শেষের পাতা
সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল
এখনো সময় আছে, পদত্যাগ করুন
স্টাফ রিপোর্টার
২৪ মে ২০২২, মঙ্গলবারবিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। বলেছেন, অন্যথায় জনগণ আপনাদের ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ দেবে না। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখনও সময় আছে পদত্যাগ করুন। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতু থেকে খালেদা জিয়াকে ফেলে দেয়ার বক্তব্যকে হত্যার হুমকি দাবি করে এর প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ-সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে শত শত দলীয় নেতাকর্মী ব্যানারসহ মিছিল সহকারে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে জড়ো হন। এক পর্যায়ে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রায় তিনঘণ্টা সমাবেশ চলে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো সভ্য দেশের মানুষ এটা সহ্য করতে পারে না।
শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর বড়াই করছেন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, পদ্মা সেতু আপনার একার নয়, আওয়ামী লীগের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পদ্মা সেতু হয়েছে। এখানে যে অনিয়ম করেছেন তা সব দুর্নীতির সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দেশবাসী জানতে চায় পদ্মা সেতুর জন্য জনগণের কাছ থেকে কত টাকা কেটেছেন? সেখান থেকে কত টাকা পদ্মা সেতুতে ব্যয় করেছেন, আর কত টাকা আপনাদের পকেটে ভরেছেন? জনগণ জানতে চায়, সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে কত টাকা নিয়েছেন, তার জন্য দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কত টাকা গুনতে হবে?
তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন উন্নয়ন বলে চিৎকার করে। এই আমলে কার কী উন্নয়ন হয়েছে তার ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনারা উন্নয়ন করেছেন পিকে হালদারের। উন্নয়ন করেছেন আপনাদের শিক্ষামন্ত্রীর ভাইয়ের। উন্নয়ন করেছেন ফরিদপুরের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ভাইয়ের। উন্নয়ন করেছেন আপনাদের, যারা ক্ষমতায় আছেন। আপনারা একটা লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করেছেন। জনগণের কোনো উন্নয়ন হয়নি। দ্রব্যমূল্যের চাপে সাধারণ মানুষ দিশাহারা। কৃষক-শ্রমিক-মজুর যারা দিন আনেন দিন খান তারা হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তারা জীবনযাপন করতে পারছে না। আপনাদেরতো কোনো অসুবিধা হয় না।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনি নিজেই বলেছেন যে আপনি চার দেয়ালে বন্দি। আপনিতো জনগণের কাছে যেতে ভয় পান। সেজন্য জনগণের সামনে আপনি আসেন না। জনগণের সামনে এলে আপনি জনগণের ভাষা বুঝতে পারতেন। আপনি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি দেন। দেশনেত্রী হচ্ছেন সেই নেত্রী যিনি এই দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় নেতা। কোনো নির্বাচনে তিনি পরাজয় বরণ করেননি। তার সারাটা জীবন তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। এখনও তিনি গণতন্ত্রের জন্য গৃহে অন্তরীণ হয়ে আছেন।
খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন যদি তার উন্নত চিকিৎসা না হয় তাহলে তার জীবন হুমকির সম্মুখীন হবে। আজকে এখান থেকে আহ্বান জানাতে চাই, দাবি জানাতে চাই, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। বিএনপির ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে জানিয়ে মহাসচিব বলেন, সেগুলো তুলে নেন, যারা কারাগারে আছেন তাদেরকে মুক্ত করেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার করুন। আপনারা তারেক রহমানকে ভয় পাচ্ছেন, তিনি দেশে এলে আপনারা এক মুহূর্তও টিকতে পারবেন না। তিনিতো দেশে ফিরে আসবেনই। এদেশের মানুষ তাকে ফিরিয়ে আনবে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও দুই মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরাফত আলী সপু, আব্দুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, ফখরুল ইসলাম রবিন, সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, নুরুল ইসলাম নয়ন, মামুন হাসান, আমিরুল ইসলাম আলীম, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, গোলাম মাওলা শাহীন, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ইয়াসিন আলী, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।