শরীর ও মন
টেনিস এলবোজনিত কনুই সমস্যা বা ব্যথা হলে এক্সারসাইজের মাধ্যমে প্রতিরোধ
ডা. মো. বখতিয়ার
১৭ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবারটেনিস এলবোজনিত সমস্যা হলে এক্সারসাইজের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ ধরনের ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় বা নিতে হবে। এক্সারসাইজের মাধ্যমে মাংসপেশি ও টেন্ডনের প্রসারণ ক্ষমতা বাড়ানো হয়। তাতে হঠাৎ করে যদি কোনো চাপ লাগে, সেটার সহনীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, শরীরের জয়েন্টের মুভমেন্ট বা নড়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হঠাৎ কোনো চাপ পড়লে তার সহনীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, আবার আমাদের শরীর থেকে এন্ডোরফিন নামক একটি কেমিক্যাল রিলিজ হয়, যা ন্যাচারাল ভাবে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আবার এক্সারসাইজের মাধ্যমে এনকেফলিন নামক একটি পদার্থ রিলিজ হয়, যেটা আমাদের মানসিকভাবে চাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই ব্যথা কমানোর জন্য এক্সারসাইজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই সমস্যায় এক্সারসাইজের মাধ্যমে মাংসপেশিগুলোতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং মাংসপেশির রক্ত চলাচলের সঙ্গে সঙ্গে টেন্ডনগুলোতে ও নিউট্রিশন উপাদানগুলো সরবরাহ করতে পারে এবং টেন্ডন ও লিগামেন্টস ভালো থাকে। তাই টেনিস এলবো প্রতিরোধে এক্সারসাইজের ভূমিকা অপরিসীম। খুবই সাধারণ দু’টি এক্সারসাইজ আমাদের টেনিস এলবো থেকে রক্ষা করতে পারে।
১. প্রথম যে এক্সারসাইজ, সেটি হচ্ছে আপনার হাত কনুই এবং কব্জি সোজা করে বুক বরাবর রাখুন। এবার কব্জি বরাবর হাতের তালু নিচের দিকে নামান এবং ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এভাবে আবার সোজা করুন এবং কব্জি বরাবর হাতের তালু ওপরের দিকে উঠে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এভাবে প্রক্রিয়াটি পাঁচ থেকে ১০ বার করার চেষ্টা করুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ব্যথা হলে এক্সারসাইজ করা যাবে না। এবার আপনার হাত মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় বুক বরাবর এখন কব্জি বরাবর হাতের মুষ্টি নিচের দিকের নামান ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। একইভাবে কব্জি বরাবর মুষ্টিবদ্ধ হাত উপরের দিকে ঘুরান এবং ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এবার হাত সোজা করুন। কব্জি বরাবর ডান ও বাম দিকে ঘোরান। ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এভাবে প্রক্রিয়াটি পাঁচ থেকে ১০ বার করার চেষ্টা করুন।
২. আরেকটি এক্সারসাইজ হচ্ছে হাতে এক কেজি পরিমাণ একটি ভার রাখুন। হাতে ভার রাখা অবস্থায় হাত সোজা করে কব্জি বরাবর হাত নিচের দিকে নামান এবং পাঁচ সেকেন্ড ধরে রাখুন এর ওপরের দিকে উঠিয়ে এবং ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এভাবে প্রক্রিয়াটি সাবধানতার সঙ্গে পাঁচ থেকে ১০ বার করতে পারেন। এক্সারসাইজের সময় মনে রাখতে হবে, ব্যথা হলে এক্সারসাইজ করা যাবে না। কারণ যদি ব্যথা অবস্থায় এক্সারসাইজ করা হয়, তাহলে ব্যথার তীব্রতা আরও বাড়তে পারে এবং যেই ইনজুরি আছে সেটাও আরও গভীর হতে পারে।
টেনিস এলবোতে আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রথমেই আমরা যেটি করি সেটি হচ্ছে রেস্ট দেয়া বা এই এলবোকে বিশ্রাম দেয়া। এ কাজটি যেভাবে করতে পারেন সেটি হচ্ছে আপনার এলবোতে নাড়াচাড়া বা মুভমেন্ট হয় এমন কাজ বন্ধ রাখা। যারা খেলাধুলা করেন বা টেনিস খেলেন, তারা এ খেলা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখুন। যারা ঘরের কাজ করেন তারা কাপড় পরানো বা নাড়াচাড়ার কাজ বন্ধ রাখুন। যারা রঙের কাজ করেন সেই কাজগুলোকে বন্ধ রাখতে হবে। যারা কাঠের কাজ করেন সেই কাজগুলোকে বন্ধ রাখতে হবে।
এই ব্যথায় কী ওষুধ খাওয়া যেতে পারে? প্রথমেই যেটা বলে নেয়া দরকার সেটি হচ্ছে, আপনি ব্যথার জন্য মূল কারণের চিকিৎসা না করে যদি ব্যথার ওষুধ খেতে থাকেন তাহলে সাময়িক ব্যথা কমতে পারে। কিন্তু ব্যথার মূল কারণ থেকেই যাবে। যে কারণে আপনাকে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার ওষুধ খেতে হবে। এছাড়া আপনার সমস্যাটি যাবে না। আবার দীর্ঘমেয়াদি যারা ব্যথার ওষুধ খান, তাদের ক্ষেত্রে প্রেসার বেড়ে যাওয়া, কিডনির সমস্যা ও আলসার জাতীয় সমস্যা হতে পারে।
তাই একটি পরামর্শ ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ না খাওয়া। ব্যথার চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ হলো প্যারাসিটামল। তবে প্যারাসিটামল একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর কিছু নির্দিষ্ট দিনের জন্য আপনাকে খেতে হবে। তা না হলে সাময়িক প্যারাসিটামল খেলে বা অনিয়মিতভাবে প্যারাসিটামল খেলে ব্যথার কোনো কাজ হবে না। কারণ আমরা ব্যথার চিকিৎসার জন্য ব্যথার যে চক্র সেটিকে ভেঙে দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর কিছুদিনের জন্য ব্যথার ওষুধ প্যারাসিটামল খেলে কার্যকরী হয়। তবে সঠিক কারণ নির্ণয় করার জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।
লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক
খাজা বদরুদদোজা মডার্ন হাসপাতাল
সফিপুর হাইওয়ে সংলগ্ন, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।
ই-মেইল: [email protected]