শেষের পাতা
আদালত পাড়ায় একদিন
বিচারপ্রার্থীদের বসার জায়গা নেই যত্রতত্র আবর্জনা
শরিফ রুবেল
২৭ মার্চ ২০২৩, সোমবারনানা অব্যবস্থাপনা। বিচারপ্রার্থীদের বসার জায়গা নেই। নেই পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। উপযুক্ত টয়লেট ব্যবস্থা না থাকায় বিচারপ্রার্থীদের দৌড়াতে হয় আশপাশের হাসপাতাল কিংবা আইনজীবীদের চেম্বারে। ঢাকার সিএমএম, সিজিএম ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের এ চিত্র নিত্যদিনের। শুধু তাই নয়, সুউচ্চ ভবনে উঠতে আছে লিফট। কিন্তু এর অধিকাংশই বিকল। লিফটের নাম্বার বাটনও পড়ে গেছে। এতে তিন তলায় নামতে চাইলে নিয়ে যায় ৬ তলায়। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গারও সংকট।
ডাস্টবিন রাখা হয়েছে। সেটাতেও স্তূপ ময়লা। এসব ময়লা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের দুর্গদ্ধে নাক চেপে থাকতে হয়। আদালত ভবনের দেয়ালে পানের পিক, কফ-থুথু লেপ্টে আছে। ঢাকার আদালত পাড়ায় সমস্যা আর সমস্যা। এসব সমস্যা নিয়েই চলছে বিচারকাজ।
আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের বিভিন্ন জায়গায় ময়লা আবর্জনা মাসের পর মাস ধরে পড়ে আছে। এটা পরিষ্কারের বিষয়ে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয় না। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কেউ সাত আট তলায় উঠে ময়লা নিতে চান না।
সরজমিন দেখা গেছে, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রবেশ মুখেই ময়লার স্তূপ। দুর্গন্ধে দাঁড়িয়ে থাকাই কষ্ট। ভবনের প্রতিটি এজলাসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা উৎকট গন্ধে নাক ঢেকে যান। এজলাসের বাইরে বারান্দার দুই পাশে কিছু দূর পরপরই ময়লা-আবর্জনা চোখে পড়ে। প্রতিটি ভবনের কার্নিশ যেন ময়লার ভাগাড়। বাইরে পড়ে আছে ভাঙাচুরা চেয়ার-টেবিল। এজলাস থেকে নানা কাগজপত্র এনে বাইরে ফেলা হচ্ছে। তা আর সরানোর তাগিদ নেই। আইনজীবীরা জানান, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও ময়লা নিতে নিয়মিত আসেন না। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ষষ্ঠ তলার ভবনে বিচার প্রার্থীদের জন্য তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ তলায় তিনটি টয়লেট রয়েছে। তবে তা ব্যবহার উপযোগী নয়। এ ছাড়া আরও দুটি টয়লেট থাকলেও তা তালাবদ্ধ থাকে সবসময়। যেগুলো পরিচ্ছন্ন তা ব্যবহারে টাকা দিতে হয়। ঢাকা জেলা জজ আদালতের পাশে মসজিদের সামনে নতুন করে একটি গণ-টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। তবে সেখানে এমনই দুর্গন্ধ যে, প্রবেশ করাই দুরূহ। পুরুষদের জন্য তৈরি টয়লেটের দরজা খুবই সরু। সেখানে প্রবেশ করাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। বিচার প্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার নেই বললেই চলে। নারী ও শিশু বিচার প্রার্থীদের জন্য রেবতী ম্যানশনে একটি বিশ্রামাগার থাকলেও সেখানে তেমন লোকজন যান না। লোকজনের বিশ্রাম নিতে হয় মানব পাচার ট্রাইব্যুনালের পাশের বটতলায়। ঢাকার পুরনো জেলা জজ ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৩১ নম্বর কক্ষে ঢাকা বিভাগীয় পরিবেশ আদালত। ময়লার স্তূপ পড়ে আছে সেখানেও।
যাত্রাবাড়ী থেকে আদালতে মামলার হাজিরা দিতে আসা মতিয়া চৌধুরী বলেন, নি¤œ মানের ব্যবস্থাপনা আদালতে। সারাদিন একটু বসার সুযোগ হয়নি। স্থান সংকটের কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
খায়রুল কবির নামের এই আদালতের এক আইনজীবী জানান, আদালতের প্রায় বিভিন্ন জায়গায় ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তার মধ্যে পরিবেশ আদালতের নিচেই ময়লা। আদালত পাড়ার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নকর্মীরা তা পরিষ্কার না করে এখানে আরও বেশি বেশি করে ময়লা ফেলছে। আর এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নাক ঢেকে ওই ভবনে ঢুকতে হয়। এদিকে সিএমএম আদালতের নিচ তলায় বিচারপ্রার্থীদের জন্য আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য রয়েছে ‘আইনগত তথ্য ও সেবা ডেস্ক’। কাঁচ ঘেরা দৃষ্টিনন্দন ডেস্ক থাকলেও সেবা প্রদানের কোনো কার্যক্রম সেখানে নেই। ডেস্কে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সাদ্দাম হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, এখানে সেবা কেন্দ্র আছে, সেটাই তো জানি না। লেখা দেখেছি তথ্য সেবাকেন্দ্র। কিন্তু ভেতরে কেউ নাই। ময়লা-আবর্জনার স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
এ আদালতের আইনজীবী এডভোকেট খাদেমুল ইসলাম বলেন, পাশেই ডিসি অফিসে একটা তথ্য সেবাকেন্দ্র আছে, যেখানে সব পাওয়া যায়। কিন্তু সিএমএম আদালতে যেটা আছে তার কোনো কার্যক্রম নাই। ফলে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
জানতে চাওয়া হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ মাহমুদা আক্তার মানবজমিনকে বলেন, টয়লেট না থাকার বিষয়টি নারীদের অনেক ভোগায়। এজন্য অনেককে আদালতের বাইরে দৌড়াতে হয়। আদালত প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত টয়লেট ব্যবস্থা না থাকা দুঃখজনক। আবার পানি খাবার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা অনেকবার বলেছি। কিন্তু কেউ পদক্ষেপ নেয়নি।