পদত্যাগ করুন, না হলে ভারাক্রান্তভাবে চলে যেতে হবে -ফখরুল

সরকারকে আবারো পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আর কালবিলম্ব না করে আপনারা অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন। অন্যথায় অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হয়ে চলে যেতে হবে। পালানোর পথ পাবেন না বলেও হুঁশিয়ারি করেছেন তিনি। গতকাল দুপুরে রাজধানীর শাহজাদপুরের সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরুর আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এই হুঁশিয়ারি দেন।  গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল রাজধানীতে পদযাত্রা করে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র উদ্যোগে সুবাস্তুর সামনে থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়। এতে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারাসহ হাজার হাজার  নেতাকর্মী অংশ নেন।  ফখরুল ইসলাম বলেন, চালের দাম বেড়ে গেছে, ডালের দাম বেড়েছে, ডিম, তেল, লবণের দাম বেড়ে গেছে। আমার খেটে খাওয়া রিকশা শ্রমিক ভাইয়েরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না।

তারা চাল, ডাল, তেল, লবণ কিনতে পারছেন না। 

আজকে কথা বলতে গেলেই গ্রেপ্তার। প্রতিবাদ করতে গেলেই মামলা। আজকে সমগ্র বাংলাদেশকে এরা একটা কারাগারে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, আজকে আমাদের ভোটের অধিকার নেই। এই ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদেরকে কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এখন তিনি গৃহবন্দি। তাকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান যিনি মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সুদূরে নির্বাসিত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা, তা প্রত্যাহার করতে হবে। যারা কারাগারে আছেন তাদেরকে মুক্ত করতে হবে।  দেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এ কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মধ্যদিয়ে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণ ভোট দিয়ে তার সরকার নির্বাচন করবে। সেই সরকার আমাদের দেশ পরিচালনা করবে। মহাসচিব বলেন, আজকের এই পদযাত্রার মধ্যদিয়ে সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই আর কালবিলম্ব নয়, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার ক্ষমতা দিন। অন্যথায় আপনাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হয়ে চলে যেতে হবে, আপনারা পালানোর সুযোগ পাবেন না। পদযাত্রা নিয়ে তিনি বলেন, আজকে আমরা একটা নতুন আন্দোলন শুরু করলাম।

 ঢাকা শহরে নীরব যাত্রার মধ্যদিয়ে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করবো। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যদিয়েই আমরা এদের (সরকার) পতন ঘটাবো ইনশাআল্লাহ। এদিকে, বিএনপি’র পূর্বঘোষিত পদযাত্রায় সকাল থেকে বাড্ডা এলাকায় জড়ো হন দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। বেলা দুইটার দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা বাড্ডা সুবাস্তুর সামনে উপস্থিত হন। বেলা ২টা ১৭ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশ শুরু হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। বেলা আড়াইটার দিকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে সড়কের একপাশ দখল করেন নেতাকর্মীরা। এতে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। পদযাত্রাটি বাড্ডা থেকে রামপুরা হয়ে বিকাল ৪টায় মালিবাগের আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সরজমিন দেখা যায়, পদযাত্রা কর্মসূচির সামনের অংশে মহিলা দল সরকার বিরোধী স্লোগান নিয়ে যাত্রা করে। 

শেষ অংশে ছিল জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার পদযাত্রার মধ্যদিয়ে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষ করে বিএনপি।  ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র উদ্যোগে আগামী ৩১শে জানুয়ারি আরেকটি পদযাত্রা গাবতলী থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে ৩০শে জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত এবং ১লা ফেব্রুয়ারি মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করা হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নীরব, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ।