ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বজমিন

২৫ বছর পর কানাডা থেকে আজ ফেরত পাঠানো হচ্ছে মাহফুজ আলমকে

মানবজমিন ডেস্ক

(১ বছর আগে) ২৭ মে ২০২২, শুক্রবার, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৩:৩৩ অপরাহ্ন

mzamin

দীর্ঘ ২৫ বছর পর কানাডা থেকে আজ শুক্রবার দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে মোহাম্মদ মাহফুজ আলম (৬১) নামের এক বাংলাদেশিকে। তাকে ফেলে আসতে হচ্ছে নিজের ছেলে ও নাতিদের।  ১৯৯৬ সালে দেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি পালিয়ে যান কানাডায়। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। দেশে রেখে যান স্ত্রী ও দুই সন্তানকে। আশা ছিল একদিন তারাও তার সঙ্গে যোগ দেবেন। কিন্তু পরে তার আশ্রয়ের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়। তারপর থেকে গত ২৫টি বছর তিনি কানাডায়ই কাটিয়ে দেন। দেশে ছেলে ও মেয়ে যাতে সুশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সে জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন কানাডায়। এমনকি সেখানে একটি ভাল বাড়িও ক্রয় করেন।

বিজ্ঞাপন
আশা ছিল একদিন পরিবারের সবাইকে নিয়ে সেখানে বসবাস করবেন। 

তার ছেলে শাহেদ ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর দক্ষ অভিবাসী হিসেবে ২০১৫ সালে কানাডায় পাড়ি জমান। পিতার সঙ্গে মিলিত হন তিনি। সেখানেই সংসার পাতেন শাহেদ। তারও সন্তান সন্তুতি হয়। দাদা হন মাহফুজ আলম। কিন্তু তাদের সঙ্গে থাকার সৌভাগ্য আর হচ্ছে না তার। আজ শুক্রবারই তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে কানাডার অনলাইন দ্য স্টার। 

এর আগে বছরের পর বছর কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির কাছে প্রতি মাসের তৃতীয় বুধবার রিপোর্ট করেছেন মাহফুজ আলম। কখনো সেটা ফোনে, আবার কখনো ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি অদৃশ্য হয়ে যাননি বা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাননি।  যদিও কারো আশ্রয়ের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তাকে তার দেশে ফেরত পাঠানো হয়, কিন্তু দীর্ঘায়িত আপিল প্রক্রিয়ার কারণে এবং ব্যক্তিবিশেষের ভ্রমণ সংক্রান্ত ডকুমেন্টের অভাব থাকার কারণে তাদেরকে ফেরত পাঠাতে কয়েক বছর লেগে যায়। এই সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সেখানে কাজ করতে পারেন। ট্যাক্স দিতে পারেন। স্থানীয় নাগরিকরা যেমনভাবে বসবাস করেন, তিনি সেভাবে বসবাসও করতে পারেন। 

গত নভেম্বরে মাহফুজ আলম ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে সাক্ষাতকার দিতে ব্যর্থ হন। ফলে বর্ডার গার্ড কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ৭ই মে তাকে গ্রেপ্তারে করেন তারা। তারপর যা হবার তাই হচ্ছে। আজ শুক্রবারই তাকে দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে। পিছনে ফেলে আসতে হবে ছেলে, পুত্রবধু ও তাদের সন্তানদের।  
তার ছেলে শাহেদ স্থানীয়ভাবে একটি ওয়ারহাউজের সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ বাবাকে কানাডায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে অনুমোদন দিয়েছে। এ সময়ে কানাডায় তিনি সব কিছু ত্যাগ করে অবস্থান করেছেন। অবদান রেখেছেন। তার কাছ থেকে ট্যাক্স নেয়া হয়েছে। তার শ্রমকে ব্যবহার করা হয়েছে। আর এখন দ্রুততার সঙ্গে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আমাদের কাছে এর কোনো অর্থ নেই। 

বর্ডার এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯৭ সালেই মাহফুজ আলমের আশ্রয়ের আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। তারপর আপিল শুনানি শেষ হয় ২০০০ সালে। কিন্তু ২০০৯ সাল পর্যন্ত নয় বছরে আর তেমন কিছু হয়নি। তাকে কানাডা থেকে বের করে দেয়ার জন্য নির্ধারিত এক সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের আবেদন করতে। ২০১২ সালে মাহফুজ আলমের মনে হয় বাংলাদেশে ফিরে আসা তার জন্য এখন অনেকটাই নিরাপদ। কিন্তু এ জন্য তার প্রয়োজন একটি জন্ম সনদ। আবার ২০১৬ সালে তাকে সাক্ষাতকারে ডাকা হয়। ২০১৮ সালে তার ভ্রমণ সংক্রান্ত ডকুমেন্টের ফলোআপের জন্য ডাকা হয়। 

 

 

গত আগস্টে তিনি আবার সাক্ষাৎকার দিতে উপস্থিত হন। তাকে বলা হয় ভ্রমণ সংক্রান্ত ডকুমেন্টেরজন্য আবেদন করতে। ৭ই মে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নভেম্বরের সাক্ষাৎকারে উপস্থিত না হওয়ার কারণে চারদিন আটকে রাখা হয়। শাহেদের অভিযোগ, তার পিতা বা তাদের পক্ষের আইনজীবী কেউই ২৮ নভেম্বরের সাক্ষাৎকারের নোটিফিকেশন পাননি। তবে বর্ডারএজেন্সির নোটিশে বলা হয়েছে, ওই চিঠি পাঠানো হয়েছিল একটি ভুল ঠিকানায়। তা সত্তে¡ও মাহফুজ আলমের ব্যক্তিগত ইমেইল ঠিকানায় এর একটি কপি পাঠানো হয়েছিল। মাহফুজ আলমের ইমেইলে সেই চিঠির একটি কপি উদ্ধার করেছেন ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা। 

শাহেদ বলেন, যখন আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তিনি কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে তার ফোনে সার্স করে ওই ইমেইল বের করে দিতে। তিনি প্রশ্ন রাখেন- যদি তারা ইমেইল করেই থাকতো, তাহলে কেন বাবা তাদেরকে ফোন দিয়ে তা সার্স করে বের করে দিতে বলবেন? বাবা তো প্রযুক্তির বিষয়ে অতোটা জানেন না। ফলে তিনি ইমেইল নিয়ে অতো ঘাটাঘাটি করেন না। 

দেশে অবকাঠামো নির্মাণ সম্পর্কিত সাপ্লাই বিষয়ক স্টোরের মালিক মাহফুজ আলম। বলেছেন, কানাডায় অবস্থানকালে তিনি হোটেলে থালাবাসন মাজার কাজ করেছেন। প্রথমে টরোন্টোতে যাওয়ার পর তিনি কাজ নেন ‘লাইন কুক’-এর। গত ২০ বছর ধরে তিনি একজন মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করছিলেন। বলেছেন, আমি সপ্তাহের প্রতিটি ঘন্টা দেশে পরিবারের জন্য কাজ করেছি। টরোন্টোতে তার কেনা বাড়ির প্রসঙ্গে বলেন, ২০০৪ সালে তিন লাখ ডলার দিয়ে এই বাড়িটি কিনেছি, যাতে একদিন আমার পরিবারের সবাই এখানে এসে বসবাস করতে পারে। আশা করেছিলাম হয়তো সামনের বছর তারা আসতে পারবে। আবার পরের বছর একই ভাবনা। কিন্তু তারা আর আসতে পারেনি। 

প্রতি মাসে মাহফুজ আলম যে অর্থ উপার্জন করেছেন তার অর্ধেকটাই বাংলাদেশে পরিবারের সদস্যদের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাকি অর্ধেক দিয়ে বাড়ির মর্টগেজ দিয়েছেন। 

শাহেদ বলেছেন, বাবার সংস্পর্শ ছাড়া তিনি বড় হয়েছেন। তবে তার জন্য সবই করেছেন তার পিতা। ‘তিনি আমার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। তিনি যখনই এখানে বাসায় থাকতেন তখনই রান্না করতেন। মজা করে খেতেন। আবার ঘুমাতেন। তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে আমি খুব মিস করবো। আমি যখন কানাডায় এসেছি, তখন বুঝতে পেরেছি এখানে একটি কাজ খুঁজে পাওয়া কত কঠিন, যদি আপনার কানাডিয়ান ‘ক্রেডেনশিয়াল’ বা নেটওয়ার্ক না থাকে। প্রথমে সাসকাতুনে এসে আমিও প্রথমে থালাবাসন ধোয়ার কাজ করেছি।

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

‌‌‘‌আমাদের আকাশসীমা ব্যবহার করে ইরানে হামলা নয়’‌/ আমেরিকাকে সতর্ক করলো উপসাগরীয় দেশগুলো

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status