জীবদ্দশায় মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার সনদ, জামুকায় সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়ার পথে মৃত্যু

দেশের জন্য সরাসরি যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধা সদন পাননি সোনাগাজীর মোস্তফা। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে সব চেষ্টাই করেছেন তিনি। সোনাগাজী উপজেলায় এবারে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের পর সর্বসম্মতিক্রমে ৩৭ জনের নাম তালিকাভুক্ত করে জামুকায় পাঠানো হয়। তালিকাতে ১২ নম্বরে নাম ওঠে মোস্তফার। চূড়ান্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার সকালে ঢাকাতে আকস্মিক মৃত্যু হয় মোস্তফার। এ মৃত্যুর মধ্যদিয়ে জীবদ্দশায় পাওয়া হয়নি তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ। মোস্তফার নাতি রাজু বলেন, জামুকা থেকে মঙ্গলবার ফোন করে দাদাকে তাদের অফিসে যেতে বলা হয়। বুধবার সকালে দাদা ঢাকা পৌঁছে সিএনজিতে জামুকায় যাওয়ার পথে ফকিরাপুলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা দ্রুত তাকে হাসপাতাল নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। সোনাগাজী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সৈয়দ নাসিরে উদ্দিন বলেন, মোস্তফা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন।

দেশ স্বাধীনের জীবিকার তাগিদে অন্যত্র চলে যাওয়ায় তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। গত ২০০৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আবেদন করেন তিনি। সোনাগাজীতে মামলার কারণে দীর্ঘ ১৩ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই হয়নি। আদালতের রায়ের পর আবেদন করা ৫৮৪ জনের গত মাসে যাচাই-বাছাই শেষে ৩৭ জনের নাম আমরা জামুকায় পাঠাই। বুধবার মোস্তফাসহ ৩৭ জন জামুকায় সাক্ষাৎকার দিতে ঢাকাতে যান। ঢাকাতে পৌঁছে মোস্তাফা মৃত্যুবরণ করেন। ৩৬ জন সাক্ষাৎকার দেয়ার পর মোাস্তফার মৃত্যুর বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। তিনি আরও বলেন, মোস্তফা খুব দরিদ্র ছিলেন। বসবাস করতেন নবাবপুর ইউনিয়নে। পরে ভূমিহীন কোটায় তার স্থান হয় চরদরবেশ ইউনিয়নের সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে। গত ১৫ বছর ধরে তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। এলাকাবাসী ও মোস্তফার নিকট আত্মীয় মো. সেলিম বলেন, তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে  এসেছে। অভাব-অনটনের মধ্যে থাকা মোস্তফা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাাওয়ায় হতাশ ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাওয়ার কাছাকাছি পৌঁছেও তিনি দেখে যেতে পারলেন না। সনদ না থাকায় মৃত্যুর পরও রাষ্ট্রীয় মর্যদা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বুধবার বিকালে জানাজা শেষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।