শেষের পাতা
কাজে আসেনি একটিও যমুনার পানিতে ২ হাজার বস্তা জিও ব্যাগ
প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
২১ জুন ২০২২, মঙ্গলবারবন্যা এলেই ভাঙন ঠেকানোর নামে জিও ব্যাগ নদীতে ফেলার হিড়িক পড়ে যায়। বরাবরের মতো এবারো তাই করা হচ্ছে। গেল দুইদিন ধরে বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ফলে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। সেইসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। কিছু এলাকায় ইতিমধ্যেই ভাঙনও দেখা দিয়েছে। সেসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। সেসব ব্যাগ পানির নিচে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে তার ঠিক ঠিকানা নেই। তবুও বস্তা ফেলা হচ্ছে। এতে গেল এক সপ্তাহে প্রায় দুই হাজার ব্যাগে প্রায় ৯ লাখ টাকা নষ্ট হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
সরজমিন সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা এলাকায় নদী ভাঙন ঠেকাতে যমুনা নদীতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। বস্তা ফেলার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা বলছেন, এখন ভরা বন্যার সময়। আমরা বস্তা ফেলছি ঠিকই কিন্তু সেই বস্তা কোথায় পড়ছে তা বোঝা যাচ্ছে না। এভাবে গত কয়েক দিনে সেখানে ২ হাজার বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। ২ হাজার বস্তার বিপরীতে ঠিকাদারকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিল পরিশোধ করবে প্রতি বস্তা ৪৫০ টাকা হারে ৯ লাখ টাকা।
নদীপাড়ের মানুষদের আরও অভিযোগ, বন্যা এলেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের তোড়জোর শুরু হয় বালির বস্তা ফেলার কাজের। শুকনো মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এসব বস্তা সঠিকভাবে ফেললে বেশি কাজে আসতো। ভরা বন্যার সময় পানির নিচে লোক দেখানো কিছু বস্তা ফেলে ইচ্ছেমতো বিল করার অভিযোগও করেছেন এলাকাবাসী।
তারা বলছেন, গভীর পানিতে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানো যাবে না। তাদের অভিযোগ একমাস আগে ইছামারা গ্রামে পুরাতন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পরে। ফলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার আশিক আহম্মেদ বলেন, গেল কয়েকদিনে দেড় থেকে দুই হাজার জিও ব্যাগ সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা এলাকায় নদী ভাঙন ঠেকাতে যমুনা নদীতে ফেলা হয়েছে। ভরা বন্যার সময় কেন ফেলা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্যার সময় কখন কোথায় ভাঙন ধরতে পারে বলা মুশকিল। সেজন্য জিও ব্যাগ প্রস্তুত থাকে। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে এসব বস্তা ফেলেছি।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সারিয়াকান্দি এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল থেকে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, চলমান বন্যায় সব বাঁধ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। ভাঙনের সম্ভাবনা দেখা দিলে আমাদের প্রস্তুতি আছে। তাৎক্ষণিক আমরা জিও ব্যাগ দিয়ে ঝুঁকিমুক্ত করতে পারবো। তিনি বলেন, সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা এলাকায় ইতিমধ্যেই সামান্য পারিমাণ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ঠিকাদাররা এসব ব্যাগ ফেলেছেন। আমরা পরে এসব ব্যাগের মূল্য পরিশোধ করবো। তিনি ব্যাগের পরিমাণ এবং টাকার হিসাব তাৎক্ষণিক দিতে পারেননি।
এদিকে গতকাল বিকাল ৩টার হিসাব অনুযায়ী যমুনা নদীর পানি বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ১৭.২৩ সেন্টিমিটারে ঠেকেছে। যা বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপরে। বাঙ্গালী নদীর পানি ১৫.৮৪ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতের মধ্যেই বাঙ্গালী নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে আগামী ২৪শে জুন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
অপরদিকে, প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। ফলে ভোগান্তিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুকনো খাবার, জ্বালানি , গবাদীপশুর খাবার সংকট দেখা দিকে পারে। এছাড়াও পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে।