ষোলো আনা
এত সফলতার পরও খেলাটাকে পেশা হিসেবে নিতে চান না মৌ
পিয়াস সরকার
২৮ মে ২০২২, শনিবারনড়াইলের মেয়ে সাদিয়া রহমান মৌ। যিনি এখন দেশের এক নম্বর টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। বার্মিংহামে কমনওয়েলথ গেমসে প্রথমবারের মতো নারী টেবিল টেনিস দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন তিনি। তার সঙ্গে যাচ্ছেন সোনম সুলতানা সোমা। এই দু’জন বার্মিংহাম থেকে উড়াল দেবেন তুরস্কে, ইসলামী সলিডারিটি গেমসে অংশ নিতে। এত সফলতার পরও টেবিল টেনিসকে পেশা হিসেবে নিতে চান না মৌ। বলছেন, মিলছে না পর্যাপ্ত সাপোর্ট।
মৌ বলেন, এশিয়ান টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে গিয়েছিলাম ২০২১ সালে কাতারে। ওখানকার পারফরমেন্সের আলোকে ডাক পাই কমনওয়েলথ গেমসে। আমি ওমেন জুনিয়রে বাংলাদেশের প্রথম। সোমা দ্বিতীয়, আমরা ডাক পেয়েছি কমনওয়েলথে।
চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন মৌ।
মৌয়ের বাবা হেলথ বিভাগের স্টোরকিপার ছিলেন। দীর্ঘ সময় অসুস্থ থাকার পর ২০১৮ সালে তিনি মারা যান। মা গৃহিণী। তারা দুই বোন। তার বড় বোনও আনসার দলের হয়ে টেবিল টেনিস খেলেছেন। মৌ বলেন, ছোটবেলায় যখন পরিচিতি ছিল না অনেকেই অনেক কথা বলতেন। এমন কী খেলতে যায়- ছয় মাস সাত মাস করে ক্যাম্প চলে, ইত্যাদি। তবে আম্মু বেশ সহায়তা করেছেন। আম্মুর সহায়তার কারণেই এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। মৌ ২০১৭ সালে জাতীয় টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় নারী দ্বৈত ও নারী দলগত পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হন। ২০১৬ সালে ভারতে ও ২০১৯ সালে নেপালে সাউথ এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক পান। যুব গেমসে একক, দ্বৈত ও দলগত পর্যায়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মৌ। জুনিয়র ন্যাশনাল খেলায় একক ও দ্বৈত পর্যায়ে রয়েছে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব। স্কুল পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চারবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মৌ। যুব গেমস ২০১৮ সালে তিনটি স্বর্ণ, নবম বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসে ২০২০-এ তিনটি স্বর্ণ ও একটি ব্রোঞ্জ, ২৫তম এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে কাতারে মেলে সাফল্য। সবশেষ মালদ্বীপেও অর্জন করেন স্বর্ণ পদক।
তিনি বলেন, পরবর্তী টুর্নামেন্ট কমনওয়েলথ গেমস, বার্মিংহাম ইংল্যান্ডে। এরপর সেখান থেকেই যাবো ইসলামিক গেমস তুরস্কে। আবার পরীক্ষা সামনে, বেশ চাপে আছি। তেমন কোনো প্রস্তুতি নিতে পারিনি।
এত সফলতার পরও খেলাটাকে পেশা হিসেবে নিতে চান না তিনি। মৌ বলেন, আমার ইচ্ছা আছে মেডিকেলে পড়ার। আর যদি না হয় তবে ভালো একটা বিষয় নিয়ে বাইরে যাওয়ারও ইচ্ছা আছে। কারণ এটার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমি যে খেলছি, আজ অবধি এটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে খেলতে পারিনি। এখন একটা ভালো আয় হচ্ছে কিন্তু এটা পর্যাপ্ত নয়। আমি চাইবো সরকার বা স্পন্সরশিপ গ্রুপগুলো যদি আসে তবে এই খেলাকে পেশা হিসেবে নেবার চিন্তা করা যায়। যেমন ধরেন, মালদ্বীপে আমাদের একটা স্বর্ণ এসেছে। এরপর আমাদের কিন্তু অনেক সাপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল। আরও অভিনন্দন পাবার কথা ছিল। কিন্তু তেমনটা মেলেনি। আমি খেলছি, এটার দিকে মনোযোগ আছে। কিন্তু এটাকে পেশা হিসেবে নেয়া আসলেই মুশকিল।
মৌ বলেন, দেশের হয়ে স্বর্ণ অর্জন করে বিশ্বের সামনে নিজের দেশ এবং দেশের জাতীয় সংগীতকে ওপরে তুলে ধরতে চাই।