ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

জাপানি মায়ের কাছে থাকবে সেই দুই শিশু

স্টাফ রিপোর্টার
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার
mzamin

বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের সেই দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় থাকবে বলে রায় দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের    বিচারক দুরদানা রহমান বাবার দায়ের করা মামলাটি খারিজ করে এ রায় দিয়েছেন। শিশুদের মায়ের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আদালত মামলা খারিজ করে রায় দেয়ায় শিশু দু’টি মায়ের জিম্মায় থাকবে। ফলে দুই শিশুকে নিয়ে জাপান যেতে পারবেন তাদের মা নাকানো এরিকো। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, নাবালক বা নাবালিকা- তাদের হেফাজত নির্ণয়ে সবচেয়ে বেশি মঙ্গল যেটি তা গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক তথা সবকিছু বিবেচনায় রেখে মামলা নিষ্পত্তিতে গুরুত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়া বাবার কাছে থাকলে মেয়ে দুটির মঙ্গল হবে কিনা তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বাবা। বিচারক বলেন, নাবালিকা দুই শিশুর বসবাসের স্থান জাপান। তাদের মা জাপানের চিকিৎসক। তাই মায়ের হেফাজতে তাদের শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তা থাকবে বলে মনে করেন আদালত।

বিজ্ঞাপন
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে ইমরান শরীফের আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী রায়ে অসন্তুষ্ট। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করবো। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুই সন্তানের বিদেশ যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপান থেকে আসা এই দুই শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব চেয়ে ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা করেন তাদের বাবা ইমরান শরীফ। এ মামলায় আদালতে বাদীপক্ষে ৩ জন সাক্ষ্য দেন। আর বিবাদীপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাপানি মা নাকানো এরিকো। 

আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ ও দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে গতকাল রায় ঘোষণা করলেন। গত ২২শে জানুয়ারি মামলাটির উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। জাপানি মা নাকানো এরিকোর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির যুক্তিতর্কে আদালতে বলেন, বড় মেয়ের বয়স ১৩ বছর, মেজো মেয়ের বয়স ১১ বছর ও ছোট মেয়ের বয়স ৯ বছর। ঢাকায় আনা দুই মেয়ের ১৮ বছর হতে এখনো ৫-৭ বছর বাকি। টোকিওতে বিশ্বের ভালো ভালো স্কল কলেজ রয়েছে। মায়ের কাছে থাকলে তারা ভালো থাকবে। ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে পারবে। মেয়েরাও চায় মায়ের কাছে থাকতে। অপরদিকে বাবা ইমরান শরীফের পক্ষের আইনজীবী নাছিমা আকতার আদালতে বলেন, বাদী-বিবাদীর বিয়ে মুসলিম শরীয়তের বিধান অনুসারে হয়েছে। এতে বাচ্চাদের জিম্মার বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মেয়ে সন্তানরা মায়ের কাছে থাকবে। সাবালক হওয়ার পর বাবার জিম্মায় থাকতে পারে। তবে আইনে মায়ের জিম্মা হারানোর বিষয়ে এটাও বলা আছে, কোনো মা যদি বিবাহিত থাকা অবস্থায় আবাসিক ভবন থেকে দূরে বসবাস করেন তাহলে মা সন্তানদের জিম্মা হারাবেন। কারণ ভরণ-পোষণের জন্য বাবাকে দরকার। আইনজীবী নাসিমা আক্তার বলেন, জাপানের আইনে চরমভাবে বর্ণ বৈষম্য করা হয়। সেখানে ভারতীয় উপমহাদেশের যে কাউকে তাচ্ছিল্য করা হয়। 

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কেউ ভালো চাকরিতে ঢুকতে পারে না। অথচ বাংলাদেশে বিদেশি কেউ আসলে তাদের যথাযথ মর্যাদা দেয়া হয়। বাংলাদেশ এত খারাপ দেশ না যে, কোনো বাচ্চা ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারবে না। আমাদের দেশ কি এতটাই খারাপ যে, দুইটা শিশুর ভরণ-পোষণ করতে পারবে না। বাংলাদেশি বলে কি সন্তান থেকে নিঃসন্তান থাকবেন। বাবার পক্ষে আরও বলা হয়, মা জেরায় স্বীকার করেছেন, প্রতিদিন তিনি ১১ ঘণ্টা বাইরে থাকেন। মা যদি সন্ধ্যা ৬টায় বাসায় আসেন তাহলে ঘুমানোর আগে ৩ ঘণ্টা সময় পান। অন্যদিকে মেয়েদের জন্য বাবা ইমরান শরীফ তুলনামূলক বেশি সময় দেন। একমাত্র জন্মদান বাদে বাবা ছোটবেলা থেকে তাদের দৈনন্দিন যত্নের জন্য বেশি সময় দিয়েছেন। বাদী মা এরিকো জেরায় সেটা স্বীকার করেছেন। জীবনের সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বাচ্চাদের জন্য লড়ে যাচ্ছেন বাবা। বাবার কাছে থাকলে মেয়েরা ভালো থাকবে। মেয়েরাও বাবাকে চায়। বাবা সম্পূর্ণ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছে। বাবার গাইডলাইনে মেয়েরা ভালো থাকবে। আরও বলা হয়, মায়ের কাছে থাকা অবস্থায় বড় মেয়ে জেসমিন অ্যালার্জিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হলে মা চিকিৎসা করেনি। তাকে চিকিৎসার জন্য আমরা আদালতে বাবার পক্ষ থেকে আবেদন করেছি। এ ছাড়া দেড় বছর ধরে বাংলাদেশে মায়ের কাছে থাকলেও মেয়েকে বাসায় রান্না না করে ফুড পান্ডা থেকে অর্ডার করে খাইয়েছেন। শিশু সুস্থ থাকবে কী করে।  ২০০৮ সালে মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। 

১২ বছরের সংসারে তারা ৩ কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তারা হলো- জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান। এরপর ওই দুই মেয়েকে জিম্মায় পেতে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গতবছর জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দু’টিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেয়ার আদেশ দেয়। এরপর গত বছর ১৩ই ফেব্রুয়ারি দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি হবে পারিবারিক আদালতে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় আপিল বিভাগ। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে। এদিকে গত ২৯শে ডিসেম্বর সন্তানসহ পালানোর চেষ্টার অভিযোগে জাপানি মা এরিকো নাকানোর বিরুদ্ধে সন্তানদের বাবা ইমরান শরিফ ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন। যা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status