প্রথম পাতা
দাম বাড়ানোর পরও চিনির সরবরাহ বাড়েনি
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবারকয়েক মাস ধরেই চিনির বাজার অস্থির। ডলার নৈরাজ্যে আমদানি সংকট ও জ্বালানির দাম বাড়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে গত ২৬শে জানুয়ারি আরেক দফা দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন। ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে গত পাঁচ মাসে মোট ৪ বার বাড়ানো হয়েছে চিনির দাম এর পরও বাজারে পণ্যটির সরবরাহ বাড়েনি। প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ খুবই কম।
বিক্রেতারা বলছেন, মিলগেট থেকে নির্ধারিত দরে চিনি মিলছে না। তাই নতুন দরে চিনি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ডিলারদের বিরুদ্ধে কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ বিক্রেতাদের। একইসঙ্গে রমজান মাসকে সামনে রেখে কোম্পানিগুলো চিনির সরবরাহ বাড়াতে গড়িমসি করছে। আর ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারের বেঁধে দেয়া দামেও চিনি মিলছে না বাজারে। বাধ্য হয়ে বাড়তি দাম দিয়ে চিনি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের।
অন্যদিকে চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বরাবরের মতোই বলছে, ঋণপত্র বা এলসি খোলা সংক্রান্ত সমস্যা থাকায় আমদানি কম। এ সমস্যার সমাধান না হলে সামনের দিনগুলোতে সরবরাহ বাড়বে কিনা, তা বলা যাচ্ছে না। দেশে প্রতি মাসে গড়ে পৌনে দুই লাখ টন চিনির চাহিদা থাকলেও রমজানে তা বেড়ে দাঁড়ায় তিন লাখ টনে।
গত পাঁচ মাসে মোট ৪ বার চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৬শে জানুয়ারি চিনির কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন। সংগঠনটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল থেকে খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনির কেজি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকায় বিক্রি কার্যকর হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব দোকানে এখনো প্যাকেটজাত চিনির সংকট রয়েছে। কিছু দোকানে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজির দাম রাখছেন ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, এক বছর আগে চিনির কেজি ছিল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। সেই হিসাবে, এক বছরে দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪২ টাকা। অর্থাৎ ৫০ শতাংশের বেশি।
মুদি দোকানি খায়রুল আলম বলেন, বাড়তি দরের চিনি এখনো বাজারে আসেনি। খোলা চিনি ১০৭ থেকে ১০৮ টাকা দরে কিনতে হয় আমাদের। বিক্রি করতে হয় ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। বাজারে যদি সব কোম্পানি সমানতালে চিনি দিতো, তাহলে সংকট থাকতো না। এখন কেউ দেয়, কেউ দেয় না।
কাওরান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফ বলেন, কোম্পানি আর ডিলারদের মধ্যেই যত সমস্যা। তারা সরবরাহ ঠিক রাখলে বাজারে এতে সমস্যা হতো না।
তিনি বলেন, চিনির দাম বাড়িয়ে লাভ কী? চিনিই তো নেই। দেবে দেবে বলেও দিচ্ছে না। একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি এ পর্যন্ত ছয়-সাতবার ক্রয়াদেশ নিয়ে গেছেন। কিন্তু একবারও চিনি দেননি। পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে খোলা চিনির কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, সরকার পরিশোধনকারীদের দামের বিষয়ে যে নির্দেশনা দেয়, তারা সেটিই মেনে নেন। কিন্তু ঘোষিত দাম কার্যকরের আগেই কেউ বেশি দাম নিচ্ছে কিনা, সেটি দেখভালের দায়িত্ব সরকারের। বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূল কথা হলো এলসি (ঋণপত্র)। ব্যাংক যদি এলসি খোলে, তাহলে চিনি আমদানি করা যাবে। তখন বাজারেও সংকট থাকবে না। কিন্তু এলসি না হলে পরিশোধনকারী চিনি সরবরাহ করবে কীভাবে।