নির্বাচিত কলাম
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যর্থ কেন?
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
২০ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবারডলার সংকটে আমদানি এলসি বা ঋণপত্র খোলায় বিধিনিষেধ আরোপে পণ্যের দাম বাড়ছে। এলসি খোলা এবং ক্লোজিংয়ের মধ্যে ডলারের বিনিময় হারের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আছে যা পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছে। কিছু আমদানিকারক এই অসঙ্গতিকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা বাড়ানোর জন্য মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতাকে পুঁজি করে বাজারে পণ্য ছাড়তে বিলম্ব করেছে। মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশা সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছে। কাঁচামাল ও মূলধন আমদানির সংকোচন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে সাপ্লাই সাইডে সংকট তৈরি করেছে। একে বিষিয়ে তুলছে নিম্ন মজুরির সমস্যা। পোশাক শিল্পে চীনের ৩০৩ ডলার, ভারতের ১৭১ ডলার, ভিয়েতনামের ১৭০ ডলারের গড় মজুরির বিপরীতে বাংলাদেশের গড় মজুরি মাত্র ৭২ ডলার। এটা সুস্পষ্ট সংকট যা সমাধান না করলে রপ্তানি আয় টেকসই হবে না। অন্যদিকে চলমান অর্থনৈতিক সংকটে ক্রয়ক্ষমতা কমায়, বেকারত্ব বাড়ায়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে আসায় অর্থনীতির ডিমান্ড সাইডেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। সবমিলে বাংলাদেশের অর্থনীতির সাপ্লাই এবং ডিমান্ড উভয় সংকটে পড়েছে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৪ শতাংশ, যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিবিএস’র ‘ডেটা কোয়ালিটি’ সংশয়যুক্ত বলে বাস্তব মূল্যস্ফীতি আরও বেশি হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিজ উদ্যোগে কিংবা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে কয়েকটি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে রেপো এবং রিভার্স রেপো রেটগুলোর সমন্বয়, ব্যাংকিং সুদের হারে প্রান্তিক বৃদ্ধি এবং উচ্চ ট্রেজারি বিল সুদের হার। প্রশ্ন উঠেছে, এই নীতিগুলো কি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জটিল সমস্যাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট?
প্রকৃতপক্ষে এসব নীতি ফল আনতে ব্যর্থ হবে এবং এসব ব্যর্থতা কারও বিস্ময় জাগাবে না। কারণ যাদের ঋণ করে ফেরত দিতে হয় না, তার কাছে ৭% ব্যাংক ঋণের সুদ আর ১৪% সুদের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। আর যে লোক ব্যাংক ঋণ নিয়ে সেটা মেরে দিয়ে, হুন্ডির স্থানীয় মানি চ্যানেলে টাকা ঢুকায় এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে রেখেই পাচার করে তার কাছে ১১৮ টাকায় ডলার কেনা আর ১৩৫ টাকায় ডলার কেনা, প্রায় একই। ‘এট দ্য ভেরি ফাস্ট পয়েন্টে’ সোর্স ভুল হাতে ব্যাংক ঋণ দেয়ার প্রক্রিয়া, দখলদার মালিকানায় ব্যাংক হস্তান্তরের প্রক্রিয়া এবং পাচার সহযোগী ব্যাংকের মালিক চেয়ারম্যান পরিচালক চক্রকে থামাতে না পারলে কোনো কাজ হবে না। বিষয়টি মুদ্রানীতির নয়, বিষয়টি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের। জবাবদিহি না ফিরলে, অনিয়ম কেলেঙ্কারির শক্ত শাস্তি না হলে মুক্তবাজার ব্যবস্থা বাংলাদেশে ফাংশন করবে না। ততদিন মুদ্রানীতি কিংবা নীতি সিদ্ধান্ত কোনো ফল দেবে না।
অর্থাৎ বাংলাদেশকে একটি মুক্তবাজার অর্থনীতি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হলেও বাস্তবে, দেশের বাজার সবসময় চাহিদা ও সরবরাহের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে সাড়া দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজারের গতিশীলতা এবং সরবরাহ সাইডের সংকোচন প্রসারণে বাংলাদেশের বাজারে প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করা যায় না। করোনার পর বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে কমেনি। কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ব্যাপক কমালেও এখানে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ তেমন বাড়েনি, ন্যূনতম উন্নতি হয়েছে মাত্র। ব্যাংকগুলো এখানে খেলাপিদেরই ঋণ দিতে পছন্দ করে। বৃহত্তর ঋণগ্রহীতারা বিদেশে তহবিল স্থানান্তর করায় ১৫ ব্যাংক মূলধন সংকটে আছে, প্রায় ২৭ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ভয়াবহ ঝুঁঁকিতে পৌঁছে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অন্য কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব (ট্রান্সমিশন ল্যাগ)। এই সময়ে, বিভিন্ন সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনুঘটক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ, ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার অবমূল্যায়ন সময়মতো না করে এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং-এ সময়মতো নজরদারি না করায়, বিকল্প চ্যানেল যেমন অনানুষ্ঠানিক ‘হুন্ডি’ বাজারের নতুন নতুন ডিজিটাল চ্যানেল উদ্ভবের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল ই-কমার্স প্ল্যাটফরমগুলোকে অবৈধ হুন্ডির চ্যানেলে যুক্ত করেছে। এই চ্যানেলগুলো পাচারকারীদের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা পূরণ করছে এবং আনুষ্ঠানিক রেমিট্যান্স প্রবাহকে হ্রাস করে ফেলেছে।
বাংলাদেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতির সমস্যা জ্বালানির দাম ২১-২২ অর্থবছরে ৯ মাসের মধ্যেই ৪২-৬৫% বৃদ্ধি করা হয়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সমস্যার সমাধান চাইলে, কৌশলগত অর্থনৈতিক পণ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানির দাম কমাতে হবে, নইলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি গড় মূল্য ৭২ থেকে ৭৫ ডলারে ছিল বিগত এক বছর। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এবং এখানকার শিল্প উৎপাদন অর্থাৎ বাজারকে এই সুবিধা নিতে দেয়া হয়নি, কারণ সরকার তিন স্তরে ৩৩% শুল্কের পরে চতুর্থ স্তরে গিয়ে প্রাথমিক জ্বালানিতে লাভ তোলে অর্থাৎ প্রতিযোগিতাহীন জ্বালানি বিক্রি রাজস্ব আয়ের বড় খাত।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়াতে হয়, এতে ব্যবসার অর্থ ধার এবং বিনিয়োগ ব্যয়বহুল হয়ে সামগ্রিক চাহিদা কমিয়ে মুদ্রাস্ফীতির গতি কমাতে সাহায্য করে। সরকার কাজটা দুটি বছর আটকে রেখেছিল। সরকারি বন্ড বিক্রি করে বাজার থেকে অর্থ প্রত্যাহার করে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমানো হয়, সরকার সুদের হার না বাড়ানোয় কাজটা করতে পারেনি। উল্টো টাকা ছাপিয়ে অর্থপ্রবাহ বাড়িয়েছে। এখন রেপো এবং রিভার্স রেপো বাড়িয়েছে, স্বাগত জানাই। কিন্তু যথাসময়ে না করার এ দিয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হবে না, কারণ তার সংকটের আভাস পেয়ে আগেই বেসরকারি ঋণপ্রবাহ কমে গেছে (৯.৪%)।
খেলাপি ঋণ মাত্র ৩ মাসে বেড়েছে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা, ৬ মাসে ৩৫ হাজার কোটি। মোট ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর সরকারি-বেসরকারি কৌশল বাদ দিলে বাস্তবে চার লাখ কোটি টাকা খেলাপি! খেলাপি ঋণ বাড়ছে বলে ‘মানি আউটসাইড ব্যাংক’ পরিস্থিতি অনেকাংশে অনিয়ন্ত্রিত থাকছে। ২১-২২ এবং ২২-২৩ অর্থবছরে কমপক্ষে ২ লক্ষ কোটি টাকা ছাপানো হয়েছে, এই টাকা মার্কেট থেকে তুলতে হবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার উপায় জানে না। জানলে ব্যাংক আমানতে সুদের হার মূল্যস্ফীতির বিপরীতে যৌক্তিক হারে অবস্থান করতো। সরকারের বন্ডের সুদ বেড়েছে ফলে তারা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ করতে পারছে। এসব দিয়ে আগের ঋণের সুদ দিবে, হাতির সাইজের আমলাতন্ত্র পালবে।
সবচেয়ে দরকারি ব্যাংক আমানতের সুদ বাড়ছে না, ৪-৫% শতাংশেই আটকে আছে। ব্যাংক আমানতের দ্বিগুণ সুদ চলছে ট্রেজারি বিলে! স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতির সমস্যা কাটছে না! সরকার নিজের চলার রাজস্ব আর ঋণ, তার নিজস্ব বলয়ের ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের সস্তায় টাকা হাতানোর পথ ও পদ্ধতি ছাড়া অন্য কিছুতেই মুদ্রানীতির প্রতিফলন করে না!
গত ২ বছরে প্রতি মাসেই রিজার্ভ গড়ে ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলার করে কমেছে। সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন, মাত্র ২ মাসে ২০০ কোটি ডলার থেকে নেমে হয়েছে ১৩৪ কোটি ডলার। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ, গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় কমেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্যে তৈরি হওয়া নতুন অস্থিতিশীলতায় জ্বালানির দাম বাড়তে পারে, ফলে জ্বালানি কিনতে আরও বেশি রিজার্ভ ক্ষয় হলে, নতুন দফায় ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ সংকট দেখা দেবে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়লে আবারো নতুন স্তরের মূল্যস্ফীতির দেখা মিলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি আউটসাইড ব্যাংকের হিসাবে ভুল আছে, আপনি যখন ২ অর্থবছরে ২ লাখ কোটি টাকা রিজার্ভ মানি প্রিন্ট করেন, এটি প্রবাহিত হয়ে/ঋণে গিয়ে কতোটা গুণপ্রবাহ তৈরি করে সেই হিসাব আপনি পাবেন না! অর্থাৎ প্রিন্টেড মানি কতোগুণ বিস্তৃত অর্থ তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক তা জানে না! ব্যাংকিং সিস্টেমের বাইরের মুদ্রা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা কেন্দ্রীয় আর্থিক নীতির সিদ্ধান্তগুলোকে অক্ষম করে তুলছে। পাশাপশি আছে মূল্যস্ফীতি পরিমাপের সেকেলে পদ্ধতি, প্রকৃত মূল্যস্ফীতি না জানলে মুদ্রানীতি ব্যর্থ হওয়া অবধারিত। খোদ ব্যাংকের বান্ডেলেই জাল নোটের বিস্তারের অভিযোগ আছে বলে,সবমিলেই অর্থপ্রবাহের হিসাবে গরমিল আছে। এসবকে না ধরলে ব্যাংকের ভেতরে ও বাইরে তারল্য বিন্যাস ঠিক হবে না এবং মূল্যস্ফীতিও কমবে না।
ডলার সংকটে আমদানি এলসি বা ঋণপত্র খোলায় বিধিনিষেধ আরোপে পণ্যের দাম বাড়ছে। এলসি খোলা এবং ক্লোজিংয়ের মধ্যে ডলারের বিনিময় হারের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আছে যা পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছে। কিছু আমদানিকারক এই অসঙ্গতিকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা বাড়ানোর জন্য মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতাকে পুঁজি করে বাজারে পণ্য ছাড়তে বিলম্ব করেছে। মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশা সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছে।
কাঁচামাল ও মূলধন আমদানির সংকোচন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে সাপ্লাই সাইডে সংকট তৈরি করেছে। একে বিষিয়ে তুলছে নিম্ন মজুরির সমস্যা। পোশাক শিল্পে চীনের ৩০৩ ডলার, ভারতের ১৭১ ডলার, ভিয়েতনামের ১৭০ ডলারের গড় মজুরির বিপরীতে বাংলাদেশের গড় মজুরি মাত্র ৭২ ডলার। এটা সুস্পষ্ট সংকট যা সমাধান না করলে রপ্তানি আয় টেকসই হবে না। অন্যদিকে চলমান অর্থনৈতিক সংকটে ক্রয়ক্ষমতা কমায়, বেকারত্ব বাড়ায়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে আসায় অর্থনীতির ডিমান্ড সাইডেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। সবমিলে বাংলাদেশের অর্থনীতির সাপ্লাই এবং ডিমান্ড উভয় সংকটে পড়েছে।
ভুল এবং সামঞ্জস্যহীন নীতির পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণেও পণ্য উৎপাদন সরবরাহ ব্যাহত এবং উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। এটিও মূল্যস্ফীতিকে ট্রিগার করবে। আরও মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশাও মূল্যস্ফীতি বাড়ায়! অস্বস্তিকর অর্থনৈতিক রাস্তা তাই সিট বেল্ট বাঁধার আগাম বার্তা দেয়।
মূল্যস্ফীতির সময়ে বড় কাজ গরিব ভোক্তাদেরকে প্রণোদনা বাড়ানো, কিন্তু রাজস্ব ও ঋণের অর্থ আগের ঋণের সুদ আমলাতন্ত্র আর উন্নয়ন প্রকল্পের বর্ধিত খরচের পেছনে যাচ্ছে বলে সরকার নাগরিকদের মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে খারাপ প্রভাব কিংবা খাদ্য পুষ্টি স্বাস্থ্যের সংকট থেকে রক্ষা করতে সামাজিক সুরক্ষা সাহায্য বাড়াতে পারছে না।
লেখক: টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক।
ই-মেইল: [email protected]
Everyone should read this article