সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে সমাজের বিভিন্ন সাহিত্যানুরাগীদের মধ্যে সদ্ভাব গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিন বছর আগে শুরু হয়েছিল এক অনন্য প্রয়াস। শুরুতেই দু’বছর কেটে গেল প্রতিকূলতার সঙ্গে যুঝতে। তবুও দুর্নিবার ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করে লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে চলেছে এক স্বপ্নের প্রচেষ্টা। নাম যার ‘অন্বেষা’। একটি উদ্ভাবনী সাহিত্য পত্রিকা। যেখানে প্রচেষ্টা রয়েছে দুই বাংলার সাহিত্যামোদীদের মিলনমেলা ঘটাবার। শুরুটা খুব অভিনব। কলকাতার একটি জনবহুল আবাসনের অধিবাসী, ভিন্ন পেশার সমমনস্ক কয়েকজন সাহিত্যরসিক মানুষ একদিন সংকল্প করলেন যে, সকল অ-সাহিত্যিকদের মধ্যে যে সাহিত্য উদ্ভাবনা নিহিত আছে তাকে প্রজ্বালিত করতে হবে। এরা কেউই অক্ষরজীবী নন, বরং বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত মানুষ- যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, অধ্যাপক, বিজ্ঞানগবেষক ইত্যাদি। জীবনের বিভিন্ন স্তরে পেশাগত দক্ষতায় অপ্রতিরোধ্য হলেও সাহিত্য রচনায় এরা কেউই পেশাদার নয়।
তবুও তারা সংস্কৃতিবান, সাহিত্য-রসিক, সৃজনশীল নাগরিক। তথাকথিত অক্ষরজীবী না হওয়ার কারণে এদের লেখায় কোথায় যেন একটা স্বাচ্ছন্দ্য আছে, নিখাদ সারল্যও আছে। কিন্তু অচিরেই আবাসনের লক্ষণরেখা ভেঙে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্বেষা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হলেন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত গবেষক ও বিশেষজ্ঞ লেখকরাও। সংযোজিত হলো সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি উদ্ভাবনী সাহিত্যক্ষেত্র। ত্রৈমাসিক এই সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশনা কেন্দ্র কলকাতা হলেও এর ব্যাপ্তি শুধু কলকাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, পত্রিকাটির জনপ্রিয়তা আজ বিস্তৃত হয়েছে বাংলাদেশেও। ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী এবং চট্টগ্রামের বহু অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ, গবেষক, চলচ্চিত্রকার, নাট্যকার, চিত্রকর এবং সাহিত্যিকের অক্ষরদান পত্রিকাটিকে আরও সমৃদ্ধ এবং ঋদ্ধ করেছে। অন্বেষা পত্রিকার গৌরবমুকুটে পদ্মাপাড়ের যারা পালক সংযোজন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের অধ্যাপিকা এবং জনপ্রিয় নজরুল সংগীত শিল্পী ড. লীনা তাপসী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার বিভাগীয় প্রধান ড. শহীদ ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র বিষয়ক গবেষক ড. ফাহমিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের অধ্যাপক এবং সংগীত পরিচালক ড. মো. জিয়াউর রহমান (সাইম রানা), চলচ্চিত্রকার ও আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান, চিত্রকর আমিনুল হাসান (লিটু), সাংবাদিক কাজল ঘোষ, ব্লগার মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন, কবি মাহফুজ রিপন, নাট্যকার অপু শহীদসহ আরও অনেকে। এ ছাড়াও লিখেছেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষ, জার্মানির রবীন্দ্র গবেষক ড. মার্টিন ক্যামশেন, সিঙ্গাপুরের রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ডলি ডেভেনপোর্র্ট, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. পিনাকেশ সরকার এবং ভাষাবিদ ড. পবিত্র সরকারের মতো যশস্বী গবেষক ও লেখকেরা। অন্বেষা সম্পাদনায় রয়েছেন শ্রীমতী শ্রীপর্ণা মিত্র।