ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

লোডশেডিং আরও বেড়েছে, ফার্নেস অয়েল মজুত নিয়েও শঙ্কা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
৮ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

দেশে প্রতিদিনই বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়ছে। বুধবার ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসা লাইন ট্রিপ করায় লোডশেডিং আরও বেড়ে যায়। কয়লার অভাবে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে পুরো দেশে। এমন অবস্থায় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরাও  ধুঁকছেন কেন্দ্র পরিচালনার জ্বালানি নিয়ে। অর্থ সংকট ও বিদেশ থেকে জ্বালানি আনতে না পারায় যে কোনো সময় সংকট তৈরি হতে পারে এমনটি তারা আশঙ্কা করছেন। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের সংগঠনের দাবি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে এই মুুহূর্তে তাদের পাওনা ১৮ হাজার কোটি টাকা। পিডিবি এই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তারা জ্বালানি কিনতে পারছেন না। পিডিবিকে ফার্নেস অয়েল এনে দেয়ার কথা বলা হলেও তারা তা দিতে পারছে না। এ কারণে ফার্নেস অয়েলের মজুত কমে আসছে।  

সূত্র মতে, গতকালও ১৫ থেকে ১৬ হাজার বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে দুপুর ১২টা দিকে উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার মেগাওয়াট।

বিজ্ঞাপন
তাতে দেখা যায়, ৪ থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। অর্থাৎ এই পরিমাণ বিদ্যুৎ লোডশেডিং করতে হচ্ছে দেশে। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড-এর (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কাওসার আমীর আলী মানবজমিনকে বলেন, তার এলাকায় বিকাল ৩টা থেকে ৪টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৪৭৬ মেগাওয়াট। কিন্তু ওই সময় চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল ৩৩৫ মেগাওয়াট। 

ওদিকে সামনের দিনগুলোতে লোডশেডিং আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের কাছে তাদের বকেয়া পাওনা ১৮ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা না পাওয়ায় এবং ডলার সংকটের কারণে তারা পর্যাপ্ত জ্বালানি পাচ্ছেন না। বিপিসিও চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি দিতে পারছে না। 

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চাহিদা অনুযায়ী বিপিসি ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করতে পারছে কিনা জানতে চাইলে পিডিবি’র সদস্য (উৎপাদন) এসএম ওয়াজেদ আলী সরদার মানবজমিনকে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী ফার্নেস অয়েল পাচ্ছি। তাহলে জ্বালানি তেলে পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ এবং বিদ্যুৎ ঘাটতি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিজিসিবি বলতে পারবে। ফার্নেস অয়েলের চাহিদা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পরিসংখ্যান দেয়া সম্ভব না। পিডিবি’র অপর সদস্য (বিতরণ) মো. মিজানুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ দিতে পারছি না। তাই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ২ থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
এদিকে চলতি বছর সরকারি- বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফার্নেস অয়েল সরবরাহের জন্য বিপিসিকে ৭ লাখ ৬৫ হাজার টনের চাহিদা দেয় পিডিবি। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৫৩ হাজার ৫শ’ টনের বিপরীতে ৬৯ হাজার ৮৯৭ টন এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৩ হাজার ৩শ’ টনের বিপরীতে ৫৪ হাজার ৪০৬ টন ফার্নেস অয়েল নেয় পিডিবি। গত ২৩শে মার্চ পিডিবিকে নতুন করে চিঠি দিয়ে আগের দুই মাসের সরবরাহ করা চাহিদার অবশিষ্ট ৬ লাখ ৪০ হাজার টনের পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও ২ লাখ ৮০ হাজার টনসহ মোট ৯ লাখ ২০ হাজার টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা দেয় পিডিবি। এর মধ্যে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭ মাসে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আইপিপি) জন্য ২ লাখ ৮০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহের চাহিদা দেয়া হয়। সূত্র জানায়, মে মাসের শেষ সপ্তাহেও আরেকটি চাহিদা দেয় পিডিবি। 

এদিকে আইপিপিগুলোর জন্য এপ্রিল মাসে ৭৫ হাজার টন, মে মাসে ৫৫ হাজার টন, জুন মাসে ৫৫ হাজার টন, জুলাই মাসে ৪৫ হাজার টন, আগস্ট মাসে ১৫ হাজার টন, সেপ্টেম্বর মাসে ২০ হাজার টন এবং অক্টোবর মাসে ১৫ হাজার টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা দেয়া হয়। পাশাপাশি এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ৬ লাখ ৪০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহের জন্য বিপিসিকে অনুরোধ করে পিডিবি।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে পিডিবির চুক্তি অনুযায়ী নিজেদের আমদানির পাশাপাশি ১০-২০ শতাংশ ফার্নেস অয়েল বিপিসি থেকে নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেন তারা। শর্ত অনুযায়ী ১০ শতাংশ ফার্নেস অয়েল বিপিসি থেকে সরবরাহ করার প্রয়োজন হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার সংকট এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে অনীহায় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিজ দায়িত্বে ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারছে না। তাই বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি সংকটের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাস ওয়ারি চাহিদা অনুযায়ী ফার্নেস অয়েল সরবরাহের জন্য বিপিসিকে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

মার্চ মাসে পিডিবি চাহিদা দিলেও সে অনুযায়ী ফার্নেস অয়েল সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিপিসি। এরমধ্যে জুন মাসের শুরুতে ফার্নেস অয়েল আমদানির কোনো চালান দেশে আসছে না। এতে ফার্নেস অয়েলের মজুতও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এ নিয়ে বিপিসির কেউ মুখ খুলছে না। এপ্রিল মাসে এক লাখ ৪০ হাজার টন এবং মে মাসে এক লাখ ৩০ হাজার টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা ছিল পিডিবি’র। এর মধ্যে মে মাসেও ৭৬ হাজার টনের মতো সরবরাহ দিতে পেরেছে বিপিসি। 

চলতি জুন মাসের ১৮ তারিখের আগে ফার্নেস অয়েলের কোনো চালান দেশে আসছে না। চলতি জুন মাসে এক লাখ ২০ হাজার এবং জুলাই মাসেও এক লাখ ১০ হাজার টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা রয়েছে পিডিবি’র।

এদিকে, ডলার সংকটে জ্বালানি তেল আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না বিপিসি। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে ঋণ নিয়ে জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। বিপিসি তেল বিক্রি করে আমদানির ছয় মাসের মধ্যে তা পরিশোধ করে। কিন্তু তীব্র ডলার সংকটের কারণে আইটিএফসির দেনা বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধ করতে পারছে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর বা তারও বেশি করার আবেদন করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে গত বছরের নভেম্বরে প্রস্তাব দেয় বিপিসি। ৮ই নভেম্বর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিপিসি। 

আদানির বিদ্যুৎ লাইনে বিভ্রাট: অন্যদিকে, পায়রার পর এবার ভারতের আদানির গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়ে যায় গতকাল। বাংলাদেশ অংশে সঞ্চালন লাইনে সমস্যার কারণে বুধবার বেলা আড়াইটার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড- পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার জানান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আদানির বিদ্যুৎ আনার জন্য স্থাপিত সঞ্চালন লাইন বিকাল ২টা ৪৬ মিনিটের দিকে ট্রিপ করে। আমাদের আশা শিগগিরই আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। ভারতের ঝাড়খ-ে আদানি গ্রুপ ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কয়েক মাস ধরে গড়ে প্রায় সাড়ে ৭০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ আসছিল। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ডিপিডিসি ও ডেসকো জানিয়েছে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ঢাকার লোডশেডিং বেড়েছে প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status