ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

নিপসম’র গবেষণা

করোনায় সেবা দেয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের ২৪ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন

স্টাফ রিপোর্টার
২৭ মে ২০২২, শুক্রবার

বাংলাদেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে (পিটিএসডি) আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে সরকারি একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের মধ্যে চিকিৎসকদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয়েছিল। এরপরেই ছিলেন টেকনোলজিস্ট ও  নার্স। পিটিএসডি’তে আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ,  টেকনোলজিস্ট ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং নার্স ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গতকাল নিপসম মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারিকালে স্বাস্থ্যকর্মীদের  ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব, কুশলবস্থা, সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্টরসমূহ মানিয়ে নেয়ার কৌশল’- শীর্ষক জাতীয় জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থায়নে এই গবেষণা পরিচালনা করে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)। গবেষণা দলের  প্রধান নিপসম’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ ফলাফল তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো আঘাতের কারণে পিটিএসডি হতে পারে এবং এর লক্ষণের মধ্যে রয়েছে পুরনো কথা মনে পড়া, দুঃস্বপ্ন, গুরুতর উদ্বেগ ও ঘটনা সম্পর্কে নিয়ন্ত্রণহীন চিন্তা। বাংলাদেশে করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের ওপর মানসিক প্রভাব, সংশ্লিষ্ট কারণ ও মোকাবিলার কৌশল শীর্ষক গবেষণাটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে এক হাজার ৩৯৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর। তাদের মধ্যে ছিলেন- ৫৯৬ জন চিকিৎসক, ৭১৩ জন নার্স এবং ৮৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। এসব স্বাস্থ্যকর্মী অন্তত এক মাস করোনা রোগীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন জরিপ কর্মীরা।

বিজ্ঞাপন
জরিপে দেখা গেছে, নারীদের পিটিএসডি’র ঝুঁকি ছিল বেশি। যাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৯ শতাংশেরই পিটিএসডি ছিল। তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬ শতাংশ ছিলেন বিবাহিত। স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের কাজের চাপ অনেক বেশি ছিল, তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর (পিপিই) অপ্রতুলতায় ছিলেন এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই মানসিক চাপে ছিলেন, ক্লান্ত ছিলেন এবং অনেকেরই ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছিল। প্রতিবেদনে একজন অংশগ্রহণকারীর বরাত দিয়ে বলা হয়, সংক্রামক রোগ হওয়ায় রোগীদের মতো আমাদেরও একই ভয় ছিল। অনেক কিছুই আমাদের কাছে ছিল অজানা। হাসপাতালগুলোও এই ধরনের নতুন রোগের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত ছিল না। রোগী, গণমাধ্যম ও গণমানুষসহ সমাজের নেতিবাচক মনোভাবের পাশাপাশি কাজের সময় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আমাদের মানসিক চাপকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
নিপসম’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ জানান, পিটিএসডি আক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা সবার থেকে দূরে সরে থাকতে পারেন বা চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন বা তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকতে পারে। তিনি জানান, এই স্বাস্থ্য সমস্যাটির সমাধান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করা উচিত। গবেষণায় স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের মানসিক সুস্থতায় কাউন্সেলিং প্রোগ্রামের ব্যবস্থা জোরদার ও প্রবর্তনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অধ্যাপক বায়জীদ বলেন, পিটিএসডিতে আক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা এখন কীভাবে কাজ করছেন সে সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। কেননা, গবেষণার তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে গত বছর।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন প্রমুখ।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status