ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অনলাইন

ইসরায়েল এখন সবচেয়ে বড় বিপদের সম্মুখীন

মানবজমিন ডিজিটাল

(১ বছর আগে) ২৮ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার, ২:৪৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:২৭ পূর্বাহ্ন

mzamin

ইসরায়েলের সামনে বড় সংকট। কোনো আঞ্চলিক প্রতিকূল শক্তির কাছ থেকে নয়, বরং এর অভ্যন্তরীণ দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক শক্তি দেশকে বিপদের মুখে ফেলেছে। তারা দেশকে ধ্বংস করার পথে এগোচ্ছে। এটা অকল্পনীয় যে ইসরায়েলের একজন অপরাধী এবং নৈতিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রীর কারণে দেশের ভবিষ্যত দোদুল্যমান। নেতানিয়াহুর সুপ্রিম কোর্ট এবং সাধারণভাবে সমগ্র বিচার বিভাগকে রাজনীতিবিদদের ইচ্ছার অধীনস্থ করার সংকল্প একটি অভ্যুত্থানের সমতুল্য। যেকোনো শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক উপায়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। তার বিপজ্জনক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ স্পষ্টতই ইসরায়েলিদের গুরুতর উদ্বেগের প্রমাণ দেয়। নেতানিয়াহু ইসরায়েলের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন এবং অনেক দেরি হওয়ার আগেই তাকে থামাতে হবে বলে মনে করছেন দেশের জনগণ। ইসরায়েলিরা এখন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে যা ইসরায়েলের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে এবং দেশটির সাথে বিশ্ব ইহুদিদের সম্পর্কের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। ইসরায়েল কি আদৌ ইহুদি, গণতান্ত্রিক জাতি থাকবে? কোন ইহুদি কি তার মতাদর্শগত, ধর্মীয়, লিঙ্গ এবং যৌন অভিমুখ নির্বিশেষে তার আশ্রয়স্থল বজায় রাখতে পারবে? নাকি এটি ধর্মীয় উগ্রবাদী এবং চরমপন্থী জাতীয়তাবাদী দলগুলির দ্বারা শাসিত একটি স্বৈরাচারী দেশ পরিণত হবে?

বিচার বিভাগকে পঙ্গু করার জন্য তার অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে নেতানিয়াহু এমন একটি ঘৃণ্য জোটকে একত্রিত করেছেন যে যদি এটি টিকে থাকে তবে এটি ইসরায়েলকে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্টে অপূরণীয় ক্ষতি করবে: এটি কার্যকরভাবে ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক নীতিগুলিকে ধ্বংস করবে, সংখ্যালঘুদের অধিকারকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে।

বিজ্ঞাপন
দেশকে ব্রেন ড্রেনের দিকে প্ররোচিত করবে। পাশাপাশি তুষারপাতের সময় ইসরায়েলে ইহুদিদের অভিবাসনে আঘাত হানবে, দেশের বিদেশি বিনিয়োগ ধাক্কা খাবে, দেশের  স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো ধ্বংসের মুখে পড়বে, অর্থনীতি ধ্বংস হবে, দারিদ্র্য বাড়বে, ইসরায়েলের মিত্রদের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। শুধু তাই নয় ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভবিষ্যতে কোনো সমঝোতার সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেবে। সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক পরিণতির চেয়েও বেশি অশুভ বিষয় হল কিভাবে নেতানিয়াহু সরকারের বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন করার দুর্ভাগ্যজনক প্রচেষ্টা সারা বিশ্বের ইহুদি এবং ইসরায়েলের মধ্যে বিশেষ সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে যখন একে অপরের প্রতি ইহুদি সম্প্রদায়ের সখ্যতা সর্বদা ইহুদি ধর্মের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যর প্রতীক। সেখানে দাঁড়িয়ে বার বার তাদের মূল্যবোধকে আঘাত করা হয়েছে, তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে  

বিশ্বের প্রতিটি কোণ থেকে তা সে সংস্কারপন্থী হোক বা রক্ষণশীল ইহুদিরাই ইস্রায়েলের সৃষ্টির পিছনে মূল ভিত্তি ছিল এবং অনেকাংশে রয়ে গেছে। বর্তমান নেতানিয়াহু সরকার সেই বন্ধনটিকে ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। সেই নীতিকে   ধ্বংস করার চেষ্টা করছে যা শতাব্দী ধরে ইহুদিদের একত্রিত করে রেখেছে। বিশ্বজুড়ে ইহুদিদের বিশাল অংশ সংস্কারমুখী বা রক্ষণশীল হলেও তারা ইসরায়েলের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সম্মান করে। যদি ইসরায়েল জাতীয়তাবাদী চরমপন্থী রাষ্ট্র হয়ে ওঠে তারা আগামীদিনে হয়তো এই দেশের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবে না। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ইসরায়েল, যাকে একসময় যুক্তরাষ্ট্রেরব প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পোলোসি "বিংশ শতাব্দীর অলৌকিক ঘটনা" বলে অভিহিত করেছেন, সেই দেশ একবিংশ শতাব্দীর একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে যেখানে মানুষ বন্দুকের সামনে বাঁচে এবং মরে।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ, যিনি তার পূর্বসূরিদের মতো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আলোচনায় সরাসরি জড়িত থাকেন না, তিনি এখন নেতানিয়াহু যে বিপজ্জনক পথ বেছে নিয়েছেন তা থেকে দেশকে বাঁচাতে ব্যর্থ। প্রেসিডেন্ট হারজোগ সতর্ক করে দিয়েছেন যে দেশটি সাংবিধানিক ও সামাজিক পতনের মুখে দাঁড়িয়ে এবং একটি সম্ভাব্য হিংসাত্মক সংঘর্ষের সাক্ষী হতে চলেছে। বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রস্তাবগুলি, যদি পাশ হতে দেওয়া হয়, তাহলে তা সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করে দেবে এবং শাসক জোটের কাছে অনেক বেশি ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। নেতানিয়াহুর দাবি যে তিনি তার জোটের অংশীদারদের সাথে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জিতেছেন। এইভাবে ইসরায়েলের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটাররা তাঁর হাতে আইন পাস করার এবং বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। আসলে ধূর্ত নেতানিয়াহু জানেন না বিচার ব্যবস্থার সংস্কার শুধু বাজেট, সামরিক বরাদ্দ বা অবকাঠামো নিয়ে কাজ করার মতো আরেকটি বিল পাস করার মতো বিষয় নয়।

বিচার বিভাগের ভূমিকা এবং সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ইসরায়েলের মৌলিক আইনগুলিতে সম্পৃক্ত করা আছে। এমনকি যদি এটি নাও হয়, তাহলেও নেতানিয়াহুর সরকার কেবল একটি জাতীয় ঐক্যমত ছাড়াই সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বকে সংশোধন বা বাতিল করতে পারে না। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ধরনের অনুমিত সংস্কারগুলি কেবলমাত্র নেসেটকে সর্বোচ্চ আদালতের যে কোনও রায়কে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দ্বারা অগ্রাহ্য করার অনুমতি দেবে না, আরও গুরুত্বপূর্ণ এটি সরকারকে যে কোনও জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে বাধা দেবে। এটাও বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে নেতানিয়াহুর তথাকথিত সংস্কার তাঁকে ন্যায়বিচারের হাত থেকে বাঁচতে সক্ষম হবে।

প্রকৃতপক্ষে, নেতানিয়াহুর আনা প্রস্তাবগুলি আদপে তার ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য। কিন্তু ধর্মীয় দলগুলিও এই প্রস্তাবের দ্বারা অনুপ্রাণিত, যাদের গোঁড়া নেতারা ইহুদি ধর্মের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত কিছু তাদের ইচ্ছার অধীন করতে বদ্ধপরিকর। আসলে কর্তৃত্বের পাশাপাশি ইসরায়েলের অর্থোডক্স-নিয়ন্ত্রিত প্রধান রাবিনেট শুরু থেকেই  ইহুদি জীবনের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ চায়। নেতানিয়াহুর আনা প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নারীদের অধিকার এবং স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে, এলজিবিটি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বাড়বে, তাদের প্রার্থনার অধিকার কেড়ে নেয়া হবে।

সর্বোপরি অতি-অর্থোডক্স ইহুদিরা সমস্ত ইসরায়েলিদের উপর তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে চাইছে। নেতানিয়াহু এবং তার দল আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া স্থগিত করার জন্য রাষ্ট্রপতি হারজোগের আহ্বানে সাড়া  দিতে নারাজ এবং তার বিচার বিভাগীয় সংস্কার বিরোধী দলগুলিও গ্রহণ করেছে। নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপের জেরে দেশের মানুষ হয়তো প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে পারেন তবে তার ফল কতটা সুদূরপ্রসারী হবে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। এয়ার ফোর্স, ইন্টেলিজেন্স, এবং ড্রোন অপারেটররা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এই আইন পাস হলে তারা দায়িত্বে থাকবেন না, যা সঙ্কটে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইজরায়েল এর আগে কখনও এই সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। যদি নেতানিয়াহু এখনও তাঁর পথ পরিবর্তন না করেন তাহলে ইসরায়েলি জনসাধারণের উচিত দেশব্যাপী আইন অমান্যর আহ্বান জানানো। জনসাধারণ এই ধরনের চরম পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এই দুর্নীতিগ্রস্ত ও ফ্যাসিবাদী সরকারকে থামানো মুশকিল। সবশেষে বলা যায়, দেশের আত্মাকে রক্ষা করতে ইসরায়েলিদের নীরবতা ভাঙতে হবে। এই যুদ্ধর পরিণতি নির্ধারণ করতে হবে ইহুদিদের, কারণ এর সাথে ইসরায়েল এবং বিশ্ব ইহুদিদের ভাগ্য জড়িত।

 

সূত্র: onlineopinion
লেখক ডঃ অ্যালন বেন-মেইর, NYU-এর সেন্টার ফর গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status