরান ঢাকার দলটি ফিরতি লেগে পারল না সেভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে। টানা চার ম্যাচ হারা রহমতগঞ্জ ১৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে অবনমন অঞ্চলের কাছাকাছি। অন্যদিকে বসুন্ধরা অ্যারেনায় শেখ জামালের সঙ্গে লড়াইয়ে দারুণ জয় পায় শেখ রাসেল। ম্যাচের ২৪ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে সতীর্থ ফুটবলার আকিনাদের বাড়িয়ে দেয়া বল পোস্টের খুব কাছে পেয়ে ডান পায়ের শটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকে পরাস্ত করেন রাসেলের ইনজুরি থেকে সেরে উঠা মিডফিল্ডার হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস (১-০)। ৪২ মিনিটে সুলেমান কিং কানফর্মের যোগান দেয়া বলে ডান প্রান্ত থেকে বক্সে ঢুকে বল জালে জড়ান জামালের উজবেকিস্তানের ফরোয়ার্ড ওটাবেক (১-১)। ম্যাচে সমতা আসে। তবে প্রথমার্ধের যোগকরা সময়ে আবারও এগিয়ে যায় শেখ রাসেল। এবারও গোলের পেছনের নায়ক ছিলেন হেমন্ত। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সে বল জড়ান এই ডিফেন্ডার। চলন্ত বলে পা চালিয়ে দেন আইভরিকোস্টের মিডফিল্ডার চার্লস দিদিয়ের। বল চলে যায় শেখ জামালের জালে (২-১)। ৮৭ মিনিটে মিডফিল্ডার মান্নাফ রাব্বির গোলে ব্যবধানটা আরও বাড়িয়ে নেয় শেখ রাসেল (৩-১)। আর এই গোলেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় রাসেলের। হারলেও ১৬ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে রয়েছে শেখ জামাল। জয় পেলেও সমান ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানেই থাকলো শেখ রাসেল।