ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরও অনিরাপদ সড়ক!

নাজমুল হুদা
২২ অক্টোবর ২০২৩, রবিবারmzamin

সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। প্রতিবছরই ভারী হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করছেন।  বিশৃঙ্খল সড়কের শৃঙ্খলা কোনোভাবেই ফেরানো যাচ্ছে না। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সাড়া ফেলেছিল দেশজুড়ে। ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছিল কীভাবে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে হয়। এরপর কেটে গেছে পাঁচ বছর। এখনো সড়কে সেই আগের চিত্রই আছে; বরং বেড়েছে আগের চেয়ে প্রাণহানি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনা রোধে আইনের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। দেদারছে চলতে দেয়া হচ্ছে আনফিট গাড়ি।

সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে নিরাপদ সড়ক চাই-‘নিসচা’। ২০১২ সাল থেকে তারা সড়কে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও হালনাগাদ করছে। নিসচা’র তথ্য বলছে- ২০১৮’র নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ওই বছরটিতে ৩ হাজার ১০৩টি দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৬৯৯ জন মানুষের মৃত্যু ও আহত হন ৭ হাজার ৪২৫ জন। তবে এর আগের চার বছর অর্থাৎ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১১ হাজার ৪টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় ১৭ হাজার ১৫৯ জনের। এ ছাড়া আহত হন ৩০ হাজার ১০০ জন। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরও বেড়েছে মানুষের মৃত্যু ও নিহতের সংখ্যা। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরের বছর থেকে অর্থাৎ ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পরের চার বছরে ২০ হাজার ৮৬১টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এসব দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ১১৮ জনের মৃত্যু ও আহত হন আরও ২৭ হাজার ৬২৬ জন মানুষ।  
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা কমাতে হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। অবৈধ যানবাহন ও চালককে আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে এসবের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন মানবজমিনকে বলেন, আমরা যেসব নিয়মনীতির কথা বলে আসছি সেগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে না। যে ওষুধ দিলে রোগ নিরাময় করা হবে, সে ওষুধই নকল। আমরা বলছি সড়কে আনফিট গাড়ি রাখবেন না, তারা রাখছে। সড়কে অবৈজ্ঞানিক গাড়ি বাড়ছে। মোটরসাইকেল বেড়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে রেজিস্ট্রার্ড মোটরসাইকেল ছিল ৭ লাখ, আর এখন ৪২ লাখ। 

তিনি বলেন, আমরা বলেছি চালকদের ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করতে। সেটাও করা হচ্ছে না; বরং পরিবহন সেক্টরের দাবি, ভারী গাড়িতে যদি কেউ হেল্পারি করে তাহলে সেই গাড়িতে তারা পরীক্ষা দিয়ে ভারী গাড়ি নেবে। সড়ককে জানা, আইনকানুন বোঝা, গতি বোঝার একটা বিষয় আছে। সেগুলো বুঝতে গেলে প্রথমে হালকা গাড়ি চালাতে হবে। এগুলোতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আমরা বলেছি ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে হবে। আমরা বলেছি প্রধান সড়কে নছিমন, ইজিবাইক চলবে না। সেগুলো বন্ধ হয় নাই বরং সংখ্যায় আরও বেড়েছে। প্রথমদিকে ঢাকায় মেইন রোডে রিকশা দেখা যেতো না, এখন কিন্তু দেখা যাচ্ছে। আইনকে যদি যথাযথ প্রয়োগ না করা হয় তাহলে হবে না। যেখানে সেখানে বাস থামানো হচ্ছে। যাত্রী ওঠা-নামা করছে। মানুষ রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। কোথাও আইনের প্রয়োগ নেই। শুধু মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয় চোর-পুলিশ খেলার মতো। 

দেশে গাড়ির পরিমাণ আটকে রাখা যাচ্ছে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ মানবজমিনকে বলেন, আমাদের রাস্তা যেমন আছে তেমনই রয়ে গেছে। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব গাড়ি চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। অনেক অবৈধ গাড়ি চলছে। আইন অমান্য করছে গাড়ির চলাকরা।  মোটরসাইকেল বাড়ছে। তাদের বেশি দুর্ঘটনা হচ্ছে। রিকশা দুর্ঘটনার একটা বড় কারণ। তাদের জন্য অন্য চালকরা বিভ্রান্ত হয়ে যায়। চালকরা ওভারস্পিডিং করছে। ওভারটেকিং করছে। ওভারস্পিডিং’র মামলা হাইওয়েতে কোনো কোনো জায়গায় হয়। কিন্তু শহরের মধ্যে ধরা হচ্ছে না। স্পিড-লিমিটও অনেক জায়গায় ঠিক করা হয়নি। কোথাও কোথও হলেও সেটি মানা হচ্ছে না। চালকের দ্রুত চলার মানসিকতা যেমন আছে, তেমন বাসের রেষারেষীও হচ্ছে। এগুলো দূর না করলে আমরা সড়ক নিরাপদ করতে পারবো না। 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status