বিশ্বজমিন
ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পুলিশের নির্যাতনের যে ভিডিও নিয়ে উত্তাল নেট দুনিয়া
মানবজমিন ডেস্ক
(১ সপ্তাহ আগে) ১৮ জুন ২০২২, শনিবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১:১৯ অপরাহ্ন

সম্প্রতি ভারতে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আন্দোলনে যোগ দেয়া মুসলিম যুবকদের ধরে এনে ইচ্ছামতো পেটাচ্ছে পুলিশ। এরইমধ্যে কোটি কোটি মানুষ এই ভিডিওটি দেখেছেন। শাসক দল বিজেপিরই এক নেতা ভিডিওটি শেয়ার করেছেন। আন্দোলনকারীরা উচিৎ শিক্ষা পাচ্ছে বলে পুলিশের এই মারধরের প্রশংসাও করেছেন তিনি।
বৃটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশে ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় একদল মুসলিমকে মারধরের ভিডিও সেটি। পুলিশের এই নির্যাতন নিয়ে সরব নেট দুনিয়া। ভারতে মুসলিম ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দায় নিয়ে বেশ অনেকবারই কথা বলেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধিতে বিজেপির অনেক নেতার পৃষ্ঠপোষকতার দায় দেখছেন তারা।
এবারও মুসলিমদের পুলিশি নির্যাতনের ভিডিওটি শেয়ার দিতে দেখা গেছে বিজেপি নেতা শলভ ত্রিপাঠিকে। তিনি ক্যাপশনে লিখেন, বিদ্রোহীদের জন্য একটি উচিৎ ‘উপহার’ এটি। ত্রিপাঠি বিজেপির একজন শক্তিশালী রাজনীতিবিদ। যেখানে এই পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, সেই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের তিনি সাবেক গণমাধ্যম উপদেষ্টা।
এই মারধরের ঘটনায় নির্যাতনের শিকার একজন হলেন সাইফ। তার বড় বোন সেই ভিডিও দেখার সময় বলছিলেন, এটা আমার ভাই, ওরা তাকে অনেক মারছে, সে খুব চিৎকার করছে। ভিডিওতে দেখা যায়, দুই ভারতীয় পুলিশ একদল মুসলিমকে মারধর করছে, যাদের মধ্যে জেবার ভাইও রয়েছেন। সাইফের পরিবারের দাবি, শুক্রবার স্থানীয় সময় পাঁচটার দিকে সে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল এক বন্ধুর জন্য বাসের টিকিট কাটতে। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে সাহারানপুর কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। জেবা যখন সেখানে তাকে দেখতে যান, তখন তিনি তার ভাইয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন। তিনি বলেন, মারধরের কারণে তার শরীর নীল হয়ে গিয়েছিল, এমনকি সে বসতেও পারছিল না। বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনার কোনো নিন্দা করা হয়নি।
এদিকে দিল্লির জামা মসজিদে গত জুমার নামাজের পর বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। কলকাতার পাশে বম্বে রোড অবরোধ করা হয়। বিক্ষোভ হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে একটি মসজিদের সামনে মুসল্লিরা পোস্টার-ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ ও স্লোগান দেন। তারা নূপুর শর্মাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। দিল্লি পুলিশের ডিসিপি সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট শ্বেতা চৌহান বলেন, জুমার নামাজের জন্য প্রায় ১৫০০ লোক ওই মসজিদে জড়ো হয়েছিল। নামাজের পরে প্রায় ৩০০ লোক বেরিয়ে নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দালের কটূক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। এই লোকেরা রাস্তায় অনুমতি ছাড়াই প্রতিবাদ করেছে। আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।
মানবাধিকার গ্রুপগুলো বলছে, ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের উপরে আক্রমণ এবং নির্যাতনের ঘটনারও। প্রায়ই বিজেপি নেতারা মুসলিমদের টার্গেট করে সরাসরি কিংবা ইঙ্গিতের মাধ্যমে ঘৃণা ছড়ান।
যদিও বিবিসিকে সাহারানপুর পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা আকাশ টোমার বলেন, এখানে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আপনি যদি স্লো-মোশনে ভিডিওগুলো দেখেন তাহলে দেখবেন সেখানে অন্য জেলার নাম লেখা রয়েছে। তারপরেও তিনি ভিডিওগুলো দেখে এর সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করছেন। যদিও এখানে কেউ যুক্ত থাকেন তাহলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্দোলনে যোগ দেয়া ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। এ নিয়ে সুপারিন্টেন্ডেন্ট কুমার বলেন, শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা কাউকে গ্রেপ্তারের আগে তাদের আন্দোলনে যোগ দেয়ার ফুটেজ দেখিয়ে নেই।
পাঠকের মতামত
Bangladesh Govt. is still silent.