ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের ওয়েবিনার

রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে দরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার
mzamin

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভেঙে দেয়া হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অশান্তি সৃষ্টিকারী রায়। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় প্রদানকারী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে পর পর তিন দফায় আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিয়ে সে রায়ের জন্য মূলত পুরস্কৃত করা হয়েছে। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে অপরাজনীতি হয়েছে। আইনকে অস্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ীর নিকট শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রয়োজন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বর্তমান সংকট যতটা না সাংবিধানিক, তারচেয়ে   বেশি রাজনৈতিক।  গতকাল ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘সংবিধান সংশোধনের (অপ) রাজনীতি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। আলোচক হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।

বিজ্ঞাপন
এ ছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র আইন কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. রিদওয়ানুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শহীদুজ্জামান, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ব্যারিস্টার আদিবা আজিজ খান। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে জনগণের মতামত নেয়া হয়নি, যা অসাংবিধানিক। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে অপরাজনীতি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইনকে অস্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের বিধ্বংসী পরিণতি হলো, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দু’টি ব্যর্থ ও একতরফা নির্বাচন, দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ঘাটতি তৈরি হওয়া এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সেস’ পদ্ধতি বা নজরদারিত্বের কাঠামো সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়া।  বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিরাজমান সংকটের আশু সমাধানের জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়, সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য প্রয়োজন আরেকটি রাজনৈতিক বন্দোবন্ত। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে যা থাকতে পারে তা হলো-নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ঐকমত্য, সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা, কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; আইনের শাসন নিশ্চিত ও মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন।  সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিগত ৫০ বছরে আদালত যতগুলো রায় দিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর রায় হলো ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত রায়। এই রায়ের ফলেই আমাদের জনগণের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে গেছে এবং আমাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভেঙে গেছে। আমি মনে করি, আগে থেকেই রায় ঠিক করে নিয়ে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত উপেক্ষা করে এবং অবাস্তব যুক্তির ভিত্তিতে তাড়াহুড়ো করে এই রায় দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রিপাবলিক মানেই সবাইকে নির্বাচিত হতে হবে তা নয়। গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য অল্প সময়ের জন্য অনির্বাচিত সরকার থাকলে তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না। এত তাড়াহুড়ো করে পঞ্চদশ সংশোধনী বিলটি পাস করা হয়েছে যে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের সঙ্গে অমিল রয়ে গেছে। মূলত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই এই সংশোধনী আনা হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে পাঁচ বছর পর আমরা একটা দিন নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের পছন্দের সরকার বাছাই করার সুযোগ পেতাম। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে সে সুযোগ রহিত করে দেয়া হয়েছে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। বর্তমান সংকট যতটা না সাংবিধানিক, তারচেয়ে বেশি রাজনৈতিক এমন মন্তব্য করে ওয়েবিনারে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেরামত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে, শুরুতেই সকলের অংশগ্রহণের জায়গা নিশ্চিত করতে হবে। আর সেক্ষেত্রে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন সবকিছু না হলেও এটাই হলো প্রথম পদক্ষেপ। এর বিকল্প নেই। অধ্যাপক ড. রিদওয়ানুল হক বলেন, যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার তুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন সেইসব বিচারপতিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। আর যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অগণতান্ত্রিক বলেছেন, তাদের প্রধান বিচারপতি হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।  আদালত অতি উৎসাহী হয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে মন্তব্য করে অধ্যাপক শহীদুজ্জামান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সবাই একমত। কিন্তু, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই সরকার কিংবা সংসদের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারকে শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না, একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে আমাদের যেতে হবে। ’৭২ সালের সংবিধানের ক্ষমতা কাঠামোটা প্রবলভাবে সৌরতান্ত্রিক ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি সত্যি সত্যি মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে চাই তাহলে বিদ্যমান সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামো বদলাতে হবে। সে জন্য বাংলাদেশের সকল নাগরিকেরই চিন্তার দিক থেকে এগিয়ে আসাটা কর্তব্য।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status