ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বন্যাকবলিত মানুষ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৫ মে ২০২২, বুধবার
mzamin

বন্যার পানি নামছে। সেই সঙ্গে অসুখ, বিসুখ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় কিছু কিছু মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬৯ জন। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। কেউ ভুগছেন চর্ম রোগে, কেউ ডায়রিয়া আবার কেউ ঠাণ্ডাজনিত রোগে। আশ্রয় কেন্দ্রেও অসুস্থ ছিলেন অনেকেই। এই অবস্থায় সিলেটে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। আগামী এক সপ্তাহ বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলয়েডের মাধ্যমে যেকোনো পানি বিশুদ্ধ করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সিলেট নগরীর ছড়ারপাড়ের বউবাজার, কলোনি এলাকা, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পানি সর্বশেষ গতকাল সকালে নেমেছে।

বিজ্ঞাপন
এর আগে টানা এক সপ্তাহ বউবাজারের মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। ফারুক মিয়ার কলোনির বাসিন্দা নুরুজ্জাজামান। পা-হাত দেখিয়ে জানালেন; পানির কারণে চর্ম রোগ। এখন শুধু চুলকায়। পাশে থাকা শিশু বাচ্চাকে দেখিয়ে বললেন; গত দু’তিনদিন ধরে তার ডায়রিয়া। বউবাজারেই মিললো আরও কয়েকজন রোগী। জ্বরে আক্রান্ত অনেকেই। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাদের অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন। ওখানে ডাক্তার দেখেছে। ওষুধ দিয়েছে। এলাকার কাউন্সিলর সর্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন। এখনো রোগ ব্যাধি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি। তবে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। এটা পানি থেকে হয়েছে বলে জানান তারা। ফারুক মিয়ার কলোনির কেয়ারটেকার নাসিমুর রহমান জানিয়েছেন, পানিবাহিত রোগের মধ্যে অনেকেই ডায়রিয়া, কলেরা, নিউমোনিয়া, এলার্জিসহ নানা রোগে ভুগছেন। পানি থাকা অবস্থায় সিটি করপোরেশন থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলয়েড দেয়া হয়েছিল। ওরস্যালাইনও পেয়েছেন। আজ-কালের মধ্যে সিটি করপোরেশনের মেডিকেল টিমও আসবে বলে জেনেছি। তিনি জানান, রোগ ব্যাধি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ব্যাপক হারে ছড়ায়নি। শহর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বন্যার পানি ওঠার কারণে নগরের অর্ধশতাধিক এলাকায় ড্রেনের ময়লা, স্যুয়ারেজের ময়লা সব একাকার হয়ে গেছে। অনেক স্থানে পানি কালচে রং ধারণ করে। আর এই পানিতে দুর্গন্ধও বেশি। পানি নেমে যাওয়ায় অনেক স্থানে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সিলেটের কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন ওই এলাকা থেকে পানি নামছে। ছড়িয়ে পড়ছে নানা অসুখ-বিসুখ। জেলা সিভিল সার্জনের মেডিকেল টিমের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ দুটি উপজেলায় ডায়রিয়াসহ নানা চমরোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। যাদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে চিকিৎসকরা ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। পানি নামার পর যাতে রোগব্যাধি ব্যাপক আকারে না ছড়ায় সে জন্যে তাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, পানি নেমে গেলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট আছে। এ কারণে আমাদের পক্ষ থেকে বেশি করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলয়েড দেয়া হচ্ছে। আগামী ৭ দিন টিউবওয়েলের পানি হলেও বিশুদ্ধ করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। জানান, সিলেট নগর এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে প্রতিদিন তিনটি মেডিকেল টিম কাজ করেছে। এছাড়াও তারা বাসাবাড়িতে গিয়ে সেবা দিয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দু’জন করে স্বাস্থ্যকর্মী তদারকিতে আছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে আরও তিনটি মেডিকেল টিম গঠন করা হচ্ছে। নগরের মানুষ যাতে চিকিৎসা সংকটে না পড়েন সে বিষয়টি মাথায় রেখে চিকিৎসা চক সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, ওসমানীনগরসহ কয়েকটি এলাকার বন্যাদুর্গতরা অভিযোগ করেছেন, হাওর কিংবা বেশি দুর্গম এলাকার মানুষজন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এক সপ্তাহ পানিবন্দি থাকার পর এখন বন্যাদুর্গতদের মধ্যে অসুস্থতা বেড়েছে। বিশ্বনাথের খাজাঞ্চি ও লামাকাজি এলাকায় মানুষও নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এজন্য নৌকা যোগে মেডিকেল টিমকে প্রত্যন্ত এলাকায় যাওয়ার দাবি জানান এসব এলাকার লোকজন। সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এসএম শাহরিয়ার জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে সিলেটে এ পর্যন্ত ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬৯ জন। কেউ কেউ সরকারি হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার বেশি ভাগ এলাকায় মেডিকেল টিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে। নগরের নিচু এলাকায়ও ডায়েরিয়ার আক্রান্তের হার বেশি। এছাড়া জকিগঞ্জ, কানাইঘাটের কিছু কিছু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। পানিবাহিত নানা রোগে মানুষ আক্রান্ত বেশি। ইতিমধ্যে জেলায় ১৪০টি মেডিকেল টিমের মাধ্যমে গোটা জেলায় নৌকা দিয়েও মেডিকেল টিম তাদের এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। যতদিন দুর্যোগ না কমে ততদিন পর্যপ্ত চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status