শেষের পাতা
মিসবাহ সিরাজের প্রশ্ন
‘আনোয়ার শোডাউন দিলেন কার বিপক্ষে’
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবারসিলেটে ক্ষমতার রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। সেটি কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সিলেট-১ আসনকে ‘ভিআইপি’ আসন বলে স্থানীয় রাজনীতিকদের ঠাঁই দেয়া হয় না। সিলেট-২, সিলেট-৩ আসনটি চলে যায় প্রবাসীদের দখলে। বাকি থাকা তিনটিতেও স্থানীয় রাজনীতিকরা নেই। কেউ পাকিস্তানি, কেউ করিমগঞ্জী। বাকি ছিল মেয়র পদ। সেটিও চলে যাচ্ছে। এখন সিলেটের রাজনীতি চলে যাচ্ছে লন্ডনের কর্তৃত্বে। আফসোসের সঙ্গে এসব কথা বললেন সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
অথচ সিলেটের প্রয়াত নেতা কামরানের বেলায় আমরা এমনটি ঘটতে দেইনি। সিলেট থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে সভানেত্রীর কাছে যেতাম। আমি তখন মহানগর সেক্রেটারি। সভানেত্রীর কাছে পৌর চেয়ারম্যান কিংবা মেয়র পদে কামরানের নাম আমিই প্রস্তাব করেছি। সভানেত্রী প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু শেষ বেলায় এসে আমরা কামরানকে মূল্যায়ন করতে পারিনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও পর পর দুইবার কামরান হেরেছেন। এই দুঃখ এখন কার কাছে বলি।’ তিনি আফসোস করে বলেন- ‘কামরান কেন পরাজিত হয়েছেন, কারা ষড়যন্ত্র করেছে- সিলেটের মানুষ সবই জানেন। অথচ দোষ দেয়া হয় আমার ওপর। নেত্রীর কানে পৌঁছানো হয় আমার কথা। কিন্তু নির্বাচনের দিন সিলেটে এসে এক মন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন- কামরানও ভালো, আরিফও ভালো। সেটি তো আমরা ভুলি নাই।’ সিলেটের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনেক নেতাই শেষ দিকে এসে মূল্যায়িত হননি বলে মনে করেন সিলেট আওয়ামী লীগের এ বর্ষীয়ান নেতা। তার মতে- ‘মরহুম আবু নসর, আ ন ম শফিকুল হক, ইফতেখার হোসেন শামীম যেভাবে দলের জন্য নিবেদিত ছিলেন সে অনুযায়ী তারা দলের কাছ থেকে মূল্যায়িত হননি। ইফতেখার হোসেন শামীমকে ষড়যন্ত্র করে পদ থেকে সরানো হয়েছে। আবু নসর, আ ন ম শফিকুল ইসলাম দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ হলেও ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারেননি। তারা মূল্যায়িত না হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছেন। এই ব্যর্থতা আমাদেরও।
তবে এখনই সময় সিলেটে ক্ষমতার রাজনীতি ও দলীয় রাজনীতি একীভূত করতে হবে। আমাদের টার্গেট জাতীয় নির্বাচন। কর্মী এবং নেতারা মূল্যায়িত না হলে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা কঠিন হবে।’ মিসবাহ সিরাজ জানান, ‘আমরা রাজনীতিবিদ। অনেকেই উড়ে এসে ক্ষমতার রাজনীতির স্বাদ গ্রহণ করছেন। দুঃসময়ে তারা সিলেটে ছিলেন না। আগামীতেও থাকবেন না। আমরাই থাকবো। বিএনপি- জামায়াত ক্ষমতায় এলে মিসবাহ সিরাজদের মতো নেতারাই নির্যাতিত হবে।’ সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একীভূত অবস্থা ফিরিয়ে আনার সর্বশেষ কাণ্ডারি ছিলেন মরহুম বদরউদ্দিন আহমদ কামরান- এমনটাই দাবি মিসবাহ সিরাজের। এখন কামরান নেই। কোথাও যাওয়ার দরোজা নেই। তিনি নিজেও ব্যাকফুটে। কেউ কী তার কথা শুনবে। এরপরও নিজে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বললেন। প্রয়োজনে নেত্রীর কাছে যাবেন। নেতাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন বলে জানান। মিসবাহ বলেন, ‘যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান সিলেটের সন্তান। তিনি নিজ এলাকা বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে পরিচিত মুখ। ওখানেই তিনি রাজনীতি করছিলেন। নগরের মানুষের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। আমরা যারা রাজনীতি করি; নগরে আছি। বন্যা, খরা, দুর্যোগে মানুষের সুখে, দুঃখে কাজ করেছি, করছিও। পরিচিতি রয়েছে। আনোয়ারকে এখন এসে নতুন করে পরিচিত হতে হবে। এ ছাড়া, দলীয় প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন দেয়া হয়।
সেটি তো আনোয়ার করেননি। তিনি এসে অবস্থান তৈরি করে নেত্রীর কাছে বলতে পারতেন। কিন্তু অবস্থান তৈরির আগেই তিনি মেয়র পদে ঘোষণা দিয়েছেন। এ কারণে অনেকেই মনঃক্ষুণ্ন।’ সিলেটে আনোয়ারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেন মিসবাহ সিরাজ। বলেন- ‘আনোয়ার সিলেটে এসে নাদেলকে নিয়ে কার বিপক্ষে শোডাউন দিলেন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তো সেখানে যাননি। তাহলে কী ওদের বিপক্ষে আনোয়ারের শোডাউন। সিলেটের নেতাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে কী আনোয়ারের এই শোডাউন। আর শোডাউনের প্রয়োজনই বা কী’- এমন প্রশ্ন ছুড়েন মিসবাহ সিরাজ। বিগত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনোয়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন মিসবাহ সিরাজ। বলেন- ‘ওই নির্বাচনের অন্তরালের ঘটনা কী ঘটেছিল সেটি সবাই জানেন। নতুন করে আর বলতে হবে না।’ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেটের সন্তান শফিউল আলম নাদেলের আনোয়ার প্রসঙ্গে রাজনীতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মিসবাহ সিরাজ। বলেন- ‘নাদেল এসব কেন করছেন- বুঝতে পারছি না। তার এখানে ইন্টারেস্ট কী।’ এসব প্রশ্নই এখন তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
মানবজমিনের প্রতিবেদকের কথা বলার শেষ পর্যায়ে মিসবাহ সিরাজ জানান দেন তিনি আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। দক্ষিণ সুরমায় রয়েছে ৯টি ও টুকেরবাজারের আরও ৪-৫টি ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা তাকে আওয়ামী লীগের মেয়র পদে চাইছেন। তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন এজন্যই যে; সিলেটে ক্ষমতার রাজনীতি ও দলীয় রাজনীতির দূরত্ব অনেক। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই দূরত্ব কমিয়ে আনতে তিনি প্রার্থী হবেন। যেহেতু সিলেটের মাটি ও মানুষের নেতা কামরান নেই, এ কারণে এই দায়িত্ব এখন মিসবাহ সিরাজই কাঁধে তুলে নিতে চান বলে জানান। একই সঙ্গে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের ক্ষমতার রাজনীতির কাছাকাছি নিয়ে যেতে তার চেষ্টা অবিরাম থাকবে বলেও জানান তিনি।