ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অনলাইন

ওষুধের ভবিষ্যৎ কি এখন মহাকাশে?

মানবজমিন ডিজিটাল

(১ বছর আগে) ২৭ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ৩:৪৩ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

mzamin

তেল আবিবের কেন্দ্রস্থলে একটি গগনচুম্বী ভবনের এক কোণে ছোট একটি ল্যাব চালান ইসরায়েলি উদ্যোক্তা ইয়োসি ইয়ামিন। যাকে তিনি বলছেন "একটি ছোট্ট জেমস বন্ড-স্টাইলের স্যুটকেস কারখানা, যা সৌরশক্তি  দ্বারা চালিত"। গত চার বছরে, সৌর প্যানেলে আবৃত এই ছোট ধাতব বাক্সগুলি বারবার স্পেসএক্স রকেটের পিছনে কক্ষপথে বিস্ফোরিত হয়েছে এবং  লিউকেমিয়া কোষের আচরণ থেকে শুরু করে একাধিক বিষয়ে পৃথিবীতে আলোকপাত করেছে। SpacePharma-এর সিইও হিসাবে(একটি কোম্পানি যা সারা বিশ্বে  শিশুদের হাসপাতাল থেকে শুরু করে বড় ফার্মা ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করে) ইয়ামিন একটি নতুন শিল্পের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছেন । ইসরায়েলের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিওনে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে,  জীববিজ্ঞানীরা এখন  তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলিকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন, নীলগ্রহে বসেই সেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে।  ইয়ামিন বলেছেন ''এটি  বিজ্ঞান, কোনো  কল্পকাহিনী নয়। গত বছর, আমরা সাতটি ইন-অরবিট পরীক্ষাগুলি সম্পন্ন করেছি এবং এই সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে।  পরের মাসে, আমরা স্কিন কেয়ার থেকে  মস্তিষ্কের রোগ নির্ণয়ে মহাকাশে পাঁচটি পরীক্ষা চালাচ্ছি।'' নাসা পরামর্শ দিয়েছে যে, তার মহাকাশচারীরা ক্যান্সার বা  অন্যান্য অনেক অসুস্থতার নিরাময়ের জন্য কক্ষপথে তাদের সময় ব্যয়  করতে পারে। মহাকাশ এখন জীববিজ্ঞানের পরীক্ষা চালানোর জন্য উন্মুক্ত ক্ষেত্র। স্টেম সেলগুলির  ওপর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব বিজ্ঞানীদের আগ্রহের বিষয় ।

বিজ্ঞাপন
এটি বিজ্ঞানীদের ক্যান্সার, ভাইরাস, জেনেটিক ব্যাধি এবং হৃদরোগের সাথে যুক্ত মূল প্রোটিনের জটিল স্ফটিক কাঠামো অধ্যয়ন করার দিক খুলে দিয়েছে। এই স্ফটিকগুলি একটি টিউমার বা ভাইরাস কীভাবে বিকশিত হয় তা বিশ্লেষণ করার জন্য  নতুন ওষুধ তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।একজন স্পেস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর থাইস রুসোমানো বলেছেন-'' স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত কিছু প্রোটিনের 3D গঠন  তাদের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানার পথ প্রশস্ত করেছে। '' 

ম্যাসাচুসেটস-ভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানি মাইক্রোকুইনের জন্য, গত চার বছরে ISS-এ পরিচালিত একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা TMBIM নামক প্রোটিনের পরিবারের উপর ভিত্তি করে ডিম্বাশয় এবং স্তন ক্যান্সারের পাশাপাশি মানসিক আঘাতজনিত মস্তিষ্কের আঘাত, পার্কিনসন এবং এমনকি ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য ওষুধ তৈরিতে সাহায্য করেছে । বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ দিয়ে TMBIM-কে লক্ষ্য করতে চেয়েছিলেন কারণ তারা কোষের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সার এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগে  এই প্রোটিনগুলি পরিবর্তিত হয়ে যায়। কিন্তু যখন মাধ্যাকর্ষণ টিএমবিআইএম সম্পর্কে  জানা  কঠিন করে তুলেছে, তখন মাইক্রোকুইন মহাকাশে তা করতে সক্ষম হয়েছে।

সফলতা-ব্যর্থতা

মহাকাশ ওষুধের ক্ষেত্রটি নাসার ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ বিপর্যয়ের মধ্যে একটি বলে চিহ্নিত হয়ে আছে । ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে স্পেস শাটল কলম্বিয়া টেক্সাস এবং লুইসিয়ানার উপর দিয়ে বায়ুমন্ডলে পুনঃপ্রবেশ করার সময় বিস্ফোরিত হয় এবং এতে থাকা সাতজন মহাকাশচারী নিহত হয়। শাটলের বাম পাখার যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তিন মাস পরে, কলাম্বিয়ার মহাকাশচারীরা আইএসএস-এ তাদের কাজ করছিলেন। তখন  ধ্বংসাবশেষের মধ্যে একটি  শিশি আবিষ্কৃত হয়েছিল, যা এখনও অক্ষত রয়েছে । এটি জীববিজ্ঞানীদের ইন্টারফেরন আলফা-২বি নামক একটি প্রোটিনের গঠন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছিল, যা ইনট্রন এ ড্রাগের সক্রিয় উপাদান ছিল। এটি মেলানোমা এবং হেপাটাইটিস সি-রোগের  জন্য চিকিৎসার দরজা খুলে দেয় । মহাকাশ ওষুধে বিজ্ঞানের এক গবেষক পল রিচার্ট বলছেন -''এই মিশনের মাধ্যমে আমি  খুব খুশি ছিলাম, কারণ আমরা রোগগ্রস্থ পরিবারগুলিকে কিছু ইতিবাচক তথ্য সরবরাহ করে মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছিলাম। '' এই মিশন ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের মধ্যে আগ্রহ বাড়তে শুরু করে। ২০১৭ সালে রিচার্ট ISS-এ একটি মিশনে জড়িত ছিলেন  যেখানে  ওষুধ কোম্পানি মার্ক ফুসফুস থেকে মাথা এবং ঘাড় পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যান্সারের চিকিৎসার ওষুধ  Keytruda  নিয়ে পরীক্ষা  চালাচ্ছিলো  । ফলস্বরূপ এই তথ্য কোম্পানিকে ওষুধের একটি নতুন  ফর্ম তৈরি করতে সাহায্য করছে, যা একজন চিকিৎসক ব্যবহার করতে পারেন। আগামী বছরগুলিতে  চিকিৎসা ক্ষেত্রকে  রূপান্তরিত করতে পারে এই মহাকাশ ওষুধ বিজ্ঞান । স্টেম সেলগুলি   হার্ট বা লিভার ব্যর্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নতুন আশা প্রদান করতে পারে । Svendsen এবং তার সহকর্মীরা নাসার সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে স্টেম সেল নিয়ে একাধিক পরীক্ষা চালিয়ে যাবার চেষ্টা করছেন। ভবিষ্যতে, স্টেম সেল-ভিত্তিক থেরাপিগুলি   মহাকাশেও তৈরি হতে পারে এমন সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে ।

উচ্চ খরচ, উচ্চ পুরস্কার

মহাকাশে গবেষণা চালানোর  প্রধান সমস্যা হল খরচ। ISS এবং পিছনে একটি একক পরীক্ষা করার মূল্য প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ডলার বলে রিপোর্ট করা হয়েছে, বিশেষ করে যদি এতে মহাকাশচারীর সময় অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু মহাকাশ গবেষণা ক্রমবর্ধমানভাবে জনসাধারণের থেকে ব্যক্তিগত সরবরাহকারীদের দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে, একটি নতুন মডেল যা চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ দুটোই তৈরি করছে । নাসা  ২০৩০ সালের শেষ নাগাদ আইএসএস- এ   কার্যক্রম  বন্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর হিউস্টন-ভিত্তিক সংস্থা অ্যাক্সিওম স্পেস  প্রথম বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন হিসেবে এটিকে  প্রতিস্থাপন করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে ।   Axiom Space-এর প্রধান রাজস্ব  বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনার জন্য মহাকাশ স্টেশনে অতিরিক্ত মডিউল তৈরি করতে ব্যবহার করা হবে। Svendsen ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে এটি গবেষক এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলির জন্য একইভাবে আরও সুযোগ তৈরি করবে এবং  এমনকি মহাকাশ  থেরাপির দরজা খুলে দেবে। স্পেসফার্মা এবং অন্যান্য প্রাইভেট কোম্পানি যেমন আইস কিউবস মহাকাশে চিকিৎসা গবেষণাকে আরও ব্যাপকভাবে উপলভ্য করার লক্ষ্যে রয়েছে। কিন্তু এই কার্যক্রম  সবার জন্য  নয়। বোস্টন-ভিত্তিক অ্যাঞ্জিয়েক্সের মতো কোম্পানি  ইতিমধ্যেই মহাকাশ থেরাপির কার্যক্রম পরিত্যাগ করেছে।  তাদের পরীক্ষা  ক্যান্সারের ওষুধের সাথে সম্পর্কিত চমকপ্রদ সাফল্য এনেছিল , কিন্তু গোটা পরীক্ষা পদ্ধতি  খুব ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ ছিল বলে তারা এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে । মহাকাশ সম্পর্কে অনেক রহস্য লুকিয়ে  আছে  ।  কিন্তু মহাকাশ যদি ভাল মানের স্টেম সেল পাওয়ার একমাত্র স্থান হয় তাহলে গ্যালাক্সিতে  শরীরের অঙ্গগুলির পুনর্জন্মের ভবিষ্যতের পথ তৈরি করবে। কে জানে, হয়তো ভবিষ্যতে    কল্পকাহিনীর মতোই আমাদের চারপাশে স্টেম সেলের মাধ্যমে তৈরী হওয়া নতুন অঙ্গগুলি স্যাটেলাইটের  মাধ্যমে ঘুরপাক খাবে।  হয়তো   শূন্য মাধ্যাকর্ষণে তৈরী হবে সম্পূর্ণ একটি হৃদয়।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status