শেষের পাতা
আইপিএলডি’র গবেষণা
‘ব্যবসায়ীদের আধিক্য সংসদের গুণগত মানের ক্ষতি করেছে’
স্টাফ রিপোর্টার
২৯ মে ২০২২, রবিবারসংসদে ব্যবসায়ী এমপিদের আধিক্য সংসদের গুণগত মানের ক্ষতিসাধন করেছে। ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য প্রমোশন অব লিবারেল ডেমোক্রেসির (আইপিএলডি) এক গবেষণাপত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে আইন প্রণেতাদের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি শনিবার রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সেমিনারে আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে উপস্থাপন করা হয়। আইপিএলডি’র সভাপতি মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের সভাপতিত্বে গবেষণাপত্রের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেন সাবেক সচিব ও পিএসসি’র সদস্য এহসান শামীম এনডিসি।
এতে বলা হয়েছে, সংসদ বিষয়ে বইপত্র, তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা এবং সমীক্ষায় উঠে আসে ব্যবসায়ী সংসদ সদস্যদের এমপি পদ এবং ব্যবসায়িক কাজের মধ্যে সাংঘর্ষিক স্বার্থ বিরাজমান থাকায় তা সংসদের গুণগত মানে প্রভাব ফেলে। তবে বর্তমানে সংসদের সার্বিক কার্যক্ষমতার যে ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে-তার অন্য আরও অনেক কারণ আছে। সেগুলো হলো: হাউজের সময়ের সদ্ব্যবহার, বছরে বিল পাসের হার কম থাকা, কোরাম পূরণ, ঘন ঘন ওয়াক আউট ও সংসদ অধিবেশন বয়কট, বাজেটের উপর অপর্যাপ্ত বিতর্ক এবং কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছাড়াই বাজেট অনুমোদন এবং আর্টিক্যাল-৭০-এর প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত এবং সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের স্বাধীনতা অনেকটাই সীমিত।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যেকোনো নির্বাচনের আগে জোট গঠনে অভ্যস্ত, যা পরিণত গণতন্ত্রের স্বাভাবিক অভ্যাস নয়। এতে জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশীদাররা সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং এর ছোট অংশীদাররা সরকারি নীতিগুলোকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা বা সুযোগ না পেয়ে প্রান্তিক হয়ে পড়ে।
গবেষণায় সংসদের বেশ কিছু ভালো দিকও উঠে এসেছে। সেগুলো হলো-সঠিক সময়ে বাজেট পাস, মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোর নিয়মিত সভা করা এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা, সংসদে মধ্য বয়সী সংসদ সদস্যদের প্রাধান্য ইত্যাদি।
গবেষণায় নানান পর্যালোচনার আলোকে যে সকল সুপারিশ করা হয় তা হলো: রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের শত্রু নয়, তারা প্রতিদ্বন্দ্বী। সেজন্য তাদের মধ্যে দৃশ্য/অদৃশ্য আলোচনা থাকা আবশ্যক।
সর্বোপরি সংসদ বিষয়ে গবেষণা বৃদ্ধি পাওয়া উচিত এবং সাধারণ জনগণের সচেতনতার জন্য এসব গবেষণার ফলাফল, প্রবন্ধ, সেমিনার এবং কর্মশালার মাধ্যমে প্রচার গণতন্ত্রের স্বার্থে অত্যন্ত জরুরি।
সেমিনারে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংসদ সদস্যদের সম্পদ ও আয়ের পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে। সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্য হলো জনগণের সেবা করা কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো তারা জনগণের সেবা করে না। তারা সংসদ সদস্য হয় শুধুমাত্র উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবে বলে।
তিনি বলেন, এখন বিরোধী দল মানেই পাতানো দল। সংসদে তাদের কোনো ভূমিকা থাকে না। তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসায়ে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। ফলে কোনোটাই ভালো চলছে না। আমাদের ব্যবসাও ভালো চলছে না, রাজনীতিও ভালো চলছে না। যার পরিণতি অমঙ্গলকর। জনগণের ভোটের মাধ্যমে যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত না হয় এবং সংসদ সদস্যরা যদি জনস্বার্থে কাজ না করে তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ও (রেক্টর বিপিএটিসি) একেএম আউয়াল মজুমদার, সাবেক বিচারক ও রেজিস্ট্রার সুপ্রিম কোর্ট ইকতেদার আহমেদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আখতার হোসেন খান, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল, আরডিএ’র সাবেক মহাপরিচালক ড. সোলাইমান, নলেজ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর তোফায়েল আহমেদ, বার্ডের সাবেক মহাপরিচালক সালিহা বেগম, আমেরিকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আফতাবুল ইসলাম, প্রবাহ অরোরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিধান চন্দ্র পাল, বাপার আজীবন সদস্য ডালিয়া দাস। এ ছাড়াও আইপিএলডি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ড. মো. আব্দুল মান্নান, বেগম তাহমিনা বানু সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।