দেশ বিদেশ
লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে আব্দুল গাফফার চৌধুরী স্মরণসভা অনুষ্ঠিত
খালেদ মাসুদ রনি,বৃটেন থেকে
(৪ দিন আগে) ২১ জুন ২০২২, মঙ্গলবার, ৬:১৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৬:১৮ অপরাহ্ন

বৃটেনে লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও মহান একুশের অমর সংগীতের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী`র স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্মরণসভায় যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম আবদুল গাফফার চৌধুরীর সৃষ্টিকর্ম ধরে রাখতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন।স্মৃতিচারণকালে হাইকমিশনার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আবদুল গাফফার চৌধুরীর একটি অন্যরকম সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি সবসময় আপোসহীন ছিলেন। রাষ্ট্রীয় খরচে আবদুল গাফফার চৌধুরী যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন এবং রাষ্ট্রীয় খরচে তাঁকে শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। মৃত্যুর পর বাংলাদেশে মরদেহ প্রেরণে প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন। তাঁর স্মৃতিতে আবদুল গাফফার চৌধুরী ফাউন্ডেশন ও তাঁর লন্ডনের বাড়িটিকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সে ক্ষেত্রে তিনি লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সহযোগিতা কামনা করেন ।
লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ-এর সঞ্চালনায় গতকাল সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের একটি সেন্টারে স্মরণসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লাব সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী। প্রায় অর্ধশতাধিক অতিথির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত স্মরণসভা শুরু হয় এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। নীরবতা পালনকালে স্ব স্ব ধর্মবিশ্বাস মতে গাফফার চৌধুরীর আত্মার শান্তি কামনা করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য নাজমুল হোসেন এবং তাঁর একুশের গান রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন বিবিসি বাংলার প্রযোজক সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন।
স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাপ্তাহিক নতুন দিন সম্পাদক মহিব চৌধুরী, প্রবীণ সাংবাদিক-কলামিস্ট গাজিউল হাসান খান, বিবিসি বাংলার সাবেক প্রযোজক উদয় শংকর দাশ, লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জনমতের সাবেক সম্পাদক নবাব উদ্দিন, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ, সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক লোকমান হোসেন, সাবেক সেক্রেটারি আবদুল আজিজ, লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও মাসিক দর্পণ সম্পাদক রহমত আলী, স্পেক্ট্রাম রেডিও বাংলার পরিচালক মিসবাহ জামাল, কবি ও ছড়াকার দিলু নাসের, সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক উর্মি মাজহার, চ্যানেল এস-এর চীফ রিপোর্টার ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জুবায়ের, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী হিমাংশু গোস্বামী ও প্রেস ক্লাবের ইভেন্ট এন্ড ফ্যাসিলিটিজ সেক্রেটারি রেজাউল করিম মৃধা।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাপ্তাহিক বাংলা পোস্ট সম্পাদক ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী। সংগীতশিল্পী হিমাংশু গোস্বামীর নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে একুশের গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে স্মরণসভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। স্মরণসভায় স্মৃতিচারণকালে মহিব চৌধুরী বলেন, ১৯৮৭ সালে অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক নতুন দিনের সাথে সম্পৃক্ত হন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তিন বছর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময়ের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন তিনি।
বিবিসি বাংলার সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসাইন গাফফার চৌধুরীর একুশের গান রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে বলেন- ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় সাংবাদিক শফিক রেহমান ও আবদুল গাফফার চৌধুরী ঢাকার রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ প্রতিপক্ষের আক্রমনে রাস্তায় পড়ে যান গাফফর চৌধুরী। পরবর্তীতে ওই দিন রাতেই শফিক রেহমানের বাসায় বসে একুশে ফেব্রুয়ারির গানটি প্রথমে কবিতা আকারে রচনা করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে প্রখ্যাত সুরকার আলতাফ মাহমুদ কবিতাটিতে সুর দেন। তখন থেকেই কবিতাটি একুশে ফেব্রুয়ারির গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
প্রসঙ্গত, আব্দুল গাফফার চৌধুরী গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যূবরণ করেন। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া গ্রামের জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণকারি এ সাংবাদিকের জীবনের ৪৮ বছরই কেটেছে বিলেতে। ২৮ মে শনিবার রাজধানী ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রী সেলিনা আফরোজের কবরের পাশে তিনি সমাহিত করা হয়।