প্রথম পাতা
যুগপৎ আন্দোলনে মানুষের আস্থা সৃষ্টি হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবারবিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে জনগণের আস্থা বেড়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ১০ দফা দাবির সঙ্গে একমত হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়াই করছেন, সংগ্রাম করছেন। এটা নিসন্দেহে চলমান আন্দোলনে অনেক বড় মাত্রা যুক্ত করেছে এবং জনগণকে আশ্বস্ত করেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের চরিত্র ও কর্মকা- জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে এসে গেছে। তারা এ দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সব সময় ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড পার্টি’। কারণ তারা মুখে বলে একটা, কাজ করে আরেকটা। তারা এই দেশের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা করেছে, তাহলো দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে একটা সমাজ, সেটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। গতকাল দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপি’র লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের বিভাগীয় সমাবেশের সময় তিনদিন আগে থেকে যানবাহন বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগ। তিনদিন আগে পুলিশকে নামিয়ে দিয়ে চেকপোস্ট বসায়। মোবাইল ফোন পর্যন্ত তারা চেক করতে থাকে। ঢাকার সমাবেশের আগে তারা ১৫ দিনের বিশেষ অভিযান চালিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে হাজার হাজার লোককে ধরে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কৌশল। যেকোনো মূল্যে হোক বিরোধী দলকে তারা কর্মসূচি করতে দেবে না। অন্যদিকে ভিন্নমত সহ্য করবে না। আর তারা তাদেরটা করতেই থাকবে। সে ক্ষেত্রে তারা রাষ্ট্রের সব যন্ত্রকে ব্যবহার করছে।
এর আগে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চলমান যে আন্দোলন, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। দেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করেছি। এই আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য ভবিষ্যতের কর্মসূচি কী হওয়া উচিত, আর কী ধরনের কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে, জনগণকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকে আমরা একমত হয়েছি। এই ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক, অনির্বাচিত সরকারের পতনের লক্ষ্যে আমরা যুগপৎ আন্দোলনের মধ্যদিয়েই জনগণকে সম্পৃক্ত করছি। সামনের দিকে আন্দোলনকে আরও বেগবান করে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা এবং খালেদা জিয়াসহ সব কারাবন্দির মুক্তির দাবিতে আমরা একমত হয়েছি।
১২ দলীয় জোটের পক্ষে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বলেন, বিএনপির সঙ্গে ১২ দলীয় জোটের বৈঠকে আলোচনা করে একটা স্থির সিদ্ধান্তের দিকে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আমি সুনির্দিষ্টভাবে সেই সিদ্ধান্তের কথা এখনই বলতে চাই না। তবে এটুকু বলতে চাই, সারা দেশে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সমস্ত সরকারবিরোধী শক্তি আজ সংকল্পবদ্ধ, ঐক্যবদ্ধ। এখন আমাদের কাজ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানো। তিনি বলেন, ১০ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এই দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী, যারা আজ কারাগারে তাদের মুক্তির লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আগামী ৪ঠা ফেব্রুয়ারি যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে নতুন যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, সেদিন আমরা ঘোষণা করতে চাই আরও বৃহত্তর কর্মসূচি। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
১২ দলীয় জোটের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ শাহজাহান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন। ১২ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপি’র ক্বারী মো. আবু তাহের, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপা’র রাশেদ প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের তফাজ্জল হোসেন।