শরীর ও মন
অটিজম চিকিৎসার সেকাল ও একাল
ডা. এম এ হক, পিএইচডি
৩১ জুলাই ২০২৩, সোমবারঅটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার এক ধরনের নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার; যেখানে অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা একসঙ্গে ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিপূর্ণ মানসিক বৃদ্ধি ঘটে না। এই ধরনের নিউরোলজিক্যাল সমস্যার কারণে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়; যার সঙ্গে মানসিক বিকাশগত জটিলতাও প্রকাশ পায়। এই সমস্যার কারণে জন্মের ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর আচরণগত এবং মানসিক সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়। যার ফলে, কথা বলা বা সঠিক শব্দ উচ্চারণ করা, নতুন জিনিস বুঝতে পারা বা শেখা কিংবা সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা শিশুর জন্য বেশ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
লক্ষণ:
অটিজমের লক্ষণসমূহ শৈশব থেকেই প্রকাশ পেতে থাকে। মা-বাবা সতর্ক হলে তা সহজেই বুঝতে পারেন। স্বাভাবিক একটি শিশু এক বছর বয়সে অর্থবহ অঙ্গভঙ্গি করতে পারে, ১৬ মাস বয়স থেকে একটি শব্দ বলতে পারে এবং ২ বছর বয়সে ২ শব্দের বাক্য বলতে পারে কিন্তু অটিজম আক্রান্ত শিশুর মধ্যে এসব আচরণ দেখা যায় না। তার সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায় না। অনেক শিশু আবার ১ থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত খেলাধুলা, কথাবার্তা সব ঠিক থাকে কিন্তু হঠাৎ করে কথা ও সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। এটাকে বলা হয় রিগ্রেসিভ অটিজম। নাম ধরে ডাকলে সাধারণ শিশু সাড়া দেয়, কিন্তু অটিজমে আক্রান্ত শিশুর নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দেয় না। এ ধরনের শিশু আপন মনে থাকতে পছন্দ করে। সবচেয়ে বড় কথা, এরা কারও চোখের দিকে তাকায় না। কারও দিকে তাকিয়ে হাসে না কিংবা আদর করলেও ততটা সাড়া দেয় না। সাধারণভাবে অটিস্টিক শিশুরা একই কথা বারবার বলে এবং একই কাজ বারবার করতে পছন্দ করে। অনেক অটিস্টিক শিশুর কিছু মানসিক সমস্যা যেমন অতি চঞ্চলতা, অতিরিক্ত ভীতি, মনোযোগের সমস্যা, ঘন ঘন মনের অবস্থা পরিবর্তন হওয়া, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি থাকে। অটিস্টিক শিশুরা বড় হয়েও স্বাভাবিকভাবে জীবন চালাতে পারে না।
চিকিৎসার সেকাল ও একাল:
মাত্র কয়েক বছর পূর্বেও অটিজমের নাম শুনলে সকলেই ঘাবড়ে যেতেন। চিকিৎসকের নিকট গেলে তারা বলতেন এর কোনো চিকিৎসা নেই। যে সকল শিশুরা অতিরিক্ত চঞ্চল এবং যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে এমন শিশুদের ঘুম ও শান্ত থাকার জন্য কিছু মেডিসিন দেয়া হতো এবং বলা হতো এর সঠিক কোনো চিকিৎসা না থাকায় আপনারা শিশুকে থেরাপি দেন যদি কোনো উপকার হয়। এ সকল চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল না পেয়ে অভিভাবকরা রীতিমত হতাশ হতেন। তখনো পর্যন্ত অটিজম চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতার কথা খুব বেশি প্রচার হয় নি। এ কারণে অটিজম চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির ব্যাপক সফলতা মানুষ তথনো পর্যন্ত জানতে পারেনি।
বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ভিন্ন। বর্তমানে অটিজম চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির ব্যাপক সফলতা দেখে অভিভাবকগণ এ বিষয়ে আর পূর্বের মতো চিন্তিত নন। এখন অটিজমের ভালো মানের চিকিৎসা রয়েছে। শুধু মাত্র ‘ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্স সেন্টার’-এ প্রতি মাসে কয়েকশত শিশু চিকিৎসা গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছে। আমাদের দেশে যে পরিমাণ অটিজম শিশু রয়েছে সে অনুপাতে ভালো মানের কার্যকরী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান না থাকায় অনেক শিশুই চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে আমাদের দেশে এ ধরনের চিকিৎসার আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন।
সর্বোপরি, সেকালে যেমন অটিজমের কোনো চিকিৎসাই ছিল না; একালে এর ভালো মানের চিকিৎসা রয়েছে। ফলে, যারা চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে তারা সহজেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারছে।
লেখক: পিএইচডি; এম. ফিল; ডিএইচএমএস। চিকিৎসক ও গবেষক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০ ৩১০