শরীর ও মন
বর্ষায় চর্মরোগ ও পরিত্রাণ যেভাবে
ডা. দিদারুল আহসান
৩ জুন ২০২২, শুক্রবারগ্রীষ্মের প্রখর রোদতাপ পেরিয়ে স্যাঁতসেঁতে বাদলা দিন যেন এসেই পড়েছে। এই সময়ে বিশেষ করে ভেজা প্রকৃতির কারণে ত্বকে খোসপাঁচড়া বা স্ক্যাবিস, ক্যাটেনিয়াস ক্যান্ডিডিয়াসিস, ফাঙ্গাশ ইনফেকশন, প্যারনাইকিয়া জাতীয় নানা ধরনের ত্বকের অসুখ বা সমস্যা হয়ে থাকে। আর সময়টাতে যে চর্মরোগগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তার মধ্যে ঘামাচি ও ছত্রাকজনিত চর্মরোগ অন্যতম। তবে ঘামাচি কোনো জটিল কিছু না, পরিচর্যা করলে সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তবে অন্য চর্মরোগগুলো অবহেলা করলে অনেক সময় বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্ষাকালে ফাঙ্গাশ ইনফেকশন সাধারণত শুরু হয় পায়ের আঙ্গুল থেকে। আবার ছোট্ট ফুসকুড়ি দিয়েও শুরু হতে পারে এই ইনফেকশনের উৎপত্তি, তারপর লাল হয়ে সেটা ছড়াতে থাকে শরীরের ত্বকে। এ সময় ত্বকে আবার গোলাকার আংটির মতো আকৃতির এক ধরনের ফাঙ্গাস বা দাঁদ দেখা যায়। বিশেষ করে দাঁদে আক্রান্ত স্থানটি খুব চুলকায় ও পরে সেখান থেকে কষ ঝরে বা চুলকালে বের হয়। এ ধরনের ফাঙ্গাস কুঁচকিতে খুব বেশি দেখা যায়।
প্রতিরোধ ও করণীয়:
ফাঙ্গাস
ফাঙ্গাস প্রতিরোধে শরীর শুষ্ক রাখতে হবে। ব্যবহৃত কাপড়গুলো একদম শুকনো হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে আপনার কুঁচকির ত্বক যেন ভেজা না থাকে এবং অবশ্যই সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে। ফাঙ্গাস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে সেগুলো হচ্ছে পা, আঙ্গুলের চিপা, যৌনাঙ্গ ও এর পাশের ত্বক, নখের গোড়া ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। আর ত্বক পরিষ্কার বা ধোয়ার পর শুষ্ক টাওয়েল দিয়ে ভেজা স্থান মুছে শুষ্ক করে ফেলতে হবে। বিশেষ করে ঊরুসন্ধির ভাঁজ, বগল, ঘাড়, মাথার চুল ইত্যাদি পুরোপুরি শুকনো রাখতে হবে।
ক্যাটেনিয়াস ক্যান্ডিডিয়াসিস
ক্যাটেনিয়াস ক্যান্ডিডিয়াসিস একটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। সাধারণত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন শিশু, বৃদ্ধ কিংবা রোগাক্রান্ত, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, দীর্ঘদিন ধরে যারা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেছেন আবার যাদের ত্বকের ভাঁজ পানিতে অথবা ঘামে সব সময় ভেজা থাকে, তাদের এই রোগ বেশি হয়। এ ছাড়া যারা সব সময় পানি নড়াচড়া করেন, সাধারণত এসব ব্যক্তিদের আঙ্গুলের ফাঁকে, হাতের ভাঁজে, শিশুদের জিহ্বা, মহিলাদের যোনিপথে এবং গর্ভবতী নারীরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এতে ত্বকের আক্রান্ত স্থান একটু লালচে ধরনের দেখা যায় এবং সঙ্গে চুলকানি হয়ে থাকে।
স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া
এটি বর্ষাকালের একটি খুবই কমন রোগ। সাধারণত স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়াকে ত্বকের ছোঁয়াচে রোগ বলা হয়। যে কেউ যেকোনো সময় এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বর্ষাকালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। এটি এমনি ছোঁয়াচে যে একজন আক্রান্ত হলে পুরো পরিবার এমনকি ঘনবসতিপূর্ণ ঘরে একত্রে বসবাস করলে তাদের মধ্যে যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। চুলকানি এই চর্মরোগের প্রধান লক্ষণ। বিশেষ করে রাতে চুলকানির মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এমনকি চুলকাতে চুলকাতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে ঘা হতে পারে। সাধারণত অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে একসঙ্গে বিছানায় ঘুমালে কিংবা ব্যবহারকৃত কাপড় অন্য কেউ ব্যবহার করলে খুব সহজেই এ রোগ ছড়াতে পারে। শিশু-কিশোররাও এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিয়মিত গোসল ইত্যাদি মেনে চললে এসব রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ত্বক বৃষ্টি বা ঘামে ভেজা থাকলে বা বৃষ্টির পানি লাগলে দ্রুত তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে ও শরীর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।
কোনো ক্ষেত্রে ছত্রাক সংক্রমণ প্রায় ১০০ ভাগ নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু নিরাময়ের পরও তবে সেটা আবারো হতে পারে। কারণ ত্বকে ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টি হলে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে চেষ্টা করবে। তাই ফাঙ্গাস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, যেমন- পা, আঙ্গুলের ফাঁক, নখের গোড়া ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। শেষে বলা যায় বর্ষাকালে বা এখন বৃষ্টির সময় ত্বকে একটু যত্ন নিন। কেননা, বর্ষায় ত্বকের বেশকিছু চর্ম রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় এবং সময়মতো যত্ন ও চিকিৎসা না নিলে জটিলতাও বেড়ে যায়।
লেখক: চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ও ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা। মোবা: ০১৭১৫৬১৬২০০