ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

পরিবেশ-স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমাতে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতি

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, টাঙ্গাইল থেকে ফিরে
২৩ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমাতে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতি ব্যবহার করছে দেশের ৩টি বড় হাসপাতাল। এ পদ্ধতিতে পরিবেশ দূষণে হুমকি নেই। পরিবেশবান্ধব এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে না। কোনো জীবাণুও অবশিষ্ট থাকে না। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন  ও  প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতিতে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে। মেডিকেল বর্জ্য’র সঙ্গে হাসপাতালের অন্যান্য বর্জ্যও একই পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবশিষ্ট হিসেবে যা থাকছে, তা উন্নত বিশ্বে রিসাইকেল করা হলেও বাংলাদেশে সে ব্যবস্থা নেই বলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা হাসপাতালের মেডিকেল ও অন্যান্য বর্জ্য হাসপাতাল থেকে এনে মেশিনে দিচ্ছেন এবং আধা ঘণ্টা পর পানিহীন শুকনো অবশিষ্ট অংশ মেশিন থেকে বের হয়ে আসতে থাকে। মাইক্রোওয়েভ মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেড ভিশন লিমিটেডের ম্যানেজার শাহেদুজ্জামান খান বলেন, মেডিকেল বর্জ্যে থাকে গজ, ব্যান্ডেজ, কাপড়, সিরিঞ্জ, সুঁই, বোতল, স্যালাইন ব্যাগ, নল, ছুরি-কাঁচি, মানুষের শরীর থেকে কেটে ফেলা অংশ এবং অন্যান্য ছোট ছোট কাঠ ও লৌহদ-। যেগুলোতে মনে করা হয় জীবাণু থাকতে পারে সেগুলো এই মেশিনে ফেলা হয়।

বিজ্ঞাপন
মেশিনটির ভেতরে থাকা ধারালো ব্লেড দ্রুত ঘোরানোর মাধ্যমে সবকিছুই মুহূর্তেই ডাস্ট হয়ে যায় এবং টেক্সটাইল মিলের ফেলে দেয়া সুতার মতো দেখা যায়। মেশিনের ভেতরের সবকিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরায় পরিণত হয়ে যাওয়ার পর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয়। মেশিনটির লগ টেনে জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায় এবং মেশিনের ভেতরে থাকা ঘূর্ণীয়মান ব্লেডগুলো জীবাণুমুক্ত শুকনো বর্জ্যগুলোকে বের করে দেয়। পরে সেগুলোকে সাধারণ ডাস্টবিনে ফেলে দিলেই হয়, এতে কোনো ধরনের বিপদ থাকে না। শাহেদুজ্জামান বলেন, ব্যবস্থাপনার পর যে অবশিষ্ট বের হয় মেশিন থেকে সেগুলো আগের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম জায়গা দখল করে এবং ২৫ শতাংশ ওজন কমিয়ে ফেলে। কেউ ইচ্ছা করলে জীবাণুমুক্ত বর্জ্যগুলোকে কাজে লাগাতেও পারে। ফ্রান্সের প্রযুক্তির এই মেশিনে বর্তমানে ৩০০ কেজি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তাদের দিনে ৩০০ টাকার বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে বলেও ধারণা দেন তিনি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক মাইক্রোওয়েভ পদ্ধতি ব্যবহার সম্পর্কে টাঙ্গাইল সদর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. এসকেএম শয়েবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এই মেশিন ব্যবহার করার ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমে এসেছে। এখন এই বর্জ্য রিসাইক্লিং করে এর থেকে সুবিধা নেয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, হাসপাতালের বর্জ্য সঠিকভাবে ধ্বংস করা না হলে তাতে নানা ধরনের জীবাণু যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, হেপাটাইটিস বি, সি, এইচআইভি এইডস ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশে কেবল ২০০৮ সালে ‘বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস’ নামক নীতিমালা প্রণয়ন করে। এরপর বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। প্রিজম নামক একটি সংস্থা দেশের ১২টি জেলার হাসপাতাল বর্জ্য সংগ্রহ করে ইনসিনারেশন নামক পদ্ধতির মাধ্যমে পুড়িয়ে ফেলছে। এতে যেমন পরিবেশ দূষণ ঘটে এবং পুড়িয়ে ফেলার কারণে যে গ্যাস বের হয় তাতে মানুষের নানা ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। এতে ডিঅক্সিন নামক একটি গ্যাস বের হয়ে বাতাসে মিশে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, এটি কার্সিনোজেনিক। এ ছাড়া সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে মেডিকেল বা হাসপাতাল বর্জ্য’র মতো বিষাক্ত ও জীবাণুযুক্ত বর্জ্য কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই মাটিতে পুঁতে ফেলছে এবং পরিবেশ ও মাটির ক্ষতি হচ্ছে।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মোবাইল হ্যান্ডসেট/ ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এখন সংকটে

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status